বাংলারজমিন
ঘাটাইলে একটি সেতুর জন্য ভোগান্তিতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
২৭ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন
ঘাটাইল উপজেলার বৃহত্তম রসুলপুর ও সন্ধানপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশাই নদীর উপর স্বাধীনতার ৫০ বছরের কাছা কাছি সময়েও নির্মিত হয়নি একটি ব্রিজ কিংবা সেতু। বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। ছোট্ট একটি ব্রিজের অভাবে পূর্ব পাড়ের রসুলপুর ইউনিয়ন, ধলাপাড়া ইউনিয়ন ও লক্ষীন্দর ইউনিয় এবং পশ্চিম পাড়ের সন্ধানপুর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ডিঙ্গি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয় এসব এলাকার ভাগ্যাহত মানুষদের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়দের সহায়তার প্রতিবছর বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাঁশ এনে, টাকা তুলে প্রায় দুইশত ফুট লম্বা সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা তুরুপের তাস হিসাবে এই সাঁকো দেখিয়ে ৪টি ইউনিয়নের মানুষের ভোট নিজেদের বাক্সে ভরে পাস করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ভুলে যান। ফলে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এখানে কোন ব্রিজ বা সেতু নির্মাণ হয়নি। বর্ষা এলে এক এলাকার মানুষের আরেক এলাকার মানুষের মুখটা দেখারও সৌভাগ্য হয় না। অথচ বর্তমানে পূর্ব অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদের মানুষের পারাপারে গুনতে হচ্ছে জনপ্রতি কুড়ি টাকা। রসুলপুর ইউপি কার্যালয় ও পেঁচারআটা হাট সংলগ্ন স্থানে বংশাই নদীতে ব্রিজের অভাবে সাঁকো দিয়ে এক বস্তা সার বা ধান পারাপার করতে কৃষককে গুনতে হয় কুড়ি টাকা। নদীর পাড় সংলগ্ন সাঁকোর পূর্ব পাশে রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এর পাশেই পেঁচারআটা বাজার ও রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া নদীর পূর্ব পাড়ে ধলাপাড়া কলেজ, এসইউপি গণ উচ্চ বিদ্যালয়, চন্দন বালিকা গণ উচ্চ বিদ্যালয় ও মাটিআটা দাখিল মাদ্রাসা সহ অসংখ্য হাটবাজার রয়েছে অত্র অঞ্চলটিতে। এসব প্রতিষ্ঠানের নদীর পশ্চিমপাড়ের শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সাঁকো। এ ছাড়া গর্ভবতী মহিলা ও বৃদ্ধরা সাঁকো পার হয়ে পূর্ব প্রান্তে না আসতে পারায় সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা ও সরকারি সকল সুযোগ থেকে তারা পুরোটাই বঞ্চিত বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এসব এলাকার হাজারো মানুষ। রসুলপুর ইউনিয়নের বাহাত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাজেরা বিবি বলেন, ছোট বেলায় আমার পারকি গ্রামে বিয়ে হয়েছে। বাবা মা বেঁচে থাকলে বছরে ২/৩ বার বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে। বর্তমানে বয়সের ভারে ভাই, বোন, ভাতিজারা নিতে আসলেও এখন আর শত ইচ্ছা থাকলেও সাঁকো পার হয়ে যেতে পারি না। মানুষ বলে সরকার দেশে অনেক উন্নতি করেছে। কই আমাদেরতো কোনো উন্নতি হয় না। এ ব্যাপারে রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. এমদাদুল হক বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে সেতু নির্মাণ এলাকার মানুষের অনেক দিনের দাবি। এখানে একটি সেতু হলে উক্ত এলাকাটি সাগরদিঘীর মতো শিল্পাঞ্চল হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, বংশাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এই এলাকায় সেতু নির্মাণ হবে।