শিক্ষাঙ্গন

ইউজিসির নিয়ম মানছে না বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়

পিয়াস সরকার

২৫ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

ইউজিসি’র কথা শুনছে না কেউ। আইন আছে আইনের জায়গায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে তাদের নিজের মতো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান।

বর্তমান সময়ে করোনার জন্য বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে অনলাইনে ক্লাসের জন্য নানা নিয়ম চালু করে ইউজিসি। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই তা মানছে না। শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও এসব পরীক্ষা নিয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার এই সেমিস্টার পদ্ধতিটিই অবৈধ। কারণ ইউজিসির নিয়ম অনুয়ায়ী ডুয়েল সেমিস্টার (প্রতি ৬ মাসে এক সেমিস্টার) পদ্ধতিতে পরিচালনা করার কথা। দেশে বর্তমানে ১০৬টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিভাগে ডুয়েল সেমিস্টার পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘প্রাইম সেমিস্টার’ (প্রতি ৪ মাসে এক সেমিস্টার) পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। সে হিসেবে বছরে তিন সেমিস্টার পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ‘স্প্রিং সেমিস্টার’, মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ‘সামার সেমিস্টার’ এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘ফল সেমিস্টার’ ধরা হয়। তবে ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী চলতি বছর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সামার সেমিস্টার’ শুরু হয়েছে গত জুলাইয়ের এক তারিখ থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ভিসি, প্রো-ভিসি ও রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ইউজিসি’র সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিসি নেই ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রো-ভিসি নেই ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর রেজিস্ট্রার নেই ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। আবার বারবার বলার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা কার্যক্রম চলানো ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত জমিতে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অর্থ্যাৎ পূর্ণাঙ্গ আইন মেনে চলছে মাত্র ১৯.১১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। এর বাইরে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত স্থানে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিয়ম থাকলেও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি কোন বোর্ড অব ট্রাস্টির সভা। সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়নি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর অর্থ কমিটির সভা করেনি ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আয় ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তোয়াক্কা করছে না ইউজিসিকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে আছেন। এসব শিক্ষকের বেশির ভাগ পাঁচ বছর শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করলেও দেশে আর ফেরেন না।

২০১৮ সালে ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। সেখানে মোট শিক্ষক ১৪ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে কর্মরত ছিলেন ১১ হাজার ১২৩ জন। শিক্ষা ছুটিতে দুই হাজার ১৪৪ জন, প্রেষণ বা লিয়েনে ৭০ জন, বিনা বেতনে ছুটিতে ৭০ জন, অননুমোদিত ছুটিতে ২৫ জন, খ-কালীন, চুক্তিভিত্তিক এবং অন্যান্য ছুটিতে রয়েছেন এক হাজার ৯৭ জন।

১৭ই সেপ্টেম্বর ইউজিসির কথা অমান্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আবদুস সোবহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ জন শিক্ষক ৩০০ পাতার এক অভিযোগপত্রে ভিসির বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ এনেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং সেই কমিটি এ ব্যাপারে গণশুনানিতে এই দু’জনকে হাজির হতে বলে। ভিসি তাতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং শেষ পর্যন্ত তিনি যোগ দেননি। ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমাদের ক্ষমতা সীমিত। আমাদের যতোটুকু কাজ আমরা করি। আমাদের কাজ তদন্ত করা, তদন্ত রিপোর্ট দেয়া। আইন না মানলে চাপ দেয়া। অনেক সময় আমাদের কাছে অভিযোগ আসে কিন্তু অভিযোগকারীরা দালিলিক প্রমাণ দিতে পরেন না। সেক্ষেত্রেও আমাদের অনেক সময় কিছু করার থাকে না।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ আইন অমান্যকারীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ ষোঘণা দেন। তিনি বলেন, অনিয়ম করলে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status