অনলাইন

প্রথম দেখায় সৌমিত্রকে যা বলেছিলেন সত্যজিৎ…

২৪ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র, এ যেন এক অলৌকিক মেলবন্ধন ! ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেটা যেন ইতিহাসের শুরু। এরপর ভুবনখ্যাত এই নির্মাতার ৩৪টি সিনেমার ভেতর ১৪টিতেই পাওয়া গেছে তাকে। এমনকি বিখ্যাত গোয়েন্দা ফেলুদা চরিত্রে হাজির হয়েছেন সৌমিত্র। তার অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র দেখে ধারণা করা হয় যে, তাকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্যগুলো লিখেছিলেন সত্যজিৎ। তাই বলা হয়ে থাকে, চলচ্চিত্রের মানিক দার (সত্যজিৎ রায়ের ডাকনাম) মেজাজ-মর্জি পড়তে পারতেন সৌমিত্র।
কিন্তু সৌমিত্রকে প্রথম দেখাতেই ডেকে নেননি সত্যজিৎ। তখন সবে মুক্তি পেয়েছে 'পথের পাঁচালী'।  একটি অনুষ্ঠানে নিজের ছবি নিয়ে কথা বলছেন সত্যজিৎ। সে সময় বাংলা ছবির গতে বাঁধা ছককে ভেঙে দিয়েছিল 'পথের পাঁচালী'। সিনেমা সমালোচকরা বলেছিলেন এ ছবি বক্স অফিসের জন্য নয়। তাঁর ব্যাখ্যায় সত্যজিৎ বলেছিলেন, 'আমার ছবি অন্য ধারার। প্রচলিত বক্স অফিস ছবির ধারণা ভাঙা এক ছবি। তবে অবশ্যই মানুষের জন্য। কারণ ছবি বানিয়ে শুধু নিজের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখে আর কি মজা।" এই সময় দর্শকের আসনে বসেছিলেন সৌমিত্র। সে সময় সৌমিত্র থিয়েটার পাগল, বই পাগল। সাহিত্যের ছাত্র, চাকরি করছেন রেডিওতে। সারাদিন চুটিয়ে নাটক-সাহিত্য নিয়ে মেতে থাকা। তারপর কফি হাউসে বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে আড্ডা।
প্রথম দিন 'পথের পাঁচালী' দেখা হয়নি সৌমিত্রর। তিনি গিয়েছিলেন দ্বিতীয় দিন দেখতে। তারপর যে কতবার 'পথের পাঁচালী' দেখে ফেলেছিলেন তার হিসেব নেই। মনে মনে সত্যজিৎকে বসিয়ে ফেলেছেন আদর্শের আসনে। এর পর একদিন সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটের নিত্যানন্দ দত্ত আসেন সৌমিত্রর কাছে। বলেন, "সত্যজিৎ রায় অপু চরিত্রের জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন। তুমি একবার চলো।" যেমনি বলা তেমনি যাওয়া। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের এ সুযোগ হাতছাড়া করেননি সৌমত্র। সিনেমা বা অপুর চরিত্র নয়, তখন তাঁর মাথায় শুধুই সত্যজিৎ।
মানিক তখন লেক অ্যাভিনিউতে থাকেন। নিজের ঘরে সেই পাজামা পাঞ্জাবি পরে বসে আছেন। সৌমিত্রকে দেখেই বললেন, 'এ হে আপনি বড লম্বা হয়ে গেলেন।" একটা মানুষ ছবিতে কতটা ডুবে থাকলে এভাবে কাউকে প্রথম দেখাতেই চরিত্র ভেবে কথা বলতে পারেন, সেদিন সত্যজিৎ বুঝেছিলেন। এরপর নানা কথায় সত্যজিৎ জেনে নিয়েছিলেন সৌমিত্রর সিনেমা ও অভিনয়ের ভালোবাসা কতটা ! তবে সেদিন ফের জানতে চেয়েছিলেন কতটা লম্বা সৌমিত্র। পাঁচ ফুট সাড়ে ১১ ইঞ্চির ছেলেটা সেদিন মনে মনে ভেবেছিল, সিনেমা না হোক মানুষটাকে দেখা তো হল। সৌমিত্রকে মাঝে মধ্যে আসতে বলেছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু সেভাবে কখনই বিরক্ত করতে যেতেন না সৌমিত্র।
এর পর অপরাজিত হল। সে ছবিতে সৌমিত্রকে নিলেন না সত্যজিৎ। স্মরণ ঘোষালকে নিয়েছিলেন। এর পর ফের কিছুদিন পর খবর আসে সত্যজিৎ 'অপুর সংসার' বানাবেন। আবার নতুন মুখ খুঁজছেন। এবার নিজেই সৌমিত্রকে ডেকে পাঠান সত্যজিৎ। আবার সিনেমা প্রেম জানতে চান। এবং বলেন তাঁর ছবির শ্যুটিং চলছে। সেখানে আসতে। তখন 'জলসাঘর' ও পরশ পাথর'-এর শ্যুটিং চলছে। সৌমিত্র যান সেখানে। শ্যুটিংয়ের মাঝে কথা বলছেন সৌমিত্রর সঙ্গে। নতুন বই পড়তে বলছেন। কিন্তু তাঁকে অপুর চরিত্রে আদৌ নেওয়া হবে কিনা, সে সব কিছুই বলছেন না। এভাবে প্রায় দিন ১৫র বেশি কেটে যায়। একদিন বিকেলে রেডিওতে চাকরি করতে যাবেন সৌমিত্র। তিনি তখন ছিলেন 'জলসাঘর'-এর শ্যুটিং ফ্লোরে। সত্যজিৎ থেকে অনুমতি নিতে গেছেন। হঠাৎ সত্যজিৎ বললেন, 'আসুন আপনাকে ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।' আলাপ করাতে গিয়ে মানিক শুরুটাই করেছিলেন, ' উনি সৌমিত্র। অপুর সংসার-এর অপু।" সেই প্রথম সৌমিত্র জানতে পেরেছিলেন তাঁকে পছন্দ করেছেন সত্যজিৎ। এর পর নিজের পুরো জগতটাই বদলে গেল সোমিত্রর। তিনি অপু থেকে সত্যজিতের ফেলুদা। অপুর সংসার-এ কাজ করে নিজেকে অন্যভাবে চিনেছিলেন সৌমিত্র।


সূত্র- নিউজ ১৮
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status