শিক্ষাঙ্গন

মাস্টারপ্ল্যানের বিস্তারিত জানালেন ঢাবি প্রো-ভিসি মাকসুদ কামাল

তারিক চয়ন

২৪ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

আগামী বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) তার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে। কিন্তু একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক অবনতি হচ্ছে যা এখন সচেতন মহলের আলোচনার খোরাক। এমন এক সময়ে ঢাবি ক্যাম্পাসকে নান্দনিক ও যুগোপযোগী করে তুলতে এবং একাডেমিক বিষয়াদির মানোন্নয়নে প্রথমবারের মতো একটি 'মাস্টারপ্ল্যান' প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চার ধাপে ৩০ বছরের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আবাসন ও ক্লাসরুম সংকট থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথম পর্যায়ে এর বাস্তবায়নে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

১৭ সেপ্টেম্বর ঢাবির জনসংযোগ দফতর থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই মাস্টার প্ল্যানে পরিকল্পিত এবং বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক ও নান্দনিক ক্যাম্পাস তৈরির সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও প্রস্তাবনা রয়েছে। উক্ত বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে গুরুত্বসহকারে সংবাদ প্রকাশিত হলেও মাস্টারপ্ল্যান বলতে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে রয়েছে কৌতুহল। এসব নিয়ে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল খোলামেলা আলোচনা করেন মানবজমিনের সাথে, যিনি বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি জানান, শুধু ভৌত অবকাঠামোই নয় একাডেমিক বিষয়াদির উপরও জোর দেয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যানে। কেননা দুটি বিষয় একটি অন্যটির পরিপূরক। শিক্ষার্থীদের মানসিক উৎকর্ষ সাধন এবং ঢাবি ক্যাম্পাসকে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব থেকে আসা দর্শনার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবনটিকে বিশ্বের অন্যান্য নামিদামি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

গবেষণা ক্ষেত্রে ঢাবি পিছিয়ে আছে এমন অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে আলোকপাত করলে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, আধুনিক গবেষণার জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতি বা আনুষাঙ্গিক অন্যান্য যেসব জিনিসপত্র প্রয়োজন অনেক বিভাগেই সেসবের ঘাটতি রয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানে এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে নজর দেয়া হয়েছে। একেক বিভাগের প্রয়োজন একেক রকম। তাই প্রত্যেক বিভাগকে আলাদাভাবে নিজ বিভাগের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের প্রয়োজন জানাতে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের কাছ থেকেও আমরা প্রস্তাবনা আহবান করেছি। এছাড়াও সংগীত, নৃত্যকলা সহ এমন নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে যেগুলো গতানুগতিক ক্লাশরুম বা ভবনের সাথে যায় না। আবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনেক ক্লাশই থাকে ব্যবিহারিক। এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

বর্তমানে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের থাকার জন্য আরো ১৩ লক্ষ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে নতুন হল ভবন নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ হল ভবন ভেংগে ফেলা হবে। কিন্তু দিন দিন যেভাবে বিভিন্ন বিভাগ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তাতেতো দিন দিন জায়গার চাহিদাও বেড়ে যাবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা মনে করি ঢাবিতে বর্তমানে যে সংখ্যক (প্রায় ৪০ হাজার) শিক্ষার্থী রয়েছে তা যথেষ্ট। আমরা এই সংখ্যাটাই বহাল রাখবো ধরে পরিকল্পনা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি অন্যতম সমস্যার নাম এখন বহিরাগত যান চলাচল এবং তা হতে উদ্ভূত শব্দদূষণ। এ বিষয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা হলো বহিরাগত যান চলাচলে একটা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা। বাইরের যানবাহনগুলোর জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে আলাদা চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবনায় রয়েছে। এছাড়া সাইকেল চলাচল এবং হাঁটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। ক্যাম্পাসে অনেকগুলো 'ডেড এন্ড' রয়েছে। সেগুলোকে বন্ধ করা হবে অথবা সম্ভব হলে অন্য রাস্তার সাথে জুড়ে দেয়া হবে।

ক্যাম্পাসের 'গ্রিন স্পেস' বা সবুজায়নের জন্য শতকরা ৭৫ ভাগ জায়গা বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল। কিন্তু ক্যাম্পাসে সেরকম জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে কিনা বা বাস্তবে সেটি করা সম্ভবপর কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠা বিভিন্ন অবকাঠামোকে পরকল্পিতভাবে গড়ে তুলবো। এছাড়া বিশাল এলাকা দখল করে গড়ে তোলা পুরনো ভবন ভেংগে নতুন করে পরকল্পিতভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে অনেক জায়গা খালি হয়ে যাবে। সুতরাং এটি বাস্তবায়ন কোন সমস্যা হবে বলে মনে করিনা।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের আধুনিকায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। এখানে নিত্যনৈমিত্তিক টেস্ট গুলোর ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেসবের জন্য আর বাইরে যাওয়া লাগবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেডিক্যাল সেণ্টার ভবনের আয়তন বাড়ানো হবে।

তাছাড়া শুধু মেয়েদের জন্য পৃথক খেলার মাঠ ও জিমনেসিয়াম তৈরি, আধুনিক প্রেস নির্মাণ, লাইব্রেরির জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ ও ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, ডাকসু ভবনকে বহুতল করা ও সেখানে যাদুঘর স্থাপন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংসহ জলাধার সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করাসহ পরিবেশ সংরক্ষণ, কার্জন হল সংস্কার করে সংরক্ষণ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পুকুর সংরক্ষণ করে চারপাশে বসার জায়গা তৈরি, ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের পরিকল্পনা এই মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে বলে জানান ঢাবির এই উপ-উপাচার্য।

'মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে অপরিকল্পিতভাবে অন্য কোন ভবন গড়ে উঠতে পারবে না। প্রতিবেশ ও পরিবেশ বজায় রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে', যোগ করেন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status