বাংলারজমিন

পাহাড় কেটেই পরিবেশ ধ্বংসের যাত্রা বান্দরবানের ইটভাটাগুলোর

নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে

২৪ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ৭:৩০ পূর্বাহ্ন

পাহাড়ে বর্ষায় সবুজ প্রকৃতি সাজতে শুরু হলেও সেই পাহাড়ের বুকে আঘাত শুরু করেছে ইটভাটার মালিকরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বান্দরবানে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলার কার্যক্রম চলছে। জেলার সাতটি উপজেলায় অন্তত ৭০টি ইটভাটায় দেদারছে কাটা হচ্ছে সবুজ পাহাড় ও ফসলি জমি। সরজমিন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নেই শুধুমাত্র তিনটি ওয়ার্ডে গড়ে উঠেছে ৩০টি ইটভাটা। বেশির ভাগ স্কুলের পাশে, জনবসতী গ্রাম, খালেরপাড় এবং সড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে।
বর্ষার শুরু থেকে এসব ইটভাটাগুলোতে এক্সেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে মৌসুমের জন্য মাটি মজুত করেছে। এখনো চলছে পাহাড় কাটা তৎপরতা। আগামী মাস থেকে লামা উপজেলার ফাইতং এলাকায় যন্ত্রের গর্জন ও ধুলাবালুতে বর্ষার সবুজ প্রকৃতি হারিয়ে যাবে এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, কোনো ধরনের বৈধতা ছাড়াই ব্যাঙের ছাতার মতো ইটভাটা গড়ে উঠেছে। আর এসব ইট ভাটার জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড়-ফসলি জমি, বনের কাঠ। কয়েকদিন পর ইটভাটার ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে আগামীতে ফাইতং এলাকাটি মানুষের বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বে এমনটি মনে করেন স্থানীয়রা। ফাইতং ইউনিয়নের মে অংপাড়ার বাসিন্দা উসিংমং মারমা ও কাইনতিং মারমা বলেছেন, শুধু এ বছর নয়, কয়েক বছর ধরে কাটতে কাটতে তাদের পাড়ার পাহাড়টি এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। তারা আরো জানান- যেভাবে দিন-রাত অবিরাম পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে এ বছর আর, এ পাহাড়ের অস্তিত্ব্ব থাকবে না। পাহাড়টি পাড়াবাসীকে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতো। ইটভাটার মালিকেরা প্রভাবশালী। পাহাড় কাটতে বাধা দিলে তারা মামলা-হামলার হুমকি দেন। শুধু ফাইতং নয়, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, সোনাইছড়ি, কাগজিখোলা ও লামা-আলীকদম, রুমা, থানচি উপজেলায় বর্ষা মৌসুম এলেই ইটভাটার জন্য পাহাড় কাটা শুরু হয়। গত বছর বর্ষা মৌসুমেও পাহাড় কাটা হয়েছে। এরপর বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে পাহাড় কাটা। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন- ইট পোড়ানো মৌসুম এলে ঘুমধুমের কয়েকটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ে। অবৈধ ইটভাটাগুলোতে পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন তৎপর হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।  
এদিকে পাহাড় কাটার অভিযোগে গত মাসে লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও লামা উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয়টি ইটভাটাকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজা রশীদ। তবে এসব অভিযানে সন্তুষ্ট নন সচেতন নাগরিকরা। তাদের মতে, পাহাড় ধস এবং পরিবেশ রক্ষায় ফাইতং থেকে ইটভাটার কার্যক্রম কমাতে হবে। জানতে চাইলে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেছেন- অবৈধ পাহাড় কর্তন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬খ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে ফাইতং এলাকায় কিছুদিন পূর্বে অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে ছয় ইটভাটার মালিককে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status