বাংলারজমিন

যাদুকাটা নদীর তীর কেটে চলছে বালু উত্তোলন

এমএ রাজ্জাক, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে

২৪ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ৭:২৯ পূর্বাহ্ন

 সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ বালুখেকো চক্র। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় নদীর পাড়ের গ্রামবাসী তাদের নাম-পরিচয় বলতেও সাহস পাচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে দু-একটি নৌকা আটক করলেও অধরা থেকে যাচ্ছে  বালুখেকো মূল হোতারা। মূল হুতাদের দাঁড়িয়ে থেকে নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন করতে হয় না। নৌকার মাঝি ও শ্রমিকরাই তাদের হয়ে বালু উত্তোলন করে নৌকায় বালু ভর্তি করে থাকে। মূল হোতাদের কাজ হলো পুলিশ প্রশাসন নৌকা ও মাঝিদের আটক করলে সে বিষয়টি তদারকি করা। ফলে নদীতে মাঝেমধ্যে দু’একদিন বালু-পাথর উত্তোল বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তারা আবারো অদৃশ্যের ইশারায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।
গত সোমবার সারাদিন যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী এলাকায় তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে নদীর বালি পাথর উত্তোলন ও পরিহবন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার ১২ ঘণ্টা না যেতে না যেতেই রাতের আঁধারে নদীর কয়েকটি স্থানে আবার তীর কেটে বালু উত্তোলন শুরু করে চক্রটি। পরে সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন রাতেই যাদুকাটা নদীতে অভিযান চালিয়ে একটি ছোট বালুভর্তি স্টিল বডি নৌকাসহ একজন মাঝিকে আটক করে। স্থানীয় পুলিশ ও পাতি নেতাদের ম্যানেজ করেই রাতের আঁধারে নদীতে চক্রটি বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে জানা যায়,  স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতে ও দিনে নদীর তীর কেটে পরিবেশ ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলার ঘাঘটিয়া, ঘাঘরা, লাউড়ের গড়, বিন্নাকুলী, মুদেরগাঁও, মিয়ারচর ও সোহালা গ্রামের কতিপয় সংজ্ঞবদ্ধ একটি বালুখেকো চক্র। এই চক্রটি নদীর তীর কেটে ও কোয়ারীর নাম করে জমি থেকে বালু ও পাথর উত্তোল করে দেদারছে বিক্রি করছে। ফলে, যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ফাজিলপুর থেকে লাউড়েরগড় এলাকা পর্যন্ত ছড়ারপাড়, ডালারপাড়, গাঘটিয়ার বড়টেক বিন্নাকুলি, কাইলকাপুর. মোদেরগাঁও, গরকাটি, গাঘড়া, পাঠনপাড়া, কুনাটছড়া ও সোহালা গ্রামসহ নদীর পূর্ব পাড়ের মিয়ারছড়, সত্যিস, আমড়িয়া, সিরাজপুর, বাগগাঁও মনবেঘসহ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজারো একর ফসলি জমি। ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে লাউড়ের গড়ের একটি বিশাল গোচারণ ভূমি, কবরস্থান, নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অদ্বৈত প্রভুর আশ্রম, আনোয়ারপুর বাজার, বিন্নাকুলি বাজার, ফাজিলপুর বাজার।
নদীর পাড়ের গ্রামবাসীরা জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে শতাধিক স্টিলবডি নৌকা দিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ের শিমুল বাগান, ভাঙার খাল, বড়টেক পাক্কা রাস্তার মাথা, আদর্শ গ্রাম সরকারি পুকুরপাড়, জালর টেক, শিয়ালের টেক, বড়ই গ্রাছের পাড়সহ কয়েকটি স্পট দিয়ে নদীর তীরকেটে বালু-পাথর উত্তোলন করছে চক্রটি। আর এসব বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের তীর কাটার মামলার আসামি নুরুজ আলী, খাইরুল আমিন, আলিম উদ্দিন, রানু মিয়া, সামছু মিয়া, তার সহযোগী সাইফু উদ্দিন, দীন ইসলাম, তাজুল ইসলাম ওরফে মড়ল, সামসু আলম, তার সহোদর মুসা আলম, নুর জামাল, জাহাঙ্গীর, আব্দুল্লাহ, তার সহোদর আব্দুল হান্নান, আল আমিন, রাহাজ উদ্দিন, ইরফান, আলমগীর, সাহাব উদ্দিন, হবিবুর। অপরদিকে নদীর পূর্ব পাড়ের লাউড়েরগড় খেয়া ঘাটের দক্ষিণে ডালার পার, জামালের ছড়, লামাশ্রম ও বিন্নাকুলী এলাকায় কোয়ারি করে বালু পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করছে নয়ন মিয়া (৪৫), সুমন মিয়া (৩৫), জামাল মিয়া (৪৮)সহ বেশ কয়েকজন।
তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, আমরা গত সোমবার রাতেও একটি নৌকা আটক করেছি, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা অভিযানে যাই। কিন্তু অভিযানে গিয়ে ঘটনাস্থলে তাদের পাই না। কীভাবে যে তারা খবর পায় তা আমরা বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে আমরা আরো কঠোর হবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status