বাংলারজমিন
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তেলেসমাতি
একই কাজের দুই টেন্ডার দ্বিগুণ বিল উত্তোলন
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৪ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ৭:২৯ পূর্বাহ্ন
কিশোরগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপ কাজ বাস্তবায়নে তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছে। একাধিক জরিপ কাজের প্রতিটির একসঙ্গে দু’টি করে টেন্ডারের মাধ্যমে দ্বিগুণ বিল উত্তোলন করে নয়/ছয় করা হয়েছে। জরিপ কাজের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের জন্য কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী এমন তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন তাড়াইল উপজেলায় সাইদুল্লিবন্নী ধলাই নদী খননে জরিপ কাজের জন্য একই সঙ্গে হুবহু দু’টি টেন্ডার (কিশ-এসডব্লিউ-৩৩/২০১৯-২০ এবং কিশ-এসডব্লিউ-৩৪/২০১৯-২০) করা হয়। একইভাবে কোবাদিয়া খাল, সুতিয়ার খাল, ফুলেশ্বরী খাল, ধলা চায়না খাল, বেলংকা খাল, শিমুকহাটি খাল ও বৈরাগীর খাল খননে জরিপ কাজের জন্য একই সঙ্গে হুবহু দু’টি টেন্ডার (কিশ-এসডব্লিউ-৩৫/২০১৯-২০ এবং কিশ-এসডব্লিউ-৩৬/২০১৯-২০) করা হয়। এর মধ্যে সাইদুল্লিবন্নী ধলাই নদী খননে জরিপ কাজের জন্য প্রতিটি টেন্ডারে এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা করে দু’টি টেন্ডারে তিন লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং কোবাদিয়া খাল, সুতিয়ার খাল, ফুলেশ্বরী খাল, ধলা চায়না খাল, বেলংকা খাল, শিমুকহাটি খাল ও বৈরাগীর খাল খননে জরিপ কাজের জন্য প্রতিটি টেন্ডারে এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা করে দু’টি টেন্ডারে তিন লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়। মাঠ পর্যায়ে দু’টির জরিপ কাজই সম্পন্ন করে সার্ভে টেকনোলজি অব বাংলাদেশ (এসটিবিএল)। বিধি অনুযায়ী এসটিবিএলকে কাজের বিল প্রদান করা হলেও নয়/ছয়ের জন্য করা ডুপ্লিকেট দু’টি টেন্ডারের বিল নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীর পছন্দের এক ঠিকাদারের নামে করা হয়। এই দু’টি ডুপ্লিকেট টেন্ডারের বিলে কাজ দু’টির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা করিমগঞ্জ পওর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ পাভেল স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী তার পছন্দের কর্মকর্তা ভৈরব পানি উন্নয়ন শাখা (২) এর উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাজিবের স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন করান। একটি কাজের জন্য একই রকমের দু’টি টেন্ডারের মাধ্যমে দ্বিগুণ বিল উত্তোলনের এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কেবল আত্মসাতের জন্য ডুপ্লিকেট টেন্ডার করে নির্বাহী প্রকৌশলী দু’টি কাজ থেকে কোনো ধরনের কাজ করা ছাড়াই মোট তিন লাখ ৮৪ হাজার টাকা ভুয়া বিল উত্তোলন করেছেন। কেবল তাই নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের (এনডিআর) ৩৭টি কাজের বিপরীতে প্রতিটিতে দুই লাখ টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ রেখে মোট ৬৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা নয়/ছয় করেছেন।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী মানবজমিনকে বলেন, কোনো টেন্ডার ডুপ্লিকেট করা হয়নি। একটি কাজের কয়েকটি অংশ থাকে, সেসব সম্পন্ন করার জন্য পৃথক টেন্ডার করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কাজ করা হয়েছে, এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী মানবজমিনকে বলেন, কোনো টেন্ডার ডুপ্লিকেট করা হয়নি। একটি কাজের কয়েকটি অংশ থাকে, সেসব সম্পন্ন করার জন্য পৃথক টেন্ডার করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কাজ করা হয়েছে, এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।