প্রথম পাতা

দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট

নির্মম নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

নির্মম নির্যাতনেই মারা গেছে রায়হান উদ্দিন। অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু ঘটেছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও। গতকাল ফরেনসিক বিভাগের তরফ থেকে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের কাছে এ রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়। এর আগে প্রথম দফার তদন্ত প্রতিবেদনও পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেছিল ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- প্রথম দফার ময়নাতদন্ত এবং দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কোনো অমিল নেই। বরং প্রথম দফায় মৃত্যুর যেসব কারণ চিকিৎসকরা উল্লেখ করেছিলেন দ্বিতীয় দফার প্রতিবেদনেও একই তথ্য উঠে এসেছে। গত ১১ই অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয় নগরীর নেহারীপাড়ার যুবক রায়হান উদ্দিনকে। ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর ওইদিন সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর রায়হানের মরদেহ পাঠিয়ে দেয়া হয় মর্গে। সেখানেই প্রথমে রায়হানের লাশ দেখেন রায়হানের সৎ পিতা মো. হাবিবউল্লাহ ও ভাই আব্দুর রহমান। মর্গে থাকা লাশে নির্যাতনের চিহ্ন দেখেই তারা দাবি করেন রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের এ দাবি মর্গে তোলা ছবিতে লাশের শরীরে অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি স্পষ্ট ধরা পড়ে। এরপর থেকেই রায়হান হত্যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। ঘটনার দিনই মর্গে পুলিশের পক্ষ থেকে রায়হানের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়। এরপর চিকিৎসকরা তার ময়নাতদন্ত করেন। ওই ময়নাতদন্তেই ধরা পড়েছিলো রায়হানের মরদেহে ১১৩টি আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। এবং অতিরিক্ত আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়। ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররা জানান- প্রথম দফা রিপোর্টে রায়হানের শরীরে ১১৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। লাঠির আঘাতের কারণে চামড়া ছিলে যাওয়ার ১৪টি জখম ছিলো। তার দু’টি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলাসহ পুরো শরীরে শুধু লাঠির আঘাত রয়েছে ১১১টি। নির্যাতনের সময় রায়হানের পাকস্থলীও খালি ছিল। ডাক্তাররা জানিয়েছেন- একের পর এক লাঠির আঘাতের কারণেই রায়হানের শরীরের পা ও হাত থেঁতলে যায়। পা ও হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়। রক্ত জমাট বেঁধে যায়। প্রতিটি আঘাত ছিল ?খুবই গুরুতর। অতিরিক্ত আঘাতের কারণে রায়হানের হৃদযন্ত্র রক্ত পায়নি। সেজন্য তার মৃত্যু হয়। লাঠির আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারায়। প্রথম দফার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ১৫ই অক্টোবর পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে একই বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল। পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিলেটের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে গত ১৫ই অক্টোবর কবর থেকে উত্তোলন করা হয় রায়হানের মরদেহ। এরপর দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পিবিআই রায়হানের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন। পরে লাশ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যর একটি মেডিকেল টিম রায়হানের মরদেহের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন। এই প্রতিবেদন গতকাল পিবিআইয়ের কাছে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন- প্রথম দফার ময়নাতদন্ত এবং দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্ত রিপোর্টে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আগের যে রকম ছিল সে রকমই রিপোর্ট এসেছে। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও জানা গেছে- অতিরিক্ত আঘাতের কারণে মারা গেছে রায়হান। তার শরীরের পায়ে ও হাতে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। তার পাকস্থলী শূন্য ছিল। তিনি বলেন- এই প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status