শেষের পাতা

করোনা থেকে মুক্তি লাভ ও বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রার্থনা, আজ মহাসপ্তমী

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

করোনা মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে আজ থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ মহাসপ্তমী। প্রত্যুষে নবপত্রিকা প্রবেশ ও ঢাক-ঢোল কাঁসর বাজিয়ে দেবী দুর্গার তিথিবিহিত পূজা শেষে সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচার (ষোল উপাদান) দিয়ে পূজা অর্চনা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য ও চন্দন দিয়ে পূজা করা হবে। পূজা অর্চনা শেষে  কৃপালাভের আশায় দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। এ ছাড়া করোনা মহামারি থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশা ও বিশ্ব শান্তি কামনায় আজ সারা দেশের সকল পূজামণ্ডপে দুপুর ১২টা ১ মিনিটে বিশেষ প্রার্থনা হবে বলে জানান বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা। আগামীকাল শনিবার হবে মহাষ্টমী। এরপর  রোববার মহানবমী ও সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
শাস্ত্রীয় পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। তবে, মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। শরৎকালের দুর্গাপূজায় বোধনের বিধান রয়েছে। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। পুরাণ অনুসারে, রাক্ষসরাজ রাবণকে বধের উদ্দেশ্যে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজা করেন। অকালে দেবীকে তিনি বোধন করেন বলে একে অকালবোধনও বলা হয়।
এদিকে গতকাল সকালে কল্পারম্ভ এবং সন্ধ্যায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ষষ্ঠী পূজা। এদিন বিল্ল বৃক্ষ অর্থাৎ বেলগাছতলে দেবীর আবাহন, সংকল্প সহযোগে ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর পূজা অর্চনা আমন্ত্রণ ও সন্ধ্যায় অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে ঢাকের বোল, চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খ আর উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, এবার উৎসব সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ। এ কারণে এবারের দুর্গোৎসব ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত হচ্ছে। এবারের পূজায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে না। হবে না কুমারী পূজা। যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি আসতে পারবেন না। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজামণ্ডপ বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রেসিডেন্ট বলেন, দুর্গাপূজার সঙ্গে মিশে আছে চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে নিগূঢ় সম্পর্ক। সে সম্পর্ক শরতের শুভ্রতা আর নীলিমাকে ধারণ করে হৃদয়ে এনে দেয় পুণ্যের শ্বেতশুভ্র আবহ। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রেসিডেন্ট বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সমপ্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরো সুসংহত হোক-এ কামনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সমপ্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’-এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশে আমরা সব ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে পালন করে থাকি। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের দেয়া তথ্য অনুসারে, এ বছর সারা দেশে ৩০ হাজার ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। গতবছরের তুলনায় এবার ১ হাজার ১শ’ ৭৫টি মণ্ডপে পূজা কম হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩৭টি। আর ঢাকা জেলায় পূজা হচ্ছে ৭৪০টি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status