বাংলারজমিন

রনিকে নিয়ে কমলগঞ্জে আতঙ্ক

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে

২৩ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন

রনি আহমদ। বয়স ২২ ছুঁই ছুঁই। পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক রনি কাঁপিয়ে তুলেছে কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণাঞ্চল। স্থানীয় নিরীহ মানুষজন তার হাতে যেন জিম্মি। দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়ে কেউই তার হাতে নিরাপদ নয়। কখনো স্টেপিং, কখনো ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সে আঘাত করে অনেককেই করেছে রক্তাক্ত। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও কেউ তার বিরুদ্ধে আইনি আশ্রয় নিতে সাহস দেখাননি। কেউ সাহস করে থানায় অভিযোগ করলেও চাপে পড়ে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাট করতে বাধ্য হয়েছেন। এইভাবে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে ওঠে রনি। গুঞ্জন রয়েছে বেপরোয়া হয়ে ওঠা রনির এক নিকটআত্মীয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় নেতা হওয়ায় তার অপরাধমূলক এসব ঘটনা নজরে আসেনি প্রশাসনের। তবে গত ২রা অক্টোবর এক স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর সম্ভ্রম লুটের চেষ্টার পর তার নানা অপকর্মের ঘটনা প্রকাশ পেতে থাকে।
রনির মূল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সে বেড়ে উঠেছে ঢাকায়। গুঞ্জন রয়েছে ঢাকায় টোকাই ব্যবসায় জড়িয়ে সেখানে নানা অপরাধে সে জড়িয়ে পড়ে। এক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাড়া খেয়ে রনি চলে আসে নানা বাড়ি কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামে। তার বাবা বিল্লাল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে নিরুদ্দেশ রয়েছেন। তার  মা জর্ডান প্রবাসী হওয়ায় নানা বাড়ি উত্তরভাগ (নৈনারপাড় বাজার এলাকায়) তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। স্থানীয়রা জানান, পেশায় সিএনজিচালক হওয়ায় কমলগঞ্জ সড়কে রনি ভাড়ায় চালায় গ্যাসচালিত সিএনজি অটোরিকশা। মাস দুই এক পূর্বে সিএনজি গাড়ি দিয়ে স্থানীয় সিএনজি স্ট্যান্ডের প্রভাবশালী এক নেতার মেয়েকে তুলে নেয়ার অভিযোগে সে গণপিটুনির শিকার হয়। এ ছাড়া জুয়া খেলাসহ মাদক নিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা কথা বাতাসে উড়লেও মুখ খুলে কেউ কথা বলার সাহস দেখাননি। তবে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে রাশেদ নামে এক ড্রাইভার ও আমজাদ নামের একজনকে স্টেপিং করাসহ তার বেশক’টি ঘটনার কথা জানালেন স্থানীয়রা। তার হাতে কিশোর থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত অসংখ্যজন চড়-থাপ্পড় খেয়েছেন। কেউ তার এহেন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় রাতে বাড়ি ফেরার পথে হয় লাঞ্ছিত না হয় নির্যাতিত কিংবা রক্তাক্ত হয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার এক মামার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে। তবে সে কথা মানতে রাজি নন রনির মামা আদমপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, এগুলো সবই অপপ্রচার। রনির আরেক মামা দেলোয়ার হোসেন বলেন, রনি একটু রাগী তবে বেয়াদব নয়। মারধর, শ্রমিক নেতার মেয়েকে তুলে নেয়া এবং কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দেলোয়ার বলেন, এক হাতে কখনো তালি বাজে না। এবার বেপরোয়া যুবক রনির বিরুদ্ধে এক স্কুল পড়ুয়া কিশোরীর ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত ২রা অক্টোবর রাত ৩টার দিকে উত্তরভাগ গ্রামের মাসুক মিয়ার বসতঘরের বাঁশের বেড়া ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে রনি। এ সময় কিশোরীর চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠলে রনি পালানোর সময় তার হাতে কাঁচি দিয়ে আঘাত করে কিশোরী। পরে তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা রনিকে আটক করেন। খবর পেয়ে রাতেই ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদ্বয় উপযুক্ত বিচারের আশ্বাসে চিকিৎসার জন্য রনিকে তার বড় ভাই জসিমের জিম্মায় দেয়া হয়। পরে এ ঘটনায় ৪ঠা অক্টোবর হামলার অভিযোগ এনে মাসুক মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন রনির মামা দেলোয়ার হোসেন। এদিকে রনির নানা আছকর মিয়া বলেন, রনির মাথায় আঘাত করলে সেই আঘাত তার বাম হাতে পড়ে কেটে অঙ্গহানি হয়। মাথায় আঘাত ফেরালে হাতের নিচের অংশ কাটার কথা সেখানে উপরের অংশ কাটলো কি করে? এমন প্রশ্নের জবাব মেলেনি মামলার বাদী ও রনির নানার কাছে। আলাপকালে ঘটনার বর্ণনা দেয় স্কুল পড়ুয়া কিশোরী। এ সময় ওই কিশোরী কান্নায় বাববার ভেঙে পড়ে। কিশোরীর বাবা মাসুক মিয়া বলেন, এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ অভিযোগটি আমলে না নিয়ে প্রতিপক্ষের অভিযোগ নথিভুক্ত করে
পুলিশ। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেয়েটির কথা শুনলে বুক ফেটে যায়। আমি বাবা হয়ে তার নিরাপত্তা দিতে পারছি না। দেশে আইন কি
শুধু বড়লোকের জন্য? এমন প্রশ্ন রেখে মাসুক মিয়া বলেন, হয় আমাদের নিরাপত্তা দেন, না হয় সবাইকে মেরে ফেলেন। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ মাসুক মিয়ার অভিযোগ না নেয়ায় গত ১৩ই অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মৌলভীবাজার আদালতে তিনি পিটিশন মামলা করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য বশির বক্স বলেন, গত কয়েক মাসে ১৫-২০টি অপরাধ ঘটনার জন্ম দিয়েছে রনি। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তার হিংস্রতার শিকার হয়েছেন প্রতিবাদকারীরা। কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় একটি পক্ষ অভিযোগ দেয়ায় তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। থানা পুলিশ অভিযোগ নেয়নি অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, ওরা অভিযোগ নিয়ে হয়তো থানায়ই আসেনি। ওসি বলেন, রনির বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status