বিশ্বজমিন

সিএনএনের প্রতিবেদন

অবশেষে শব্দবোমা ফাটালেন ওবামা

মানবজমিন ডেস্ক

২২ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

ফিলাডেলফিয়ায় যেন শব্দবোমা ফাটালেন যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত  সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে। করলেন তার কড়া সমালোচনা। শব্দের মারপ্যাচে যেন চার বছর তার মনে জমে থাকা ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। ডনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করলেন তার আয়কর নীতি নিয়ে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে। ব্যক্তিগত বিষয়ে একের পর এক খোঁচা মারলেন। গত চার বছরের ঝলকানো তথ্য তুলে ধরলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সরাসরি সবচেয়ে ধারালো আক্রমণ শাণিয়েছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তার সময়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী জো বাইডেনকে সমর্থন দিলেন। বাইডেনকে তিনি উত্তম চরিত্রের এবং কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো এবং তরুণ, যুবক ভোটারদের উৎসাহিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে তুলে ধরেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন।

আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে সামনের দুই প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে চূড়ান্ত দফা টেলিভিশন বিতর্ক হওয়ার কথা। তার আগেরদিন বুধবার বাইডেনের পক্ষে ফিলাডেলফিয়ায় বক্তব্য রাখেন ওবামা। ডায়াসে উঠেই তিনি সময় ব্যয় না করে আক্রমণ শাণাতে থাকেন ট্রাম্পের উদ্দেশে। শুরুতেই তিনি ট্রাম্পকে নিয়ে দর্শক শ্রোতাদের সঙ্গে মজা করেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প পেনসিলভ্যানিয়ার ইরি’তে দর্শকদের বলেছেন, যদি তার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ না হতো তাহলে তিনি পেনসিলভ্যানিয়ায় ওই সফরে যেতেন না। এ নিয়ে মজা করেন ওবামা। বলেন, করোনা ভাইরাস যদি তার রাজনৈতিক স্বার্থকে আঘাত না করতো তাহলে তিনি পেনসিলভ্যানিয়া সফরে যেতেন না। তিনি সমালোচনার তীর একে একে বের করতে থাকেন। আর তা ছুড়ে মারতে থাকেন। ওবামা যুক্তি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের ক্ষেত্রে যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি শুধু সেটাই পাল্টে দেয় নি। একই সঙ্গে মার্কিনিরা রাজনীতিকে যেভাবে অনুধাবন করেন তিনি তা পাল্টে দিয়েছেন। ওবামা বলেন, আমি কখনো ভাবি নি যে, ট্রাম্প আমার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবেন বা আমার নীতি অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু প্রত্যাশা করেছিলাম দেশের স্বার্থে তিনি প্রেসিডেন্সির দায়িত্বটাকে গুরুত্ব দিয়ে নেবেন। কিন্তু তা হয়নি। তিনি নিজেকে এবং তার বন্ধুবান্ধবদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কাজ করেননি অথবা অন্যকে কোনো সাহায্য করেননি।

করোনা ভাইরাস মহামারি এবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বড় একটি ইস্যু হয়ে আছে। এ ইস্যুতেও ট্রাম্পকে ঘায়েল করেন ওবামা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ করোনা মহামারিতে মারা গেছেন। এরপরও ট্রাম্প বলেছেন, এ ইস্যুতে তিনি তেমন কোনো পরিবর্তন আনবেন না। অনেকটা বিস্ময়ের সঙ্গে এ নিয়ে ওবামা প্রশ্ন করেন- ‘রিয়েলি? নট মাচ? আপনজনকে বাঁচিয়ে রাখতে জনগণকে সাহায্য করতে পারে- এমন কিছুই আপনি চিন্তা করতে পারেন না। গত ২রা অক্টোবর ট্রাম্পের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে জানানো হয়। ওইদিনই তিনি ভর্তি হন হাসপাতালে। এ নিয়ে ওবামা বলেন, তিনি কতটা বেখেয়ালি যে নিজেকেও রক্ষা করতে পারেন নি।
ওবামা লিঙ্কন ফিন্যান্সিয়াল ফিল্ডে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত জনতা বাতাসে হর্ন বাজিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। গাড়ি থেকে হর্ন বাজিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন করা হচ্ছিল। ওবামার কাছ থেকে বেশ দূরত্বে ছিলেন তারা। উড়াচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের, দলীয় পতাকা, আর ব্যানার।
তাদের সেই উল্লাসধ্বনির মধ্যে করোনা ভাইরাস ইস্যুতে ট্রাম্পের উদ্দেশে ওবামা বলেন, এটা কোনো রিয়েলিটি শো নয়। এটা বাস্তবতা। ওবামা অভিযোগ করেন, নিজের প্রোফাইলকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্সিকে ব্যবহার করছেন ট্রাম্প। এমনকি তখন থেকেই তার টিভি রেটিং নি¤œমুখী। আপনারা জানেন, তা থেকে তিনি হতাশায় ভুগছেন। ওবামা দাবি করেন, তার কাছ থেকে একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি হাতে পেয়েছিলেন ট্রাম্প। অন্যসব জিনিস উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যেমনটা করেছেন ট্রাম্প, তেমনি এই অর্থনীতিকেও লেজেগোবরে করে ফেলেছেন। ট্রাম্প সম্পর্কে যে প্রতিটি দিন খবর রাখছেন ওবামা, তাও তার বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চীনের একটি ব্যাংকে একাউন্ট থাকার খবর প্রকাশ করে। এ সম্পর্কে ওবামা প্রশ্ন রাখেন- কিভাবে এটা সম্ভব? চীনের ব্যাংকে একটি গোপন একাউন্ট। ওবামা প্রশ্ন করেন, আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন, যখন আমি প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয়বার নির্বাচন করেছিলাম, তখন চীনের ব্যাংকে আমার একটা গোপন একাউন্ট থাকার বিষয়? আপনার কি মনে হয় তা নিয়ে ফক্স নিউজেহর বিন্দুমাত্র উদ্বেগ থাকতো না? (আমার এমন একাউন্ট থাকলে) আমাকে বলা হতো বেইজিং বেরি।
বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে জো বাইডেন এবং তার রানিংমেট ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমালা হ্যারিস সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওবামা। বলেন, যখন তিনি জো বাইডেনের সঙ্গে সিনেটে একসঙ্গে কাজ করতেন অর্থাৎ দুজনেই সিনেটর ছিলেন, তখন দু’জনে দু’জনকে তেমন চিনতেন না। কিন্তু পরে সেই জো বাইডেনকে ওবামা চিনেছেন এমন একজন মানুষ হিসেবে যাকে তার সততা ও শ্রদ্ধাবোধের জন্য সম্মান করা যায়। ওবামার কণ্ঠে যেন আবেগ, ক্ষোভ ঝরে পড়ে যখন তিনি বলেন, জো বাইডেন কখনো আমাদের সেনাবাহিনীর নারী বা পুরুষ সদস্যকে ‘সাকারস’ ‘লুজারস’ বলবেন না। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন রিপোর্ট করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিহত সেনা সদস্যদেরকে ‘লুজারস’ এবং ‘সাকারস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প বর্ণবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ওবামা। তার সময়ে প্রণীত ওবামাকেয়ার নিয়ে কথা বলেন ওবামা। তিনি দীর্ঘ বক্তব্যের শেষে ওবামা বলেন, এই ফিলাডেলফিয়ার জন্য আমরা আরো চারটি বছর সময় দিতে সক্ষম নই। তাই আমাদেরকে ভোট দিতে হবে পরিবর্তনের জন্য।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status