এক্সক্লুসিভ

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা

নূরে আলম জিকু

২২ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। প্রায় গত ৬/৭ মাসে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ লক্ষাধিক মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪ কোটি। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের তাণ্ডবে মারা গেছে সাড়ে ৫ হাজারের অধিক মানুষ। দেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেন সরকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে সচেতনতা ও সর্তকবার্তা দেয়া হয়। কোভিড-১৯ মহামারির এই দুঃসময়ে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কোনো রকম সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাসাবাড়ি ও হাসপাতাল থেকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করছেন। এমনকি করোনা রোগীর ব্যবহৃত সামগ্রী সরাসরি সংগ্রহ করছেন তারা। এতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়ে শঙ্কা দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, সিটি করপোরেশন থেকে করোনা শুরুর দিকে সুরক্ষা সামগ্রী দিলেও বর্তমানে সে সব দেয়া বন্ধ আছে। সরবরাহ না থাকায় তারা মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, জুতা ছাড়াই বর্জ্য অপসারণের কাজ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন প্রায় ৯ হাজার। অথচ রাজধানীতে দেড় কোটির অধিক মানুষের বসবাস। করোনার শুরু থেকে আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ফলে হাসপাতালের বর্জ্যসহ বাসাবাড়ির সুস্থদেরও ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী সরাসরি সংগ্রহ করছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। মধ্য রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত আবর্জনা সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি স্টেশনে নিয়ে আসেন তারা। এরপর সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তোলেন সে সব আবর্জনা। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কার্যালয়ে এসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য নেই হাত ধোয়ার কোনো সুবিধা। কারো মুখে নেই মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, জুতাসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী। কোথাও সড়কের উপরে সংগৃহীত ময়লা রেখে, সেখান থেকে খালি হাত দিয়ে কয়েক ভাগে ভাগ করছেন কেউ কেউ। সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার না করে বর্জ্য অপসারণ করায় অনেকেই চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও সিটি করপোরেশন থেকে চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেকে।

শিমুল নামের এক পরিচ্ছন্নকর্মী জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার বর্জ্য পরিস্কার করছি প্রায় ১৫ বছর ধরে। সিটি করপোরেশন যে সব সুরক্ষা সামগ্রী দেয় তা আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। তাছাড়া বেশি দিন টেকসই হয় না। করোনাকালীন সময়ে ঝুঁিক থাকা সর্তেও আমরা বর্জ্য অপসারণ করছি। কয়েক মাস আগে বুট, মাস্ক ও গ্লাভস দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখন আর দিচ্ছে না। কয়েকবার আমার গ্লাভস ও বুট চেয়েছি দেবে বললেও এখনো পাইনি। এ ছাড়া এ কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অনেকই মারাও গেছেন।

এদিকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন- স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বলছে, রাজধানীর বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে ৪০% পরিচ্ছন্নকর্মী নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। তারা কোনো সুচিকিৎসা পান না। রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে বহু পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মারা গেছেন। তবুও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বিভাগ আধুনিকতার ছোয়া পায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতি: প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছিদ্দিকী মানবজমিনকে বলেন, আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরকে সব সময়ই সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে আসছি। করোনার মধ্যেও ৩/৪ বার করে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়েছে। তাদরেকে আমরা বেশ কয়েকবার স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে ট্রেনিং দিয়েছি। তাদের কাছে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী রয়েছে। তারা ব্যবহার করছে না। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশকিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন ও মেয়রের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় পরিচ্ছন্নকর্মীদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নকমীরা এসব ব্যবহারে অনিহা প্রকাশ করছে। তারা বেশি সময় মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, জুতা ব্যবহার করতে চান না। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status