অনলাইন

করোনা চিকিৎসায় ভণ্ড সাধুর ফাঁদ

আজাহারুল ইসলাম রাজু, ধামরাই (ঢাকা) থেকে

১৯ অক্টোবর ২০২০, সোমবার, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকার ধামরাইয়ে আবারও ভণ্ড সাধুদের প্রতারণা বেড়েছে। তাদের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। করোনাসহ সর্বরোগ সারানোর কথা বলে ওইসব ভণ্ড সাধুরা ঝাঁড়-ফুক, পানিপড়া আর তাবিজ-কবজ দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর তাদের এ প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করছেন তারই পাতানো স্থানীয় কয়েকজন  চামচা।

জানা গেছে, ধামরাইয়ের চৌহাট গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র পালের ছেলে নিতাই চন্দ্র পাল ওরফে নিতাই যিনি বছর কয়েক আগেও এলাকায় ঘুরে ঘুরে হাড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। সেই নিতাই আজ মস্ত বড় সাধু (!) হয়েছে। যিনি সর্বরোগের চিকিংসা করেন- ঝাড়, ফু আর তাবিজ-কবজ দিয়ে। তার নামডাক ছড়িয়েছে ধামরাই, পাশ^বর্তী সাটুরিয়াসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায়। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খালি গায়ে নারী-পুরুষের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে তার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

জানা গেছে, নিতাই সাধু  করোনাসহ বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়া, অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাওয়ে দেয়া, জিন-ভূত তাড়ানো, যেসব নারীদের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইস, বাতের ব্যথা, হাঁপানী, এক শিরা, যৌন দুর্বলতা, আলসার, ব্যাথা, স্বপ্নদোষসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করেন। আর রোগের ধরন দেখে চিকিৎসার ফি নিচ্ছেন ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এসব কাজ করে তার এখন প্রতিমাসে আয় প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকা।

সরজমিনে দেখা যায়, নিতাই সাধুর বাড়িতে ভোর বেলায় তার ছাপড়া ঘরের আস্তানার সামনে পানির বোতল হাতে নিয়ে ধামরাই, সাটুরিয়া, মির্জাপুর, নাগরপুর এলাকা থেকে শাহানাজ বেগম, রওশন আরা, বাবুল হোসেন, রোকসানা বেগম, অজুফ আক্তার, শেফালি আক্তার, আসমা বেগমসহ শতাধিক নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাড়িঁয়ে আছেন চিকিৎসা  নেয়ার জন্য। এ সময় নিতাই পালের খাদেম রিপন হোসেনসহ কয়েকজন ১০০ টাকা করে নিয়ে টিকিট দিচ্ছেন রোগীদের। আর ছাপড়া ঘরের ভেতর আসর বসিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে খালি গায়ে নিতাই পাল রোগীদের ঝাঁড়-ফুক করছেন এবং আধা লিটার বোতলে পানি পড়া দিচ্ছেন। আবার যারা মাঝে মধ্যে পাগল হয়ে যান, তাদের  দেয়া হচ্ছে তাবিজ-কবজ। এক পর্যায় নারী রোগীদের সঙ্গে বলছেন কানে-কানে গোপন কথা।

এ ব্যাপারে নিতাই বাবার কাছে শিক্ষাবিদ্যা কত দূর  জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। তবে এখন শুধু নাম লিখতে পারি। একপর্যায় নিতাই পাল সাংবাদিকদের বলেন, অভাবের কারণে দুই বছর আগেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাড়ি-পাতিল বিক্রি করে সংসার চালিয়েছি। এখন নিজ বাড়িতেই আসর বসিয়ে সর্বরোগের পানি পড়া দিয়ে মানুষের কাছ থেকে যে টাকা পান তাতে আর কোন অভাব হয় না।

তবে সাধারণ মানুষ এখনো বুঝতে পারেনি নিতাই পালের পুরোটাই প্রতারণা। গত কয়েক বছর যাবৎ তিনি কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে নিরীহ লোকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিনিয়তই প্রশাসনের চোখের সামনে এ প্রতারণা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status