মত-মতান্তর

অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব

আলোচনায় ডিজিটাল বৈষম্য ও ঝুঁকি

সাজেদুল হক

১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

ফাইল ছবি

সিদ্ধান্তটি এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা। এজন্য গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভিসি মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যারকে কাজে লাগানোর কথা বলছেন তারা।

অস্বীকার করার জো নেই, করোনা এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শুধু বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোনো দেশই এমন পরিস্থিতি আগে মোকাবিলা করেনি। তবে নতুন এক বাস্তবতায় পৃথিবী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছে। আক্রান্ত, মৃত্যু কমছে না। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সারা দুনিয়াতেই মোটামুটি আবার শুরু হয়েছে। যদিও দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় ইউরোপের কিছু কিছু দেশে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে দেশে দেশে নানা আলোচনা, বিতর্ক চলছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো খোলেনি। বেশ কিছু পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠলেও খুব বেশি সমালোচনা হয়নি। এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, এ শিক্ষার্থীদের ফল কীভাবে ঘোষণা করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা কীভাবে ভর্তি হবেন।

গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। কিন্তু এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বৈষম্যের বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষকরে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে ব্যাপক। এখনো পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন নেই। গ্রামে ও শহরে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও সমান নয়।

অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে মাত্র ৭১ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সেখানেও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন সরকারি বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা। তবে তাতে সাড়া মিলছে না। বেলাবর দেওয়ানের চর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন জানান, ফেইসবুক লাইভে ক্লাস নেয়া হলেও শতকরা ৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে না। বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে এমন কথাই শোনা গেল। বাগেরহাটের খারদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসানের কাছে হ্যালোর সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- কেন সে অনলাইন ক্লাসে যায় না? উত্তরে সাকিব বলে, “আমাদের তো বড় ফোন (স্মার্ট ফোন) নাই, তাই আমি করতে পারছি না।”

বেলাবর দেওয়ানের চর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইসলাম বলেন, “কতজনের স্মার্টফোন আছে? ৫ বা ১০ ভাগ অভিভাবকের হয়ত স্মার্টফোন আছে, কিন্তু কতজন অভিভাবক শিক্ষার্থীকে মোবাইল দিচ্ছে? কতজনের বাড়িতে ওয়াইফাই আছে? দিনে ৪টা ক্লাস হয়, ২৫ মিনিট করে ১০০ মিনিট। সেজন্য নেট কিনতে তো টাকা লাগে। এ টাকা তাদের কাছে নাই।” নেটওয়ার্ক সমস্যা, বিদ্যুৎ বিভ্রাটও অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির হার কমিয়ে দিচ্ছে বলে জানান শিক্ষকরা ।

এই যখন অবস্থা তখন উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক  সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। কথা হচ্ছে যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান তাদের সবার কি ইন্টারনেট ব্যবহারের সামর্থ্য আছে? সবার কাছে কি ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন আছে? সবার কি ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য আছে? এছাড়া, ডিজিটাল ঝুঁকির বিষয়টিতো রয়েছে। কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি তাদের একটি অংশ পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারেন সে দায় কে নেবে? আর ডিজিটাল জালিয়াতির আশঙ্কাতো উড়িয়ে দেয়া যায় ই না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status