প্রথম পাতা

বাংলাদেশে করোনাকালে ইন্টারনেট স্বাধীনতা কমেছে

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

গত এক বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা পূর্বের তুলনায় আরো কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউজের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা ‘আংশিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যে দেশজুড়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) গ্রেপ্তার বেড়েছে। এছাড়া ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ৫০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট স্বাধীনতা কমার ক্ষেত্রে তিনটি বিশেষ ধারা দেখা গেছে।  বৈশ্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমত, রাজনৈতিক নেতারা করোনা মহামারিকে ব্যবহার করে তথ্য বিস্তার সীমিত করে দিয়েছে। এছাড়া দেশে দেশে কর্তৃপক্ষ স্বাধীন নিউজ সাইট বন্ধ করে দিয়েছে। ভুয়া খবর ছড়ানোর অভিযোগে মানুষজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ, বহুক্ষেত্রে বরং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও তাদের সহচররাই ভুয়া তথ্য ছড়ানোর পেছনে জড়িত ছিল বলে বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ছিল, মূল ইস্যু থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যত্র নিয়ে যাওয়া।
গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ৬৫টি দেশে জরিপ চালিয়ে ইন্টারনেট স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ফ্রিডম হাউজ। প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্রিডম হাউজের ইন্টারনেট স্বাধীনতা সূচকে গত এক বছরে দুই পয়েন্ট পিছিয়েছে বাংলাদেশ। মোট ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশকে ৪২ পয়েন্ট দিয়েছে সংস্থাটি। উল্লেখ্য, ফ্রিডম হাউজ মোট তিন বিভাগে স্কোর দিয়ে থাকে- ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারে প্রতিবন্ধকতা (২৫), কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু প্রকাশের সীমাবদ্ধতা (৩৫) ও ব্যবহারকারীর অধিকার লঙ্ঘন (৪০) অর্থাৎ মোট ১০০। এই তিন বিভাগে বাংলাদেশ যথাক্রমে পেয়েছে ১৩, ১৭ ও ১২ পয়েন্ট।
প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ ২৯টি দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার ‘আংশিক স্বাধীন’। পাকিস্তান, চীন, কিউবা, ইথিওপিয়াসহ ২২টি দেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা একেবারেই নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, ইতালি, জার্মানিসহ ১৫টি দেশে ইন্টারনেট স্বাধীন বলে জানিয়েছে ফ্রিডম হাউজ।    
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশকে নিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা আরো সীমিত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে সরকার অনলাইন বিচরণক্ষেত্র কমানো ও সমালোচনাকারীদের দমাতে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বহু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে, নির্দিষ্ট করে টার্গেট করে নিপীড়ন বাড়িয়েছে, সাংবাদিক ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য ইন্টারনেটে কনটেন্ট পরিবর্তন করা ও প্রযুক্তিগত আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে সরকার কতটা পারঙ্গম, তা বেরিয়ে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা শিবিরে তৃতীয় প্রজন্ম (থ্রি-জি) ও চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রি বন্ধ করতেও নির্দেশ জারি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারির মধ্যে দমনমূলক ডিএসএ’র অধীনে গ্রেপ্তার বেড়েছে। এছাড়া সরকার ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ৫০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে। এর মধ্যে সুইডেন থেকে প্রকাশিত নেত্র নিউজ ও মালয়েশিয়া-ভিত্তিক বেনার নিউজের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণও রয়েছে। তারা বাংলাদেশে করোনার গুরুতর প্রভাব বিষয়ক জাতিসংঘের একটি মেমো প্রকাশের পরপরই সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
এছাড়া, অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। নিউজ সাইটটি বিভিন্ন হুইসেলব্লোয়ারদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ফেসবুকে তথ্য বিকৃতির জন্য বেসামরিকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। হ্যাকারদের একটি ইউনিট ব্যবহার করে অধিকার কর্মী, বিরোধীদলীয় কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ফেসবুক প্রোফাইল-এ পেজ হ্যাক করে থাকে।
গত বছরের মে মাসে সরকার নিউজ সাইটগুলোকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত হতে নির্দেশ দিয়েছিল। ডিসেম্বরে সরকার এক ঘোষণায় জানিয়েছিল, এরপর থেকে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য ৩ হাজার সাইটের আবেদন করেছে।
ফ্রিডম হাউজ জানিয়েছে, তাদের জরিপ চলাকালে অনলাইনে কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কারণে শারীরিক সহিংসতার একাধিক ঘটনাও পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় গত বছরের অক্টোবরে। এছাড়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে চলতি বছরের মার্চ মাসে অপহরণ করা হয়। পরবর্তীতে কয়েক মাস পর তাকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status