বাংলারজমিন
পরিকল্পিত হত্যাকে গণপিটুনি বলে চালানোর চেষ্টা যুবলীগ নেতার
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম মহানগরীর নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় বেড়া মার্কেটে বস্তিতে আবু তৈয়ব (৪২) নামে এক শ্রমিক মাঝিকে নিজের ছেলের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে যুবলীগ নেতা কসাই আকতারসহ ১০ সহযোগী। পরে এ হত্যাকাণ্ডকে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে কসাই আকতারের সমপৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাকেসহ অনুসারী সাত জনকে গ্রেপ্তার করে। কসাই আকতার ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, মো. সাইফুদ্দিন (৪০), রায়হান উদ্দিন (২৫), আশরাফুল ইসলাম (২৮), মো. সবুজ (৩৫), মো আবু তাহেব কালু (২০) এবং হাসিনা (২০)। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান এ তথ্য জানান। তিনি জানান, পূর্ব বিরোধের জেরে শ্রমিক মাঝি আবু তৈয়বকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। আরো ৩ জন পলাতক আছে। আশা করছি খুব শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারব। এস এম মেহেদী হাসান বলেন, আকতার ও তার অনুসারীদের সঙ্গে নিহত তৈয়বের তিন ধরনের বিরোধের তথ্য পেয়েছি আমরা। তৈয়ব ফিশিং ট্রলারে শ্রমিক সরবরাহ করে। এছাড়া নদীর তীরে নির্মিত কাঠের ট্রলার নদীতে ভাসানোর সময় যে শ্রমিক প্রয়োজন হয়, সেগুলো সরবরাহেও তার একক আধিপত্য ছিল। এই দুই সেক্টরে শ্রমিক সরবরাহের কাজ তার থেকে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল আকতার। কিন্তু তৈয়বের প্রভাবের কারণে না পেরে আয়ের ভাগ বা চাঁদা দাবি শুরু করে। তৈয়ব চাঁদা দিতেও অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়া বেড়া মার্কেট এলাকায় তৈয়বের একটি দোকান আছে, সেখানে গিয়ে আকতারের ভাই মুন্না প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করেছিল। সেটাও তৈয়ব দেননি। ফলে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় ওয়ালটন শোরুমের সামনে তৈয়বকে ১০ জন মিলে লোহার রড, লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি কিরিচ-রামদা দিয়ে কোপানো হয়। পরিকল্পিত হত্যার পর আকতারসহ আসামিরা এই ঘটনাকে গণপিটুনি বলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে পুলিশকেও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তবে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে হত্যায় জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে যখন তৈয়বকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হচ্ছিল, সামনেই ছিলেন তার ছেলে শাহজাহান। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার আব্বার কাছে চাঁদা চেয়েছিল। আব্বা দেয়নি, তখন আকতারের লোকজনের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। আকতার মীমাংসার জন্য আব্বাকে ডেকেছিল। আব্বাকে দেখেই আকতার বলে ওঠে-ওকে একেবারে মেরে ফেল। তখন সবাই মিলে আমার আব্বাকে মারতে শুরু করে। কোপ খেয়ে আব্বা দৌড় দিয়ে রাস্তায় চলে আসে। সেখানেও আকতার এবং তার সন্ত্রাসীরা এসে আব্বাকে কোপাতে থাকে। আকতার নিজেকে স্থানীয় বকশিরহাট ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই বছর আগে বেড়া মার্কেটের বস্তিতে আগুন লেগে কয়েক হাজার কাঁচাঘর পুড়ে গিয়েছিল। এই জায়গাগুলো সরকারি খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত। তবে জায়গাগুলো দখল করে একাধিক কলোনি বানিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী। ভূমির দাবিদারদের সঙ্গে প্রশাসনের উচ্চ আদালতে মামলা চলমান আছে। আগুনে পুড়ে যাবার মাসখানেকের মধ্যেই তারা আবারও সেখানে কাঁচাবসতি গড়ে তোলে। এই বস্তিকে ঘিরে দখল-বেদখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য এসব নিয়ে নিয়মিত সংঘাত হয়। এই সংঘাতের বলি হয়েছেন আবু তৈয়ব।