শেষের পাতা

দাফনের আগেই কেঁদে উঠলো নবজাতক

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ অক্টোবর ২০২০, শনিবার, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে স্বাভাবিকভাবেই একটি সন্তান প্রসব করেন এক নারী। গতকাল ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে চিকিৎসকরা জানান, নবজাতকটি মৃত। তাই চিকিৎসকরা নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করে মৃত্যু সনদ দিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে নবজাতকের বাবা ইয়াছিন মৃত সন্তানকে কবর দিতে নিয়ে যান রায়েরবাগ কবরস্থানে। সেখানে কবর খোঁড়ার সময় হঠাৎ করে নবজাতকটি নড়েচড়ে ওঠে কান্নাকাটি শুরু করে। নবজাতকের কান্নাকাটির খবরে কবরস্থানের আশপাশের লোকজনও এসে জড়ো হন। পরে সবার পরামর্শে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা ইয়াছিন। বর্তমানে হাসপাতালটির নবজাতকের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) তার চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিনদিন আগে বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয় প্রসূতি শাহিনুর বেগমকে। ২৭ বছর বয়সী শাহিনুরের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। সন্তান জন্মদান না দিলে তার উচ্চরক্তচাপ কমবে না। তাই হাসপাতালের লেবার রুমে নিয়ে তাকে স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসবের চেষ্টা করানো হয়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। পরে তাকে হাসপাতালের ১১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়। গতকাল ভোরে ওই নারী স্বাভাবিকভাবেই একটি সন্তানের জন্ম দেন। শাহিনুর বেগম ও তার স্বামী ইয়াছিনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মালঙ্গা গ্রামে। ঢাকায় তুরাগের নিশাতনগর এলাকায় তারা থাকেন। ইয়াছিন বিআরটিসি’র একজন গাড়ি চালক। এই শিশুটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান। ইয়াছিন সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসকরা তার সন্তানকে মৃত ঘোষণার পর তিনি প্রথমে তাকে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে যান। সেখান থেকে জানানো হয় শিশুটির কবর দিতে দেড় হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা খরচ করা সম্ভব না হওয়াতে কবরস্থানের লোকদের পরামর্শেই তিনি নবজাতকটিকে রায়েরবাগ কবরস্থানে নিয়ে যান। সেখানে নির্ধারিত ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। এরপর সেখানে কবর খোঁড়ার কাজ চলছিলো। ঠিক তখনই যে প্যাকেটে করে পেঁচিয়ে নবজাতকটিকে হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছিল সেই প্যাকেটের ভেতরে সে নড়াচড়া শুরু করে। প্যাকেটের ভেতর থেকে কান্নারও আওয়াজ আসছিল। এরপর প্যাকেটটি খুলে দেখা যায় নবজাতকটি বেঁচে আছে। এমন দৃশ্য দেখে তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। খবর পেয়ে সেখানে আশেপাশের লোকজনও জড়ো হয়ে যান। তারাও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরে সবার পরামর্শেই নবজাতকটিকে ফের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ইয়াছিন। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা নবজাতকটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালের নবজাতকদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে সনদ দিয়েছিলেন সেটি তারা ফেরত নিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছেন, অপরিণত হওয়াতে নবজাতকটির রেসপন্স ছিল না। চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন তার প্রাণ নাই। এখন নবজাতকটির চিকিৎসা চলছে। সে এখন অনেকটা ভালো আছে। তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে। আর কেন এমন হয়েছে সেটি তদন্ত করা হবে।  
এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে সনদ দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। দাফন করার আগে নবজাতকটি নড়ে উঠেছিল। পরে নবজাতকটিকে আবার হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দিলেও আর বাঁচানো যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status