বিশ্বজমিন

জি নিউজের প্রতিবেদন

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান চীনা প্রেসিডেন্টের

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১:৩৭ পূর্বাহ্ন

সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি চাওঝৌতে অবস্থিত পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মেরিন কোর পরিদর্শনকালে ১৩ই অক্টোবর এমন মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও অনলাইন সিএনএন’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন জি নিউজ।

এতে বলা হয়, একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছেন, তাদের মনমানসিকতা ঠিক রাখতে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে। সিনহুয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী শি জিনপিং তার সেনাবাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তাদেরকে ‘নির্ভেজাল অনুগত, নিরেট খাঁটি এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য’ হওয়ার আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, শেনঝেন স্পেশাল ইকোনমিক জোনের ৪০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বুধবার গুয়াংঝো সফর করে সেখানে বক্তব্য রাখার কথা চীনা প্রেসিডেন্টের। ওই ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮০ সালে। বিশ্বে অর্থনীতিতে চীনকে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে শেনঝেন স্পেশাল ইকোনমিক জোন।

উল্লেখ্য, পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) চীন ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ বিরাজমান। সম্প্রতি উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে। এরই প্রেক্ষাপটে শি জিনপিং তার সেনাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানালেন। ওদিকে সীমান্ত উত্তেজনার সমাধানের জন্য দুই দেশ প্রায় ১১ ঘন্টা বৈঠক করে। এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি এ সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধানে মঙ্গলবার একমত হয় ভারত ও চীন। ১২ই অক্টোবর স্থানীয় সময় সাড়ে এগারটার দিকে এ সমস্যা নিয়ে এলএসিতে ৭তম কোর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয় এই দু’দেশের। এরপর যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, উভয় পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য একটি সমাধানে পৌঁছার জন্য সামারিক ও কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর মধ্যে আলোচনা ও যোগাযোগ স্থাপনে সম্মত হয়েছে। মতভেদ নিয়ে বিভক্ত হওয়ার পরিবর্তে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। এর মধ্য দিয়ে সীমান্ত এলাকায় শান্তি রক্ষায় রাজি হয়েছে তারা। এতে আরো বলা হয়, চুশুলে চীন ও ভারতের মধ্যে সিনিয়র কমান্ডার পর্যায়ের ৭ম দফা আলোচনা হয় ১২ই অক্টোবর। দু’পক্ষই ছিল আন্তরিক। তারা সমস্যার গভীরে গিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া ভারত-চীন সীমান্তের ওয়েস্টার্ন সেক্টরে সীমান্ত এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সমস্যা নিয়ে তারা গঠনমুলক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছেন। এতে আলোচনা ছিল ইতিবাচক, গঠনমুলক এবং একে অন্যের আশ্বস্ত হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

এর একদিন পরেই লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের কয়েকটি সেতু উদ্বোধন করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। কিন্তু এই উদ্যোগকে ১৩ই অক্টোবর অপরাধ হিসেবে নিয়ে ভারতকে চীন টার্গেট করেছে বলে জি নিউজ তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। এর আগে চীন বলেছে, সীমান্ত বরাবর অবকাঠামো গড়ে তোলার গতি বাড়িয়েছে ভারত। একই সঙ্গে তারা সীমান্তে সেনা মোতায়েন করছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য ভারতকে দায়ী করেছে চীন।

পশ্চিমাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে সড়ক ও সেতু উদ্বোধন করে সংযুক্তির নতুন যুগের সূচনা করেছেন রাজনাথ সিং। তিনি ১২ই অক্টোবর ৪৪টি বড় ধরনের স্থায়ী সেতু উদ্বোধন করেছেন। এসব সেতুর অবস্থান জম্মু ও কাশ্মীরে ১০টি। লাদাখে ৮টি। হিমাচল প্রদেশে ২টি। পাঞ্জাবে ৪টি। উত্তরাখন্ডে ৯টি। অরুণাচল প্রদেশে ৮টি এবং সিকিমে ৪টি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশ যে ভারতের-  এমনটা স্বীকৃতি দিতে চায় না চীন। সেখানে ভারত এসব সেতু নির্মাণ করেছে। এ প্রসঙ্গে চীন বলেছে, সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে অবকাঠামো গড়ে তোলার গতি বৃদ্ধি করেছে ভারত। একই সঙ্গে তারা সেখানে সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করছে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির এটাই হলো মূল কারণ।

জি নিউজ লিখেছে, এক প্রশ্নের জবাবে চীন বলেছে, তারা লাদাখ ইউনিয়ন টেরিটোরিকে স্বীকৃতি দেয় না। ভারত অবৈধভাবে এই অঞ্চলের এবং অরুণাচল প্রদেশে উন্নয়নমুলক কাজ করছে। সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী সম্পর্কিত এমন অবকাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান চীনের। তবে দুই পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কারো উচিত হবে না এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করা। তাহলে পরিস্থিতি শান্ত করার যে প্রচেষ্টা তা খর্ব হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status