প্রথম পাতা

নিজেদের জরিপে আস্থা নেই আইইডিসিআরের!

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে করোনা সংক্রমণ ও করোনার জিনগত বিষয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। মাত্র দু’দিন আগেই গবেষণার ফলটি প্রকাশ করা হয়। তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, ঢাকার ৪৫ ভাগ মানুষের এরই মধ্যে করোনা হয়ে গেছে। যে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও সংযুক্ত হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ছিলেন ওই অনুষ্ঠানের সভাপতি। ইউএসএআইডি ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এই গবেষণাটি করে আইইডিসিআর ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিডিডিআর,বি’। গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর প্রশ্ন ওঠে সরকারের তরফে দেয়া দু’রকম তথ্য নিয়ে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে গেছে। অথচ প্রতিদিন যে স্বাস্থ্য বুলেটিন দেয়া হয় তাতে এর কোনো প্রতিফলন নেই। আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সোমবার প্রকাশিত গবেষণা ফলের বিষয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের গবেষণার ফলাফল নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য রাখেন। বলেন, গবেষণায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম ছিল। এতো কম সংখ্যক নমুনা ঢাকা শহরের প্রতিনিধিত্ব করে না। ব্যাখ্যায় বলা হয়, গবেষণাটি ঢাকা মহানগরীর প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র তুলে ধরেছে বলে দাবি করা হয়নি। কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যমে গবেষণাটিতে সমগ্র ঢাকা মহানগরীর চিত্র তুলে ধরেছে বলায় এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ঢাকা মহানগরীর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হলে ভবিষ্যতে প্রতিনিধিত্বমূলক সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করে আরো বড় পরিসরে গবেষণা করতে হবে। অন্যদিকে গবেষণাটি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমসমূহকে প্রথমে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায় সংস্থাটি।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, আইইডিসিআরের ব্যাখ্যা ঠিক হয়নি। এন্টিবডি জরিপে নমুনা আরো বাড়ানো দরকার ছিল। গবেষণার অন্যান্য অংশ ঠিক আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জরিপে আক্রান্তের যে হার বলা হয়েছে এরচেয়ে আরো বেশি হতে পারে। এই এন্টিবডি তিন মাসের বেশি থাকে কিনা সেটাই তো প্রশ্ন। এটা দিয়ে বলা যায় অন্ততপক্ষে শতকরা ৪৫ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। তবে আমাদেরকে আরো বেশি পরীক্ষা করতে হবে। গবেষণার ফলে দেখা যায়, ঢাকায় ৪৫ ভাগ মানুষের ইতিমধ্যে করোনা হয়ে গেছে। সে হিসাবে ঢাকায় এক কোটির কাছাকাছি মানুষ এরইমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছেন। গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে মধ্য এপ্রিল থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত। এরপর করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, ঢাকা শহরের সংক্রমণের এ তথ্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের। সংক্রমণের ধারা অনুসরণ করলে অনুমান করা যায় আক্রান্তের হার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করেই বলা যায়, আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখের কম।
সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মার্চ মাস থেকে যে তথ্য দিয়ে আসছে, তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ ছিল। তাদের ধারণা, সরকার যে সংক্রমণের তথ্য প্রচার করছে, বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। গবেষণা বলছে, এই সংখ্যা প্রায় এক কোটি। উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় ১০০ শতাংশে এন্টিবডি পেয়েছেন গবেষকরা। অন্যদিকে উপসর্গহীন ৪৫ শতাংশের রক্তে এন্টিবডি পাওয়া গেছে। এর অর্থ হচ্ছে ঢাকা শহরের বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কোনো উপসর্গ নেই। তারা দিব্যি  রাস্তাঘাটে, বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অফিস করছেন। সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ৬০ বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ২৪ শতাংশ এই বয়সী। এর পরে বেশি আক্রান্ত ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীরা। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশেরই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status