অনলাইন
কালুরঘাট সেতু নির্মাণে বিআইডব্লিউটিএ’র আপত্তি
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১:৫০ পূর্বাহ্ন
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে তোড়জোড় চালাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত দ্যা ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফাণ্ড (ইডিসিএফ) এর সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয় রেলওয়ের।
অর্থসংস্থান থেকে প্রায় সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। তবে এরমধ্যে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিআইডব্লিউটিএ। নেভিগেশন চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ সেতুর যে উচ্চতা রাখার কথা বলছে, তাতে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ নেভিগেশন চ্যানেল ১২.২ মিটার ক্লিয়ার চাচ্ছে। কিন্তু কালুরঘাটে বর্তমান সেতুর উচ্চতা ৪.২ মিটার। তা যদি আরো ৮ মিটার উচু করা হয় তাহলে নতুন সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। কারণ হুট করে রেললাইন উঁচু করে ফেলা যায় না। বেশ দূর থেকে ক্রমান্বয়ে উঁচু করতে হয়। বেশ দূরে গিয়ে স্ল্যাভ মিলাতে হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত কালুরঘাট সেতুর উচ্চতা যদি ১২.২ মিটার করতে হয় সেক্ষেত্রে জানালী হাট এবং গুমদন্ডি রেলওয়ে স্টেশনকে বহু উঁচু করতে হবে। যা অনেক কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় সেতু নির্মাণের পুরো প্রকল্পটি নতুন করে ডিজাইন করাসহ অনেক কিছু পাল্টে ফেলতে হবে। যা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ০.৭২ কিলোমিটার লম্বা সেতুটির প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭.৬২ মিটার। যার ওপর দু’টি রেলসড়ক ডিজাইন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোরিয়ার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের আপত্তির কারণে একটি রেল সড়ক অন্তর্ভুক্ত করে ডিজাইন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই উচ্চতার ব্যাপারেও আপত্তি বিআইডব্লিউটিএ’র।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, বিআইডব্লিউটিএ সেতুর উচ্চতা নিয়ে অহেতুক জটিলতা তৈরী করছে। নদীর ওই অংশটিতে কোনরকম জাহাজ চলাচল নেই। নেভিগেশন চ্যানেল রক্ষার নামে এই ধরনের জটিলতা তৈরি পুরো প্রকল্পটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র চট্টগ্রাম ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তালেব বলেন, চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য কর্ণফুলীর জাহাজগুলো কালুরঘাট সেতু পার হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ওই দুঃসময় জাহাজ পারাপারে সেতুটি যাতে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে সেজন্য সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উচ্চতা ১৮.৩ মিটার। তৃতীয় সেতুর উচ্চতাও ১২.২ মিটার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি স্রেফ জাহাজ চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর এবং জাহাজ চলাচলের স্বার্থে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপোস করার সুযোগ নেই।
সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এ প্রসঙ্গে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামে বহু ঘুর্ণিঝড় হয়েছে। কিন্তু কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে কোনো জাহাজ অবস্থান নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। তাছাড়া কালুরঘাটের উজানে জাহাজ চলাচলের মতো গভীরতাও নেই। ভবিষ্যতেও কোনো জাহাজকে সেতু পার হয়ে যেতে হবে কিনা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার ব্রুনিক এ- কো¤পানির ব্রিজ কো¤পানি ব্রিজ বিল্ডার্স-হাওড়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কালুরঘাটে ৬৩৮.৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। এটি মূলত রেলসেতু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্যদের মোটরযান ও যুদ্ধযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরণের যান চলাচলের উপযোগী করা হয়। একমুখী যান চলাচল করায় সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। রেল চলাচলের সময় সেতুটি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এতে শহরের কাছের উপজেলা হলেও বোয়ালখালীবাসীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগন্যালে আটকা পড়তে হয়।
এভাবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ২০০১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপরও একাধিকবার সংস্কারের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে গত ১৯ বছর ধরে সেতুটিতে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল করছে। দুর্ভোগ লাঘবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ২০১৭ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে ডিপিপি তৈরি করে। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করা হয়। উপস্থাপনগত ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি একনেক থেকেও ফেরত পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এই সেতুর একটি চূড়ান্ত ডিজাইন দাঁড় করানো হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে অবস্থিত পুরনো রেল সেতুর পাশে নতুন রেলওয়ে কাম সড়ক সেতু নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়।
অর্থসংস্থান থেকে প্রায় সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। তবে এরমধ্যে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিআইডব্লিউটিএ। নেভিগেশন চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ সেতুর যে উচ্চতা রাখার কথা বলছে, তাতে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন রেল সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ নেভিগেশন চ্যানেল ১২.২ মিটার ক্লিয়ার চাচ্ছে। কিন্তু কালুরঘাটে বর্তমান সেতুর উচ্চতা ৪.২ মিটার। তা যদি আরো ৮ মিটার উচু করা হয় তাহলে নতুন সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। কারণ হুট করে রেললাইন উঁচু করে ফেলা যায় না। বেশ দূর থেকে ক্রমান্বয়ে উঁচু করতে হয়। বেশ দূরে গিয়ে স্ল্যাভ মিলাতে হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত কালুরঘাট সেতুর উচ্চতা যদি ১২.২ মিটার করতে হয় সেক্ষেত্রে জানালী হাট এবং গুমদন্ডি রেলওয়ে স্টেশনকে বহু উঁচু করতে হবে। যা অনেক কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় সেতু নির্মাণের পুরো প্রকল্পটি নতুন করে ডিজাইন করাসহ অনেক কিছু পাল্টে ফেলতে হবে। যা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ০.৭২ কিলোমিটার লম্বা সেতুটির প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭.৬২ মিটার। যার ওপর দু’টি রেলসড়ক ডিজাইন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোরিয়ার অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের আপত্তির কারণে একটি রেল সড়ক অন্তর্ভুক্ত করে ডিজাইন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই উচ্চতার ব্যাপারেও আপত্তি বিআইডব্লিউটিএ’র।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, বিআইডব্লিউটিএ সেতুর উচ্চতা নিয়ে অহেতুক জটিলতা তৈরী করছে। নদীর ওই অংশটিতে কোনরকম জাহাজ চলাচল নেই। নেভিগেশন চ্যানেল রক্ষার নামে এই ধরনের জটিলতা তৈরি পুরো প্রকল্পটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র চট্টগ্রাম ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তালেব বলেন, চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। ঝড়ের সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য কর্ণফুলীর জাহাজগুলো কালুরঘাট সেতু পার হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ওই দুঃসময় জাহাজ পারাপারে সেতুটি যাতে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে সেজন্য সেতুর উচ্চতা বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উচ্চতা ১৮.৩ মিটার। তৃতীয় সেতুর উচ্চতাও ১২.২ মিটার রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি স্রেফ জাহাজ চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর এবং জাহাজ চলাচলের স্বার্থে সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপোস করার সুযোগ নেই।
সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এ প্রসঙ্গে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চট্টগ্রামে বহু ঘুর্ণিঝড় হয়েছে। কিন্তু কালুরঘাট ব্রিজ পার হয়ে কোনো জাহাজ অবস্থান নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। তাছাড়া কালুরঘাটের উজানে জাহাজ চলাচলের মতো গভীরতাও নেই। ভবিষ্যতেও কোনো জাহাজকে সেতু পার হয়ে যেতে হবে কিনা তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার ব্রুনিক এ- কো¤পানির ব্রিজ কো¤পানি ব্রিজ বিল্ডার্স-হাওড়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কালুরঘাটে ৬৩৮.৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে। এটি মূলত রেলসেতু হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্যদের মোটরযান ও যুদ্ধযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরণের যান চলাচলের উপযোগী করা হয়। একমুখী যান চলাচল করায় সাধারণ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন। রেল চলাচলের সময় সেতুটি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এতে শহরের কাছের উপজেলা হলেও বোয়ালখালীবাসীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগন্যালে আটকা পড়তে হয়।
এভাবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ২০০১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এরপরও একাধিকবার সংস্কারের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে গত ১৯ বছর ধরে সেতুটিতে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল করছে। দুর্ভোগ লাঘবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ২০১৭ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণে ডিপিপি তৈরি করে। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করা হয়। উপস্থাপনগত ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি একনেক থেকেও ফেরত পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এই সেতুর একটি চূড়ান্ত ডিজাইন দাঁড় করানো হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে অবস্থিত পুরনো রেল সেতুর পাশে নতুন রেলওয়ে কাম সড়ক সেতু নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়।