প্রথম পাতা

রিফাত হত্যায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

মাস্টারমাইন্ড মিন্নির ফাঁসির রায়

মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা থেকে

১ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় ৪ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। বুধবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। এ সময় মিন্নিসহ ৯ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির আদেশের পরই মিন্নিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। একই সঙ্গে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর মিন্নিসহ সব আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে তার শাস্তি ধার্য করেন।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯), ও কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। রায় শুনে আদালতে কেঁদে ফেলেন তিনি। রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, এক বছর ধরে আমাদের পরিবারের সদস্যরা কাঁদছি। আমাদের নির্ঘুম দিন কাটছে। ওই কান্না আর আজকের কান্নার মধ্যে অনেক তফাৎ। ১৫টা মাস এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। রায়ে রিফাতের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা সুবিচার পেয়েছি। তবে রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না।

এদিকে রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিন্নির বাবা মোজাম্মমল হক কিশোর বলেন, আমার মেয়ে অপরাধী না। আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমার মেয়ে কিছুই জানে না, তারপরও রায় দেয়া হয়েছে ফাঁসি। তাকে নির্দোষ প্রমাণে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।

এ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে ১নং আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী বরগুনা পৌর শহরের ধানসিঁড়ি সড়কে আহসান হাবিব দুলাল ওরফে দুলাল ফরাজীর ছেলে। তাকে গত ৩রা জুলাই ২০১৯ গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করে। রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী এই রিফাত ফরাজী। নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহচর রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ- সে এলাকায় ছিঁচকে চুরি থেকে শুরু করে বরগুনায় অবস্থানরত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মেসে হানা দিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে অর্থ আদায় করতো। ২০১৯ সালে মার্চ মাসে বন্ড-০০৭ নামের একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সদস্য যুক্ত করতে থাকে। রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার আগের রাতে এই ফেসবুক গ্রুপেই হত্যার সর্বশেষ নির্দেশনা দেয় রিফাত ফরাজী। সেখানে গ্রুপের সবাইকে ২৬শে জুন বুধবার সকাল ৯টার মধ্যে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়। মোহাম্মদ নামে একজনকে সকাল ৯টায় আসার সময় রামদা নিয়েও আসতে বলে সে। রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার পর পরিকল্পনা মোতাবেক তার প্রথম কলার ধরে রিফাত ফরাজী। এরপর নয়ন বন্ডের হাতে দিয়ে সে দৌড়ে দু’হাতে দু’টি রামদা নিয়ে এসে প্রথম কোপাতে শুরু করে। পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা ভাঙচুর, ব্যাংক কর্মকর্তার ছেলেকে কুপিয়ে জখমসহ তার বিরুদ্ধে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আগেও ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে মোট ৮টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব মামলায় বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয় সে। তবে প্রতিবারই আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।

২নং আসামি রাব্বি আকন বুড়িরচর ইউনিয়নের পশ্চিম কেওড়াবুনিয়া এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালামের ছেলে। বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য রাব্বি আকন বন্ড গ্রুপের প্রধান নিহত নয়ন বন্ড এর সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনায় ও ঘটনাস্থলে সক্রিয় ভূমিকায় ছিল রাব্বি আকন। ঘটনার আগের দিন ২৫শে জুন রিফাত শরীফকে হত্যার বিষয়টি রিফাত ফরাজী মোবাইলে রাব্বি আকনকে জানায়। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টায় রিফাত শরীফ কলেজে রওয়ানা করলে রাব্বি আকন মোবাইলে খবরটি রিফাত ফরাজীকে জানায়। সকাল সোয়া ৯টায় সে কলেজে প্রবেশ করে এবং সাইন্স বিল্ডিংয়ের পাশে রিফাত ফরাজী, রিফাত হাওলাদারসহ অন্যদের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনায় অংশ নেয়। চার্জ গঠনের পর রাব্বি আকন আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

৩নং আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত বন্ড গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সিফাত ঘটনার আগের দিন ২৫শে জুন বিকালে বরগুনা সরকারি কলেজে রিফাত শরীফ হত্যা পরিকল্পনার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিল। পরিকল্পনা মোতাবেক রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সঙ্গে সিফাতও তাকে ঘিরে ধরে এবং রিফাত ফরাজীর সঙ্গে রামদা আনার জন্য দৌড়ে যায়। পরে ফিরে এসে রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপানোর সময় নিহত রিফাতকে ঘিরে রাখে। সিফাত বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ওরফে আর্মি দেলোয়ারের ছেলে। ১লা জুলাই ২০১৯ তারিখে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৪নং আসামি রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী চালিতাতলা এলাকার বাসিন্দা রফিক আলী খান ওরফে রকীবের ছেলে হৃদয়। হত্যকাণ্ডের সময় টিকটক হৃদয় আসামি রিফাত ফরাজীর সঙ্গে ঘটনাস্থল রেকি করতে থাকে। রিফাত শরীফ কলেজ থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অন্যরা ঘিরে ঘরে টানতে টানতে সামনে নিয়ে যাওয়ার সময় টিকটক হৃদয় দৌঁড়ে রিফাত ফরাজীর সঙ্গে কলেজের পূর্বদিকে রাখা দা আনতে যায় এবং ফিরে এসে রিফাত শরীফকে ঘিরে রাখে। ২০১৯ সালের ১লা জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৫নং আসামি হাসান বরগুনা সদর উপজেলার ২নং গৌরীচন্না এলাকার বাসিন্দা আয়নাল হকের ছেলে। বরগুনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে কলেজ সড়কে তালুকদারের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতো হাসান। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সময় হাসান ঘটনাস্থল রেকি করা ও রিফাত শরীফ বের হওয়ার পরপরই অন্যদের সঙ্গে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে কোপানোর সময় ঘিরে রাখার অভিযোগ হাসানের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ১লা জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার কারণ হিসেবে ৭নং আসামি ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির নাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। বরগুনা পৌরশহরের ওয়ার্ডের কড়ইতলা মাইঠা এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের বড় মেয়ে মিন্নি। পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে মিন্নির বিরুদ্ধে। রিফাত শরীফকে হত্যার মূল কারণ হিসেবে, রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে পরবর্তী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কে সৃষ্ট বিরোধিতার জেরেই রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিন্নি ও নয়ন বন্ড এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলায় গত বছরের ১৬ই জুলাই মিন্নি গ্রেপ্তার হন, ২৯শে আগস্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে উচ্চ আদালত এবং ৪৯ দিন পর কারাগার থেকে মুক্ত হন মিন্নি। মামলার একমাত্র জামিনে থাকা আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিরুদ্ধেও হত্যার পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেয়ার অভিযোগে ৩৪ ও ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

একমাত্র মাস্টার মাইন্ড মিন্নি: পর্যবেক্ষণে আদালত
রিফাত হত্যায় আসামিদের বর্বরতা ও নির্মমতা মধ্যযুগীয় কায়দায়কেও হার মানিয়েছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে তাদের অনুসরণ করে অন্য যুবকরাও ধ্বংসের পথে যাবে। এসব আসামি সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বলে আদালত রিফাত হত্যা মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিচারক মো. আছাদুজ্জামান বলেন, পাঁচজনের সহযোগী হিসেবে রিফাত শরীফ হত্যায় অংশ নিয়েছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। একইসঙ্গে তারা ছয়জন রিফাতের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। এজন্য কলেজগেটের সামনে সময়ক্ষেপণ করেন মিন্নি। রিফাতকে যখন মারার জন্য আসামিরা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন স্বাভাবিক ছিলেন মিন্নি। এতেই প্রমাণিত হয়, মিন্নি হত্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তারই পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এজন্য তাকেও ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ষড়যন্ত্রের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আদালতে রায়ের পর্যবেক্ষণে তাই উঠে এসেছে। হত্যার একমাত্র পরিকল্পনা ছিল মিন্নির। মিন্নির কারণেই তার পরিকল্পনায় অন্যরা যুক্ত হয়েছে। মিন্নি ষড়যন্ত্র না করলে এই অপরাধীরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত হতো না। আসামিদের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এজন্য মিন্নিকে ফাঁসি দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে আরও বলেছেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছিল এবং সেই বিয়ে বলবৎ থাকার পাশাপাশি বিয়ের তথ্য গোপন করে ধর্মীয় এবং দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে মিন্নি রিফাত শরীফকে বিয়ে করে। এর প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেন তারা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের আগের দিন নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মিন্নি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬শে জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের ভিড়ে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১লা সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
১লা জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ই জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। এ মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status