খেলা

এখন তারা সালাউদ্দিনের পরম বন্ধু

স্পোর্টস রিপোর্টার

১ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

২০০৮ সালে মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ওই নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন শামসুল হক চৌধুরী। ১২ বছর পর সেই শামসুল হক চৌধুরী বাফুফে নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিনের প্রধান সমন্বয়কারী। ২০০৫ সালে যার কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি পদ ছেড়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন, সেই আমিরুল ইসলাম বাবুও আজ তার পরম বন্ধু। কেবল বন্ধুই নন, গভীর নির্ভরতার জায়গাও। আসন্ন নির্বাচনে অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও বাবুকে নিজের প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছেন সালাউদ্দিন।
১৯৮২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে, দর্শকদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় স্টেডিয়াম। মাঠের উত্তেজনা মাঠেই শেষ হয়নি। সেই রাতে গ্রেপ্তার হন আবাহনীর চার খেলোয়াড় কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, গোলাম রব্বানী হেলাল ও আনোয়ার। মামলায় সালাউদ্দিন-চুন্নুদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। আনোয়ার ও হেলালকে ছয় মাস এবং চুন্নু ও সালাউদ্দিনকে দেয়া হয় তিন মাসের কারাদণ্ড। আনোয়ার ও হেলালকে রাজশাহী কারাগারে এবং চুন্নু ও সালাউদ্দিনকে পাঠানো হয় যশোর কারাগারে। অবশ্য ১৭ দিন পরই মুক্তি পান চার ফুটবলার। এই মামলাকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে টেনে আনেন শামসুল হক চৌধুরী। মনোনয়ন ফরমের একটি জায়গায় উল্লেখ ছিল প্রার্থী কোনো ফৌজদারি মামলায় আসামি কিনা। মামলার বিষয়টি এড়িয়ে যান সালাউদ্দিন। এই সুযোগ কাজে লাগাতেই সালাউদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য মামলা করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর এই কর্মকর্তা। যদিও মামলা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। সেনা শাষিত সরকারের আমলে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে হারিয়ে প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। বিরোধী প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী। সেই তিনি এখন সালাউদ্দিনের খুব কাছের মানুষ। নির্বাচনেও পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
অপরদিকে আমিরুল ইসলাম বাবু ছিলেন সালাউদ্দিনের বড্ড অপছন্দের। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত এই সংগঠককে জাতীয় দলের ম্যানেজার করা নিয়ে তৎকালীন সভাপতি এসএ সুলতানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন সালাউদ্দিন। অভিমানে ছেড়েছিলেন পদ।
কালের ব্যবধানে শত্রুতা পাল্টে গেছে মিত্রতায়। আর সালাউদ্দিনের বাবুপ্রীতি অস্বস্তিতে ফেলেছে তার নেতৃত্বাধীন পরিষদের অনেককেই। মন থেকেই যেন বাবুকে সহ-সভাপতি পদে মানতে পারছেন না তারা। আবার প্যানেল প্রধানের চাওয়া উপেক্ষাও করতে পারছেন না। গুঞ্জন আছে, প্যানেল চূড়ান্ত করার আগে বাবুকে সহ-সভাপতি করা নিয়ে জোর আপত্তি ছিল দুই সহ-সভাপতির। কিন্তু সালাউদ্দিন নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। তার চোখে বাবু একজন দক্ষ ভোটশিকারি। বাবু এখন সালাউদ্দিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। এই সাবেক তারকা ফুটবলার যেখানে যান, পাশেই দেখা যায় তাকে। ফুটবলেও আলোচিত মুখ বাবু। দীর্ঘদিন মোহামেডানের ম্যানেজার পদটি দখলে রেখেছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও ভোল পাল্টে প্রায় দেড় দশক মোহামেডানের ফুটবল ছিল তার জিম্মায়। বছরের পর বছর নিম্নমানের দল গড়ে মোহামেডানকে পরিণত করেছেন মাঝারি মানের দলে। অভিযোগ আছে, ফুটবলারদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বাবু। জানা গেছে, মোহামেডানের বর্তমান ফুটবল কমিটির হাতে রয়েছে তার বিরুদ্ধে ফুটবলারদের সাক্ষ্যসহ অনেক প্রমাণ। কমিটির এক শীর্ষ কর্তা এই নির্বাচনে বাবুর বিরুদ্ধে প্রমাণপত্র নিয়ে মাঠে নামারও হুমকি দিয়েছেন। তার পরেও নির্বাচনে আছেন বাবু! এবারের নির্বাচনে চার সহ-সভাপতি পদে ভোটের লড়াইয়ে বাবুর সঙ্গে লড়ছেন আরো সাত হেভিওয়েট প্রার্থী। কথায় আছে রাজনীতিতে ‘শেষ’ বলে কিছু নেই। ফুটবল রাজনীতিতে সেটাই প্রমাণ করলেন সালাউদ্দিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status