অনলাইন

ভ্যাকসিন পাওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে বিশ্ব, বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা

ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশসহ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষের কাছে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রস্তাবনা তৈরী করেছে। এই প্রস্তাবনাটি আগামী মাস অর্থাৎ অক্টোবরের প্রথম দিকে সংস্থাটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে (বোর্ড অফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস) অনুমোদনের জন্য দাখিল করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাটি দেন৷ এই জরুরি ভ্যাকসিন তহবিল থেকে দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলো অর্থ সাহায্য পাবে যাতে করে অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে কোনো দেশ করোনা ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত না হয়। সেই সাথে স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিনের আওতা থেকে বাইরে না থাকে।

করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আরো অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের বহু পূর্বেই তাদের চাহিদা পূরণের জন্য আগাম অর্থায়ন করে রেখেছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পৃথিবীর বড় বড় তিনটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায় ৩ বিলিয়ন ডলার আগাম লগ্নি করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই কারণে বিশ্ব ব্যাংকের এই ১২ বিলিয়ন ডলারের করোনা ভ্যাকসিন তহবিল দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও এই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সমভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করবে।

কিন্তু এই বৈশ্বিক তহবিল থেকে অর্থ পেতে হলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এখনই তৎপর হতে হবে। প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হলো, এই অর্থ পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আকাঙ্খা প্রকাশ করা এবং সেটা এই মুহূর্তেই দরকার। তার সাথে থাকতে হবে করোনা ভ্যাকসিন অর্থায়ন, ক্রয়, বিতরণসহ একটি সুনির্দিষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান। সমগ্র জনগোষ্ঠীর কোন কোন অংশকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে, কিভাবে কাঙ্খিত জনগোষ্ঠীর কাছে ভ্যাকসিন নিয়ে পৌঁছানো যাবে, ভ্যাকসিন ক্রয় এবং বিতরণে সর্বমোট কত টাকা খরচ হবে, জাতীয়ভাবে কত টাকা অর্থায়ন করা যাবে, বাড়তি অর্থের চাহিদা কত, বিশ্ব ব্যাংকের এই ১২ বিলিয়ন ডলার তহবিল থেকে কত টাকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই জরুরি কাজগুলো এখনই দক্ষতার সাথে না করলে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।

বিভিন্ন কারণে COVID-19 নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় আমাদের দেশের সীমাহীন দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। এখনও ওই দুর্বলতাগুলো আমাদের সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার পথে বড় অন্তরায় হয়ে আছে। স্বাস্থ্য খাতের ক্রয়ে দুর্নীতি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবার নজর কেড়েছে। আমরা কেউই ওইসব দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আশা করি, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের মহারথীরা নতুন কোনো দুঃস্বপ্নের জন্ম দেবেন না।

লেখকঃ বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status