দেশ বিদেশ

সিলেটে ধর্ষক রনি, রাজন ও আইনুল ৫ দিনের রিমান্ডে

এমসি’র শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

এমসি’র ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী শাহ রনি, রাজন ও আইনুদ্দিনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার ইন্সপেক্টর ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-২ সাইফুর রহমানের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান। আদালত তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। এ সময় তারা ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ছাত্রত্ব বাতিলসহ ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করেছেন। এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যরা গতকাল বিকাল থেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেছেন। আলোচিত এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে ৭ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সাইফুর, অর্জুন ও রবিউলকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এরপর র‌্যাবের হাতে নিজ বাড়ি শায়েস্তাগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলো ঘটনার অন্যতম আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, ফেঞ্চুগঞ্জ আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গতকাল দুপুরে সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-২ সাইফুর রহমানের আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চায়। এ সময় আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় মাথায় হেলমেট ও বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এরপর তাদের নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছলে উপস্থিত থাকা শত শত মানুষ ফাঁসি ফাঁসি বলে চিৎকার শুরু করেন। আদালতে শুনানি শেষে বেরিয়ে এসে এপিপি খোকন কুমার দত্ত জানিয়েছেন, ‘আদালতে তাদের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। এ সময় আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাদের আবার পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয়েছে। এই আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। এবং তাদের কারো কারো নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’ এদিকে, আলোচিত এ মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমানকে মধ্যরাতে সিলেটের জৈন্তাপুরের হরিপুর থেকে গ্রেপ্তার করে সিলেট জেলা  গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের সহযোগিতা করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। মাহফুজের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। পুলিশ জানায়, হরিপুর এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলো পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর গতকাল সকালে তাকে সিলেট জেলা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তাকে শাহপরান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে আলোচিত এ ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল থেকে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। তারা কলেজের ফটকে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। এ সময় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। বিক্ষোভকালে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অবরোধও করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা। তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে এমসি কলেজে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর রাতে ঘটা গণধর্ষণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত, সকল অপরাধীর ছাত্রত্ব বাতিল ও সার্টিফিকেট জব্দ করা, ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের সার্বিক ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কলেজ হোস্টেলকে সাবেক ছাত্র ও বহিরাগত মুক্ত করা, পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ও হোস্টেল সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় নিয়ে আসা, কলেজ হোস্টেলে রাতের  বেলায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা, কলেজ ও হোস্টেলে নিরাপত্তাবেষ্টিত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা, কলেজের সকল ছাত্রছাত্রীর জন্য একটি উন্মুক্ত অভিযোগ বক্স তৈরি করা, যেখানে যে কেউ নির্যাতন বা সহিংসতা বা যেকোনো ধরনের সমস্যার শিকার হলে স্বাধীনভাবে অভিযোগ করতে পারে। এবং সেই অভিযোগ বক্সের অভিযোগসমূহকে তদন্ত ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কলেজ প্রশাসন কর্তৃক একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করা, যে দুজন কর্মচারীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদেরকে পুনর্বহাল করা এবং সর্বোপরি কলেজের সকল শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী, বহিরাগত দর্শনার্থী, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দের কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এদিকে, গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় এমসি কলেজ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। দুপুরে নিজ কার্যালয়ে তদন্ত কমিটির গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আনোয়ার চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা কলেজের হোস্টেলের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একই সঙ্গে হোস্টেলের সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুইজন দারোয়ানসহ অন্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। দুইজন দারোয়ানকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আরো যারা ঘটনার সময় কিংবা পরপরই সেখানে গিয়েছিলেন তাদেরকে কলেজ মিলনায়তনে এসে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এমসি কলেজ গঠিত তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া সম্ভব হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status