বাংলারজমিন

ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর প্রতারক পারভীন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক, কখনো সাংবাদিক, কখনো ক্যাব সভাপতি, কখনো মানবাধিকারকর্মী, কখনো এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, কখনো দেশি-বিদেশি নিয়োগকারী সংস্থার মহাব্যবস্থাপক, কখনো আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী, কখনো পরিবেশবিদ তিনি।
আসলে তিনি একজন ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর প্রতারক। নাম পারভীন আক্তার (৫০)। এসব পরিচয়েই মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। শেষমেশ শনিবার রাতে ধরা খেয়ে এখন র‌্যাবের কব্জায় তিনি। রোববার সকালে এমন তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মাহমুদুল হাসান মামুন।
তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড়তলি থানাধীন ডিটি রোড এলাকায় স্বীকৃতি নামে একটি ভুয়া এনজিও সংস্থা কাম বাসা থেকে পারভীন আক্তারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৭।
অভিযানে সঞ্চয় ও ঋণের পাসবই, পূরণ করা চেক, স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেক, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই-জমা বই, চুক্তিনামা, স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যা¤প, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা আদায়ের রসিদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সিল, স্বীকৃতি নামক সংস্থার ডেবিট ও ক্রেডিট ভাউচার বই, ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ বই, অনুদান আদায়ের রসিদ বই, ক্যাশ পজিশন বই, প্যাড, বিদেশগমনের লিফলেট, বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম সংবলিত ভিজিটিং কার্ড, নিয়োগপত্র, লেজার বই, অঙ্গীকারনামা বই, মাসিক চাঁদা আদায়ের রসিদ, মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির বই, হিসাব খোলার বই, সাপ্তাহিক টপশিট, মাসিক সঞ্চয় আবেদন বই, প্রকল্প প্রস্তাব, আইডি কার্ড, ৪টি পাসপোর্ট, গ্রেপ্তারকৃত আসামির একটি ভুয়া এনআইডি কার্ডসহ আরো বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র জব্দ করে র‌্যাব।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পারভীন একজন ঠাণ্ডা মাথার ভয়ঙ্কর প্রতারক। বিভিন্ন ভুয়া ও অবাস্তব প্রকল্প এবং সচেতনতা কার্যক্রম দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে অনুদানের আবেদন করে থাকেন। এ ছাড়া তিনি ভূতুড়ে কার্যক্রম দেখিয়ে কিছুদিন আগে একটি মন্ত্রণালয়ে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেন।
পারভীন আক্তারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও আদালতে ১০টিরও বেশি প্রতারণা মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে তার প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে সমবায় অধিদপ্তর স্বীকৃতি সংস্থার লাইসেন্স বাতিল করে। পরে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে লাইসেন্সের আবেদন করলেও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য লাইসেন্স অনুমোদিত হয়নি। এরপরেও তিনি তার প্রতারণামূলক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তারের পর পারভীন আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে তার প্রতারণামূলক কর্মকা- যেমন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় আদায়, ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, হুমকি প্রদান করে চাঁদা আদায়, আইনি সহায়তা দেয়া, চাকরি দেয়া বা বিদেশ পাঠানোর নাম করে টাকা আদায় করতেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পারভীন আক্তার স্বীকৃতি নামক এক ভুয়া সংস্থা পরিচালনা করতেন। ওই সংস্থায় নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। তারা সংস্থা প্রধান ও তার নিয়োগ করা বিভিন্ন কর্মচারীর মিষ্টি কথায় ভুলে ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আশায় দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক ভিত্তিতে সংস্থাটিতে সঞ্চয় করেন।
কিন্তু সঞ্চয়ের সীমা শেষ হয়ে গেলেও পারভীন আক্তার তাদেরকে মূল টাকা বা লাভ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পারভীন আক্তারের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তার কর্মচারীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও তাদেরকে চুরির মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাকরি করতে বাধ্য করতেন।
এ ছাড়া তিনি প্রত্যেক কর্মচারীর কাছ থেকে জামানত হিসেবে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করতেন। কিন্তু সেগুলো আর ফেরত দিতেন না। তার এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানান র‌্যাব-৭ এর কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান মামুন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status