মত-মতান্তর

ভিপি নুর, ধর্ষণ এবং আট মাস

শামীমুল হক

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

লাজ, লজ্জা, ভয়/এ তিন থাকতে নয়। এ উপমার সৃষ্টি কীভাবে? কাদের জন্য? ক’দিন ধরে বিষয়টি ভাবাচ্ছে। সত্যিই কি মানুষ এখন মানুষ আছে? ক’দিন ধরে দেশে আলোচনার বিষয় একটি ধর্ষণ মামলা। ধর্ষণ হওয়ার আট মাস পর ধর্ষিতার মনে পড়েছে তিনি ধর্ষণের শিকার। আর যায় কোথায়? থানায় মামলা। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কারণ এ মামলার আসামি যে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক ভিপি নুর। তাও আবার যেন-তেন আসামি নন তিনি। ধর্ষিতা তার কাছে বিচার চেয়েছিলেন। নুরও বলেছিলেন বিচার করে দেবেন। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেবেন। এটা করেননি নুর। তাই ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই ধর্ষিতা ফের ধর্ষিত হন একমাস পর। এখানে ধর্ষক আরেকজন। তাও আবার লঞ্চে আরামে-আয়েশে ধর্ষণ করেছে তাকে। এখানেও নুর আসামি। এ নিয়ে দু’টি পৃথক মামলা হয়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে। তখন আসল বিষয় বেরিয়ে আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিপি নুরকে আটক ও নানা নাটকীয় ঘটনা কেন? আর ধর্ষিতা সাত, আট মাস আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর এটা টের পেলেন সাত-আট মাস পর! কোথায় আছি আমরা। ধর্ষিতা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মূল বিষয় যেটা আলোচিত হচ্ছে, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুইজনের সম্মতিতে একান্তে সময় কাটিয়েছেন তারা। হয়তো তাদের ভাবনায় বিয়ের বিষয়টিও ছিল। কিন্তু ছেলেটি প্রতারণা করেছে মেয়েটির সঙ্গে। এ প্রতারণার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। আরো চাউর হয়েছে মেয়েটি ওই ছেলেকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে প্রেমে জড়ান। সেখানেও সম্মতিতে একান্ত সময় কাটান। এখানেও মেয়েটি প্রতারিত হয়েছে। আর তাই ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে আহ্বায়ককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটিও। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়? 

প্রশ্ন হলো- মানুষ কেন লাজ-লজ্জাহীনভাবে অবিবেচকের মতো কাজ করে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। তাহলে মানুষ কি মানুষ নেই! তারা কি আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছে? সে সময় মানুষের লজ্জা ছিল না। দিগম্বর হয়ে থাকতো নারী-পুরুষ। লজ্জা ঢাকতে হবে এমন ভাবনাও ছিল না। বস্তুও ছিল না। ধীরে ধীরে মানুষ লজ্জা উপলব্ধি করতে শিখেছে। গাছের লতা-পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগতে থাকে পৃথিবীতে। এখন মানুষ বিজ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছেছে। আব্রু ঢাকতে কত যে পন্থা এখন। নানা ডিজাইনের, নানা রংয়ের বস্ত্র এখন ঘরে ঘরে। এখন মানুষ আব্রু ঢাকে ঠিকই, কিন্তু লাজ শরম যে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। দুর্নীতি করে একের পর এক বিল্ডিং-বাড়ি করছে। গাড়ি হাঁকাচ্ছে। বড় গলায় আবার বলছে, আমার প্রতিদিনের আয় হাজার হাজার টাকা। কে না জানে, টাকা ছাড়া দেশে কিছু হয় না। কিছু মানুষ আছে টাকার ধান্দায়। একেবারে লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে তারা ধান্দায় নেমে পড়ে। এতে মানুষ মরলে মরুক, তাতে কি? যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে প্রকাশ্যে। গর্ব করে পিতারা বলেন, আমার ছেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে ডায়মন্ডের আংটি পেয়েছে ১১টি, হীরার চেইন, স্বর্ণের চেইন পেয়েছে ২৫টি, প্রাইভেট কারটির রঙ কত সুন্দর। এমন রঙের গাড়ি পাওয়া রেয়ার। আর ফার্নিচার যা দিয়েছে তা রাখবো কোথায় এ নিয়ে ভাবছি। লাজ-লজ্জার মাথা খেয়েছে যেন। হায়রে মানুষ! আসলে মানুষের সংখ্যা দিন দিন সমাজ থেকে কমে যাচ্ছে। মনুষ্যত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। যে কারণে সমাজে বাড়ছে নৈরাজ্য, অনাচার। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কেন পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হচ্ছে? এসব সন্তানকে কী বলে ডাকলে পিতা-মাতারা শান্তি পাবেন। প্রকাশ্যে অবলীলায় নারী সম্ভ্রম হারাচ্ছে। ইভটিজিং হচ্ছে অহরহ। আবার কোনো নারীর মনে পড়ে আট মাস আগে তিনি ধর্ষিত হয়েছিলেন। এসব কিসের আলামত?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status