বাংলারজমিন

কৃষি প্রদর্শনী প্লটে নয়-ছয় বঞ্চিত কৃষকরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের ফসলের প্রদর্শনী প্লটে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রদর্শনী প্লটগুলোতে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা সম্পর্কে কৃষকদের কিছুই জানানো হয় না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। নামমাত্র কিছু বীজ-সার দিয়ে দায় শেষ করেন কৃষি কর্মকর্তারা। প্রদর্শনী প্লটের বেশির ভাগ খরচ বহন করতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় ১২০টি, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ১৫টি, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ১২০টি এবং সাত জেলা প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে রোপা আমন ব্রি-ধান-৭২ এর প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয় রুদ্রকর গ্রামের কৃষক আ. গনি মিয়াকে। স্থানীয় চররোসুন্দি ব্লকের ৩৩ শতাংশ জমিতে এ প্রদর্শনী প্লটটি বাস্তবায়ন করেন তিনি। প্রথমে তাকে ৫ কেজি ব্রি-ধান-৭২ জাতের বীজ প্রদান করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এরপর সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে  ৫ কেজি টিএসপি, ১৫ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি পটাশ, ৫শ’ গ্রাম দস্তা ও ২ কেজি জিপসাম সার ও একটি প্রদর্শনী প্লটের সাইন বোর্ড দেয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের রুদ্রকর ব্লকের কৃষক মো. মোতালেব ব্যাপারীকে একই প্রকল্পের রোপা আমন প্রদর্শনীর বিপরীতে ৫ কেজি টিএসপি, ১২ কেজি ইউরিয়া, ৪ কেজি পটাশ, ২.৫ গ্রাম দস্তা ও ৪ কেজি জিপসাম সার ও একটি প্রদর্শনী প্লটের সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়কারী কৃষকদের অভিযোগ, বন্যার কারণে অফিস থেকে ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নগদ টাকা দিয়ে বিভিন্ন বাজার থেকে ধানের চার কিনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন তারা। এতে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, প্রদর্শনী প্লটের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধার কথা বলে প্রদর্শনী প্লট দেয়। কিন্তু এ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের কি কি সহায়তা আমাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে তা আমাদের জানানো হয় না। অফিসাররা বলেন সার, বীজ, ওষুধ কোনো কোনো প্রকল্পে নগদ টাকাও দেয়া হবে। কিন্তু যে পরিমাণ সার তারা দেন- তাতে কিছুই হয় না। তার চেয়ে দুই-তিনগুন সার আমাদের কিনতে হয়। কোন প্রদর্শনীর জন্য কি দেয়া হবে তার কোনো তালিকাও আমাদের কাছে দেয়া হয় না। তারা যখন যা দেন- তাই নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আমরা বুঝতেও পারি না, আমার প্রকল্পের জন্য কি বরাদ্দ ছিল- আমি পুরোটাই পেলাম না কম পেলাম। যে সাইন বোর্ড সরবরাহ করা হয়, তাতে কৃষককে সরকারের দেয়া সহায়তার বিবরণ থাকে না। তাই আমাদের দাবি প্রকল্পের বরাদ্দ অবশ্যই সকল প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়নকারী কৃষকদের লিখিত আকারে সরবরাহ করতে হবে। যাতে আমরা সবকিছু সম্পর্কে স্পষ্ট জানতে পারি। শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, প্রদর্শনী প্লটে সার, বীজ, ওষুধসহ প্রদর্শনী বাস্তবায়নের সকল খরচ আমরা বহন করি। যদি কোন প্রদর্শনী প্লট বাস্তবায়ন শেষে টাকা উদ্বৃত্ত থাকে তাহলে ওই কৃষককে আমরা ফেরত দেই। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। আমরা কোনো প্রদর্শনীতে নয়-ছয় করি না। শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারী কৃষককে অবশ্যই তার বরাদ্দ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানানো উচিত। এটা ওই কৃষকের অধিকারের মধ্যে পড়ে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কৃষকের অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করবো। আর যদি সরকারি বরাদ্দ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম থেকে থাকে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status