প্রথম পাতা

হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

দেড় বছর ধরে আজিজকে খুঁজছে দুদক

মারুফ কিবরিয়া

২০২০-০৮-১৮

জনতা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলা হওয়ার পর গত বছর থেকেই ‘ফেরারি’ জাজ মাল্টিমিডিয়ার কথিত কর্ণধার আবদুল আজিজ ওরফে এমএ আজিজ। একই সঙ্গে তিনি ক্রিসেন্ট গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানও। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার কোনো হদিস মেলেনি। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) আজিজকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। গ্রেপ্তার না হওয়ায় সংস্থাটির কর্মকর্তারাও নেই স্বস্তিতে। গত দেড় বছরেও তার কোনো হদিস মিলেনি বলে তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করছেন। যদিও সম্প্রতি তিনি হলিউড ছবি বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি না করেও ভুয়া রপ্তানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় অন্যতম প্রধান আসামি রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ। মামলার এজাহারে ক্রিসেন্ট লেদারের বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি ৬৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্রিসেন্ট ট্যানারির বিরুদ্ধে ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার ১২০ টাকা, লেসকো লিমিটেডের ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৯ টাকা, রূপালী কম্পোজিট লেদারের ৪৫৪ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৪ টাকা এবং রিমেক্স ফুটওয়্যারের বিরুদ্ধে ৬৪৮ কোটি ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৪৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
শুধু তাই নয়, জনতা ব্যাংকের টাকা লোপাটের কাণ্ডে জড়িত তার ভাই এমএ কাদেরও। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫টি কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা। এর এক টাকাও পরিশোধ হয়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

এদিকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলার আসামি আবদুল আজিজ দীর্ঘদিন লাপাত্তা থাকলেও সম্প্রতি ফেসবুকে হলিউড সিনেমা বানানোর ঘোষণা দেন।  গত ৩রা আগস্ট ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, তিনটি সিনেমার কাজ করবেন তিনি। ওই পোস্টে আবদুল আজিজ লেখেন, হলিউডের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় তিনটি সিনেমা নির্মাণ করছি। নির্মাণ শেষে হলিউডের ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মাধ্যমে সিনেমাগুলো বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। আমেরিকা যাচ্ছি, তবে আমি একা নই, বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীকে নিয়ে যাচ্ছি। যেমন এমআর-৯ বা মাসুদ রানা সিনেমার জন্য এবিএম সুমনসহ আরো অনেকে। সিনেমাটি ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশাল পরিসরে নির্মিত হতে যাচ্ছে। আশা করি, সিনেমাটি ভালো হবে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সফল হবে।

তিনি আরো লেখেন,  মাসুদ রানা যদি সফল হয়, বাংলাদেশের এবিএম সুমনসহ আরো অনেকেই হলিউডে প্রতিষ্ঠিত হবে। একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে তারা সিনেমা প্রতি মিলিয়ন ডলার (৯ কোটি টাকা প্রায়) পারিশ্রমিক পাবে। এমআর-৯ সিনেমার টাইটেল গান ইংরেজিতেই হয়েছে। একজন বাংলাদেশি মিউজিক কম্পোজারের মাধ্যমেই টাইটেল গান সম্পন্ন হয়েছে। এ গান দিয়েই তিনি হলিউডে পা রাখতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ আমি একা নই, আরো অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ও হলিউডের সঙ্গে একটি ব্রিজ তৈরি করছি, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের চলচ্চিত্র ভাবনার পথ সুগম হয়।

জনতা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা মাথায় নিয়ে আবদুল আজিজ কীভাবে সিনেমা বানানোর ঘোষণা দেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। এমনকি তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ বলছেন দেশে আছেন কেউ বলছেন তিনি এখনও বিদেশেই অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে তার প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও আলিমুল্লাহ খোকনের  সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, আবদুল আজিজ সিনেমা বানানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশের অংশের কাজ আমরা শিগগিরই শুরু করবো। তবে আমেরিকার শুটিং কবে নাগাদ করতে পারবো সেটা বলতে পারছি না। করোনার কারণে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আবদুল আজিজ কোথায় আছেন জানতে চাইলে খোকন মানবজমিনকে আরো বলেন, তিনি দেশেই আছেন। হোয়াটস অ্যাপে তো নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে। ফোনেও পাওয়া যায়। আমাদের সঙ্গে কথা হয়। জনতা ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাজের সঙ্গে ওসবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জাজ আলাদা প্রতিষ্ঠান। এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না আমি। এসব নিয়ে জানতে চেয়ে আবদুল আজিজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তিনি হোয়াটস অ্যাপে সক্রিয় থাকলেও  তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ।
অন্যদিকে দুদকে মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানান যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে মামলা হলেও সংস্থাটি আবদুল আজিজের কোনো হদিস পাচ্ছেন না কর্মকর্তারা। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন দুদকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আজিজকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। তিনি কোথায় আছেন সেটাই খুঁজে বের করা যাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই তার বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি। খুঁজে পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে আজিজকে।

এদিকে এ বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদে দেশের সব ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রকাশিত এসব খেলাপি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ তিনটিই আবদুল আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের। সে তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আবদুল আজিজের প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এছাড়া ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টের কাছে পাওনা ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। একই গ্রুপের রূপালী কম্পোজিটের কাছে ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা পাবে জনতা ব্যাংক। এছাড়া লেক্সকো লিমিটেডের কাছে ৫১৪ কোটি ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের কাছে ২৩১ কোটি টাকা পাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে আবদুল আজিজের পরিবারের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ছিল ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। এ ঋণের পরিমাণ গত ছয় মাসে আরো বড় হয়েছে। ভুয়া রপ্তানিসহ নানা প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এ অর্থ নিয়েছেন তারা।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status