মত-মতান্তর

করোনার দুর্যোগ বছরে কৃষির স্মার্ট  বরাদ্দ বাস্তবায়ন

প্রফেসর ড.মো. সদরুল আমিন

১৩ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

বলা যায়  অফিসকাজ দীর্ঘসময় অচল থাকায় বাজেটের যৌক্তিক বিশেষজ্ঞ ইন্টারেকশন ও  করোনা আক্রান্ত কৃষিখাত বিশ্লেষণ পরিপূর্ণ হয় নাই। মেনে নিতে হবে দেশের বর্তমান কৃষি অবস্থা আমাদের গোচর হচ্ছে তা ইতোমধ্যে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এসব বিবেচনায় বিশ্বের অনেক দেশ চলমান ডাইনামিক বাজেট পদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ পদ্ধতিতে উপস্থিত করোনার আলোকে নেওয়া বাজেটের  কার্যকারিতা  হ্রাস পেলে তা  পুন:বর্ধিত  বরাদ্দের প্রয়োজন হতে পারে।  (এই লেখাটির  রেফারেন্স হল ২টি পূর্বে প্রকাশিত লেখা। প্রথমটি ’ কৃষি নির্ভর অর্থনীতি নয়, কৃষিই এখন অর্থ নির্ভর’ বর্তমান সময়,১৯ নভেম্বর,১৮৮৯ পৃষ্ঠা ১২৪ । দ্বিতীয়টি ’বাজেটের কৃষি বনাম কৃষকের বাজেট, ১৩ জুলাই ১৯৯৩ বাংলা বাজার পত্রিকা, পৃষ্ঠা ১৩৮।)

বাংলাদেশ করোনা কবলিত হওয়ার শুরুতেই মারাত্মক সংকটে পড়ে কৃষক ও কৃষি খাত। নিজে ঘরবন্দী, শ্রমিক নাই, বিপনন বন্ধ, কৃষকের জন্য ক্রয়মূল্যে আগুন ও বিক্রয়মূল্যে পানি। সাথে সাথে আম্ফান, অতিবৃষ্টি ও  ফসল বিনষ্টী দীর্ঘস্থায়ী  হতে থাকলে  রাজ-সেবককর্মীগণ টিভি চ্যানেল সহযোগে দেওলিয়াসম কৃষকের ধান কাটা উদ্বোধন করে দিয়েছিল। ডাকগাড়ী রেলগাড়ী কলা-মূলা গরু-ছাগল টানে। দেশকে এই সমস্যা থেকে বিমুক্ত রাখার অন্যতম উপায় পরিকল্পিত কৃষি প্রোগ্রাম, প্রণীত বাজেট ভিত্তিক। ’বাজেটের কৃষি বনাম কৃষকের বাজেট। সরকার বাজেট করে কৃষককে পণ্যের  মূল্য ও আমদানি তালিকার কথা জানিয়ে দেয় । সে কথা কার্যকর না হওয়ার পরিস্তিতিতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিক বাধ্য হয়ে কৃষি ছেড়ে জেলান্তরী হয়ে শেয়ারে রিক্সা ভ্যান চালায়। জমি বিক্রি করে পাশ্চাত্যে ভূমধ্যসাগরের তলদেশে ভাগ্য খুঁজে। অপরদিকে আমরা যে ভাবে ও যে দিকে যাচ্ছি তাতে কৃষকের উৎপাদন বাজেটের ল্যান্ড, লেবার, ক্যাপিটাল অরগানাইজেশন এর  অন্যতম বলা যায়  কেবল তার জমি টুকু, ল্যান্ড।  ম্যানেজমেন্ট বলতে ’খাটে খাটায় কাঁধে ছাতি ও লো কষ্ট সনাতন টেকনোলজি। সংক্ষেপে এই হল কৃষি বাজেট নিয়ে দেশের পরিস্থিতি। এ অবস্থায় দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কৃষক সাধারণের প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে বাজেট প্রণয়ন ও অংশীদারী ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান কৃষি বাজেটে ৮-১০টি উপখাতে যেভাবে বিশেষণ শব্দ যেমন প্রণোদনা, উদ্দীপনা, লোন- প্যাকেজ, ভর্তুকি, দুর্যোগ ও ত্রাণ সহায়তা, অনুদান, সীড মানি, উপহার, ইত্যাদি   শব্দগুলো যুক্ত ও ব্যবহার  করা হয়েছে তাতে বাজেট কে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তা অনির্দিষ্টই থেকে গেল। কৃষষেকের প্রণোদনা বাজেট এখনো ”করা হবে” পর্যায়ে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যের সারমর্মে ’ইয়াহাইয়ু ইয়াকাইয়ুম...... বলে দেশকে মহান সৃষ্টিকর্তার হাতে সঁপে দিয়ে বিদেশে। এদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত পাঁচ হাজার টাকা (যা এখনো কেবিনেটের রা¯তায়) কোটি টাকার লোন প্যাকেজে মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, ফুল-ছাঁদ, রপ্তানিমূখী পণ্য প্রক্রিয়াকরণ কাজ সমন্বয় করার পরামর্শ দিয়েছেন, যা যথেষ্ট জটিলতার মধ্যে রয়েছে।

  দেশের প্রয়োজন ও সরকারের আগ্রহ থাকার পরও গুড এগ্রিকালচারার প্র্যাক্টিস বা (এঅচ) গ্যাপ সার্টিফিকের অভাবে আমসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি ব্যাহত। এবছরও তা হবেনা। আগামী কয়েকমাসে করোনা আমাদের কৃষি জীবিকাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা বিবেচনায়   নিয়ে বলা যায়  সামনে সুদিন পরাহত।   প্রাণীসম্পদ খামারীর চামড়া আয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করুণাপ্রার্থী । ইতিমধ্যে হাজার হাজার কৃষক সন্তানের শহুরে পড়াশুনা কমে গেছে। বর্তমান করোনাক্রান্ত ক্রমবিধ্বস্ত উন্নয়ন ঝুঁকির চলমান অবস্থায় বর্তমান বাজেটে সিস্টেমিক সমস্যা রয়ে গেছে। কৃষক উদ্বৃত্ত হতে থাকা অব্যাহত থাকবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ ঘোষণা দিয়ে দেদারসে আমদানী চলছে (ইতিমধ্যে ৩ লাখ টন)। আমদানী পণ্যের মূল্য বাড়ছে। সমাজধার্মিক ও শোভিজ-ভ্রমণ, ক্রীড়া, হোটেল-রেস্তুরা ও মেলা-পার্বন সেকেন্ডারী শিল্প-সেবা কাজ থেকে অনেক শ্রমিক কৃষিতে ঠাঁই খুজছে, জমি বর্গা পত্তনীতে পরিবর্তন আসছে।  এজন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনা প্রভাব আমলে নিয়ে দেশের বাজেটকে  বাস্তবতার আলোকে প্রকৃত বরাদ্দ বাড়াতে হবে । বিগত বছরের ৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা বাজেটের কত অংশ কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা জানতে হবে। চলতি বাজেটের সরকার প্রধান প্রতিশ্রুত ৫ হাজার কোটি টাকার আশংকিত ব্যত্যয় ঘটলে তা কিভাবে সামলানো হবে তাও এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঘোষণা দিতে হবে ঘাটতি বাজেট সমন্বয় করতে বৃহত্তর কৃষি খাতের কোন বরাদ্দ কমানো হবেনা। করোনা পরিস্থিতিতে সভা না ডেকে কিভাবে হাজার হাজার কৃষি ও কৃষক প্রশিক্ষণ কাজ সমাধা করা হবে পরিকল্পনা ও ব্যয় বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে হবে   । এজন্য প্রশিক্ষণের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। এধরনের সুচিন্তিত কাজ সমাধা করার পরই বলতে পারা যাবে  দেশ সঠিক ও সৎ পথে চলছে, যা ডাইনামিক বাজেটের স্মার্ট পদ্ধতিতে সম্ভব। বলা যায় দেশকে আন্তরিকভাবে সত্য ও সঠিক পথে চালাতে বর্তমান মূল কৃষি বাজেটকে এখনই অন্তত: দ্বিগুণ করতে হবে। নয়ত দেশের আমদানীর আমলা ও ব্যবসায়ীর বেপারোয়া ছক্কা-পাঞ্জা খেলায় শেষ পর্যন্ত সরকারের কল্যাণী আন্তরিকতা ধূসর হয়ে যাবে।

মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে এখন   ’ কৃষি নির্ভর অর্থনীতি নয়, কৃষিই এখন অর্থ নির্ভর’ দেশের কৃষি এপর্যন্ত যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছে তাতে সরকারি অর্থানুকূল্য ব্যতীত কৃষি অচল।  বাজেটের কৃষি বনাম কৃষকের বাজেট। আমাদের দেশে এখন কৃষকের কোন বাজেট নাই। সরকারের বাজেটের টাকায় কৃষি চলবে; যেমন গার্মেন্টস, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প, ক্রীড়া, সংস্কৃতি,সহ অন্যান্য খাত চালানোর উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। এটাকেই দেশের স্মার্ট বাজেট পদ্ধতি বলে। 

 

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status