প্রথম পাতা

সরকারি শিশু পরিবারের শিশুদের প্রধানমন্ত্রী

আমি আছি তোমাদের পাশে

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন কখনো নিজেদের অসহায় মনে না করে, কারণ তিনি সব সময় তাদের পাশেই আছেন। গতকাল মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৫০ হাজার বার কোরআন খতম এবং জাতির পিতার ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা মনে রাখবে তোমরা একেবারে একা না। আমি আছি তোমাদের পাশে। আমি, আমার ছোটবোন সব সময় তোমাদের কথা চিন্তা করি। সরকার প্রধান বলেন, তোমরা ছোটবেলা থেকে তোমাদের বাবা-মা’কে দেখতে পাওনি। অনেকে পিতাকে পাওনি, বা মা’কে পাওনি। আবার অনেকে কাউকেই পাওনি। কারো আদর, স্নেহ, ভালোবাসা সেটা যে কি জিনিস, সেটা তোমরা উপলব্ধি করতেই পারোনি। নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্মদিন ঘটা করে পালন না করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু বড় করে কোনো দাওয়াত খাওয়াই না, পার্টিও করি না। আমরা চাই খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গায় জন্মদিনের উৎসবটা তোমাদের মতো শিশুদের নিয়ে করতে। সেখানে আমরা যতটুকু পারি, বেছে বেছে মিষ্টি পাঠাই, খাবার পাঠাই। কারণ আমরা উপলব্ধি করি, বাইরে কোনো পার্টি করে তো লাভ নেই। আমরা যদি এতিমদের মুখে কিছু খাবার তুলে দিতে পারি, সেটাই সব থেকে বড়। এবং সেভাবেই আমরা করে যাচ্ছি। আমার মাও তাই করতেন। আমাদের সকলের জন্মদিনে তিনি এতিমখানাতেই খাবার পাঠাতেন এবং সাহায্য পাঠাতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এইটুকুই বলবো, তোমরা এতিম না। তোমরা অসহায় না। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সরকারে আসার পর থেকেই আমরা সকলের পাশে আছি। আমি যতক্ষণ আছি, তোমাদের পাশেই থাকবো। কারণ তোমরাই আমার আপনজন, সব থেকে আপন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারি শিশু পরিবারের শিশুরা কোরআন খতম দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তোমাদের জন্য আমি দোয়া করি। তোমাদের জীবন সুন্দর হোক, সফল হোক। তোমাদের মধ্যে অনেক মেধাবী আছ, যারা একদিন এই দেশের জন্য অনেক বড় কাজ করতে পারবে, মানুষের জন্য অনেক কিছু করতে পারবে। সেইভাবেই নিজেদের গড়ে তোলার উপদেশ দিয়ে শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা নিয়ে কাজ করবে, কারণ সততা একটা বড় শক্তি আর দেশের জন্য তোমরা যদি নিজেদের তৈরি কর, তাহলে তুমি দেখবে বড় হয়ে বহু এতিমকে তুমি সাহায্য করতে পারবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে পারবে, তাদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারবে। এতিম ও আপনহারা মানুষদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। শিশুদের তিনি বলেন, তোমরা মন দিয়ে পড়াশোনা কর, নিজের পায়ে দাঁড়াও। বাবা-মা তো আর চিরদিন থাকে না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকের বুলেটে জীবন দিতে হয়েছে, সেই স্বপ্ন পূরণে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে তিনি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমরা কি সহ্য করে আছি শুধু একটা চিন্তা করে যে এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান। কাজেই আমার যতটুকু সাধ্য, সেইটুকু আমরা করে দিয়ে যাব যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে (বঙ্গবন্ধু) যারা হত্যা করেছে, তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই শক্তি দিয়েছেন আমাদের। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে দিয়ে তাদেরকে বিচার করতে পেরেছি। এতে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি। আওয়ামী লীগকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রেখে দেশসেবার সুযোগ করে দেয়ায় দেশের মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, যারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনকে, যারা সব সময় আমার পাশে থেকে আমাকে শক্তি জুগিয়েছে, একটা পরিবারের মতো আমি পেয়েছি। নিজের মায়ের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব মাত্র তিন বছর বয়সে তার মাকে হারিয়েছিলেন এবং মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার পিতাকে হারান। ছিলেন দাদার কাছে। ৭ বছর বয়সে দাদাও মারা যান। আমার দাদি আমার মাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। এতিমদের কষ্ট কেমন, তা নিজে উপলব্ধি করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই কষ্টটা আমরা বুঝি। এই কষ্টটা আরো বুঝলাম ১৫ই আগস্ট। একদিন সকালে উঠে যখন শুনলাম আমাদের কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খুনিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য এবং কিছু উচ্চপদস্থ ছিল, যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শেখ হাসিনা বলেন, আমার ছোট্ট ভাইটি, আমি এখনো এই প্রশ্নের উত্তর পাই না, তার মাত্র ১০ বছর বয়স। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল সে একদিন সেনাবাহিনীতেই যোগদান করবে। আর নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস, তাকে এই সেনাবাহিনীর সদস্যরাই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করলো। তার অপরাধ কী জানা নেই আমার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাবা-মায়ের লাশও দেখতে পাইনি। কবরও জিয়ারত করতে পারিনি। দেশে আসতেও পারিনি। এভাবে আমাদের বাইরে পড়ে থাকতে হয়েছিল। এতিম হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হয়ে থাকার কি কষ্ট, এটা যারা আমাদের মতো ছিল তারা জানে। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই আমার চেষ্টা ছিল যে এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কিছু করে যাব। সেটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষার জন্য তৎকালীন সরকারের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আজ একটা হত্যাকাণ্ড হলে সবাই বিচার চাইতে পারে, মামলা করতে পারে। আমরা ১৫ই আগস্ট যারা আপনজন হারিয়েছিলাম, আমাদের কারো মামলা করবার বা বিচার চাইবার অধিকার ছিল না। সেই অধিকার আদায়ের পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাদেরকে বিভিন্ন দেশ-বিদেশে চাকরি দেয়া হয়েছিল। তারা পুরস্কৃত হয়েছিল এই খুন করবার জন্য। নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী, প্রেসিডেন্ট হত্যাকারী- তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, সেই অবস্থার পরিবর্তন তিনি আনতে চেয়েছেন। দেশের সব মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, ন্যায়পরায়ণতা যেন সৃষ্টি হয়, প্রত্যেক মানুষের যেন অধিকার থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রান্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ উদ্দিন খান খসরু এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status