প্রথম পাতা

অনুমতি নিয়েই টেকনাফ গিয়েছিলেন সিনহা

আল-আমিন

১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা তার ইউটিউব চ্যানেল ‘জাস্ট গো’-এর শুটিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই টেকনাফে গিয়েছিলেন। যাতে তার কাজে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো বাধা দিতে না পারে। এ ছাড়াও তার চ্যানেলের বৈধ অনুমতির নথিরও সন্ধান পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। সিনহা এবং তার সফরসঙ্গীরা যখন টেকনাফের মারিশবুনিয়ার টুইন্যা পাহাড়ে যান তখন তিনি অন্ধকারে টর্চ লাইট দিয়ে আলো জ্বালিয়েছিলেন।

এসময় পুলিশের তিন সোর্স যারা পরে পুলিশের সাক্ষী হিসেবে মামলায় এজাহারভুক্ত হয়েছিলেন সেই আয়াজ উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন ও নুরুল আমিন সিনহা সহ তার সফরসঙ্গীদের সেই পাহাড়ে দেখেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা বাহাড়ছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকতকে ফোন দেন। তারা ওই এলাকায় পুলিশের প্রথাগত ও চুক্তিতে নিয়োজিত সোর্স ছিলেন। এলাকাবাসী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছে যে, তারা পুলিশের সোর্স হলেও নিজেরাই ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল।

বড় বড় ইয়াবা কারবারিদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। নিরীহ লোকজনকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তারা চাঁদাবাজিতে লিপ্ত ছিল। এই তিন সাক্ষীকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এ ছাড়াও এই তিন সাক্ষীর সঙ্গে আর কারও যোগাযোগ আছে কিনা তা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে দেখছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জানিয়েছিল যে, সিনহার গাড়ি থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই উদ্ধার নিয়েও সন্দেহ আছে তদন্তকারীদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিয়াকত মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের ব্যাপার নিয়ে চুপ ছিলেন। জানা গেছে, লিয়াকত  টেকনাফ থানার মালখানা থেকে ইয়াবা ও মদ নিয়ে গিয়ে সিনহার গাড়ি থেকে উদ্ধার দেখিয়েছিলেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ওসি প্রদীপ লবণ পাচারের  সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন।  টেকনাফে লবণ পাচারের বড় সিন্ডিকেট ছিল। তারা পাশের দেশ মিয়ানমারে লবণ পাচার করতো। তার পাচারকারীদের সঙ্গে সখ্য ছিল। প্রদীপের কল রেকর্ডে লবণ চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের নম্বর পাওয়া গেছে। তার এই পাচার কাজে টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকার শামসুল এবং রাকিব নামে দুইজন জড়িত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তারা দুইজন টেকনাফ থানার দালাল বলে পরিচিত। পুলিশের হয়ে বড় ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা এবং ক্রসফায়ার বাণিজ্যে তারা লিপ্ত ছিল বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মামলার মূল তিন আসামি প্রদীপ, লিয়াকত ও এসআই নন্দলালকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদসহ পর্যায়ক্রমে আরো ৪ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মাঠ পর্যায়ের তদন্ত এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের রিমান্ডে আনা হবে।

ইতিমধ্যে তাদের রিমান্ডের আদেশ পাওয়া গেছে। গত ৩১শে জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। তিনি তল্লাশিতে বাধা দিয়েছিলেন বলে পুলিশ দাবি করে। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলার এসপি বলেন, সিনহা বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তার কাছ থেকে ইয়াবা ও পিস্তল পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সহ ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ মানবজমিনকে জানান, ‘আসামিদের রিমান্ডে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status