শেষের পাতা

‘অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এমপিদের থোক বরাদ্দ’

সংসদ রিপোর্টার

১৩ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নের জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি বছর ৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বরাদ্দ স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা, নির্বাচনে ভোট নিশ্চিত করার চেষ্টা ও অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া এ সংক্রান্ত প্রকল্পে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, জবাবদিহিতার অভাব, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার অকার্যকরতা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি, অন্যের লাইসেন্স ব্যবহার, ট্যাক্স ফাঁকি, আঞ্চলিক গোষ্ঠীর প্রভাব, কার্যাদেশ বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক অস্বচ্ছতা এবং বাস্তবায়িত প্রকল্পের নিম্নমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থোক বরাদ্দে নেয়া প্রকল্পের কার্যকর তদারকি, প্রকল্পের সার্বিক মূল্যায়ন এবং সংসদ সদস্যের সততা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধির অনুপস্থিতি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে উৎসাহিত করছে। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৩৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকা সংশ্লিষ্ট ১৬টি ও ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন ছাড়া ২৮৪টি সংসদীয় আসনের সদস্যদের প্রতিবছর এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য ৫ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই থোক বরাদ্দ পাওয়া ৫০টি আসনে এই গবেষণা চালানো হয়। ২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ; ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের ইচ্ছানুযায়ী কাজ নির্বাচন ও বাস্তবায়ন হওয়ার কারণে স্কিমের সম্ভাব্যতা যাচাই, কারিগরি ও আর্থিক বিশেষণের সুযোগের অনুপস্থিতি বিদ্যমান এবং বাস্তবায়নের সময় অর্থ অপচয়ের ঝুঁকিসহ কাজের স্থায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে পল্লী এলাকার উন্নয়নের জন্য এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবেদনও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় ও মাঠ পর্যায়ে দুইটি প্রকল্পের কিছু স্কিমের সরজমিন পর্যবেক্ষণ করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে স্কিম বাস্তবায়নের কাজে চ্যালেঞ্জ ও অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। তবে আইএমইডি ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত এ সংক্রান্ত কোনো প্রকল্পেরই পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করেনি।
প্রতিবেদনে ওই সকল প্রকল্পে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করতে টিআইবি ৯ দফা সুপারিশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত থোক বরাদ্দের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পৃথকভাবে নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করে সেগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ করতে হবে ও কার্যকরতা বৃদ্ধির সুযোগগুলোর বিস্তারিত বিবরণ তৈরি করতে হবে। সেই তথ্য পরবর্তী প্রকল্প পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে হবে। প্রকল্পের আইনি কাঠামো বা নীতিমালা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। যেখানে স্কিম নির্বাচন প্রক্রিয়া, ভৌগোলিক অবস্থান এবং উপযোগিতা অনুযায়ী স্কিমের নকশাসহ এলাকা ও চাহিদা ভেদে বরাদ্দ বণ্টনের পূর্বশর্ত এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের অধীনে স্কিম পরিকল্পনা ও তালিকাভুক্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট আসনের ভৌগোলিক অবস্থান এবং উপযোগিতা অনুযায়ী তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। স্কিম তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে এলাকার জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সমন্বয় কমিটিতে স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। সিদ্ধান্ত  গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস করতে হবে। স্কিম এলাকায় কাজ চলাকালীন তথ্যবোর্ড স্থাপন করে স্কিমের বিবরণ, বাজেট, সময়সীমা, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের নাম ও যোগাযোগের নম্বর তুলে ধরতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক শুদ্ধাচার চর্চার পাশাপাশি দুর্নীতির প্রবণতা ও সুযোগ হ্রাস করার জন্য কার্যকর জবাবদিহি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে ধারাবাহিকভাবে কার্যকর তদারকি ব্যবস্থা (কমিউনিটি মনিটরিং) প্রবর্তন করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status