শেষের পাতা

পুলিশের নজরদারিতে ভেস্তে যায় জঙ্গিদের ছক

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৩ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে সিলেট হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে বোমা হামলা চালাতে পারেনি নব্য জেএমবি’র জঙ্গিরা। হামলার পরিকল্পনা করে ‘ছক’ সাজালেও শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটে। গত ২৩শে জুলাই তারা ওই হামলা চালাতে চেয়েছিলো। গ্রেপ্তার হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত নব্য জেএমবির সাংগঠনিক প্রধান নাইমুজ্জামান সহ ৫ জনই পুলিশের কাউন্টার অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসি ইউনিটের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে। তবে ঢাকার পল্টন ও নওগাঁর সাপাহারে তারা সফল হয়েছে। তারা
 জানিয়েছে, এসব বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিল আইএসের নজরকাড়া। সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা ৫ জঙ্গিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পর ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসির প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। ঈদের আগে ঢাকার পল্টনে পুলিশের মোটরসাইকেলে বোমা রাখার দায়ে ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, নব্য জেএমবি’র সামরিক গ্রুপের জঙ্গিরা সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে অবস্থান নিয়েছিলো। তাদের টার্গেট ছিল সিলেটের ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার। নিজেদের অবস্থান জানান এবং দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে তারা মাজারে হামলার পরিকল্পনা করেছিলো। তার আগে থেকেই তারা সিলেটে ‘সংঘবদ্ধ’ হতে শুরু করে। তাদের নেতৃত্ব ছিল নব্য জেএমবি’র সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান নাইমুজ্জামান। ১০-১২ জনের একটি টিম কয়েক মাস ধরে সিলেটে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করে। এর অংশ হিসেবে তারা সিলেট নগরীর টিলাগড়ের শাহভিলায় কোচিং সেন্টারের নামে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। প্রায় দুই মাস আগে তারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেও কার্যক্রম শুরু করেনি। এসব ঘটনা জানার পর গত রোববার থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট। দক্ষিণ সুরমা থেকে তারা দুইজনকে গ্রেপ্তার করার পর অভিযান চালায় নব্য জেএমবি’র সিলেট অঞ্চলের প্রধান নাইমুজ্জামানের মিরাবাজারের উদ্দীপন আবাসিক এলাকার ৫১ নম্বর বাসায়। সোমবার ভোররাতে প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযানে তারা গ্রেপ্তার করে নাইমুজ্জামানকে। নাইমুজ্জামান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ থেকে গত বছর অনার্স পাস করেছে। এরপর নগরীর পীর মহল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে সাদিক নামের আরো একজনকে। পুলিশ জানায়, অভিযানকালে তারা নব্য জেএমবি’র আঞ্চলিক প্রধান নাইমুজ্জামান ছাড়া মদন মোহন কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র সায়েম মীর্জা, রুবেল আহমদ, সানাউল হক সাদিক ও প্রাইভেট কার চালক আব্দুর রহিম জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সানাউল হক সাদিক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও হামলার পরিকল্পনায় রেন্ট এ কার চালক জুয়েল সম্পৃক্ত ছিল। তার গাড়িতে করেই তারা হামলার ছক করেছিলো এবং যাতায়াত করতো। এদিকে  রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার  ভোররাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের সিলেটেই রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিটিটিসির সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা গ্রেপ্তারকৃত সানাউল হক সাদিককে নিয়ে নগরীর পীর মহল্লায় অভিযান চালায়। এ সময় পীর মহল্লার বাসা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আপ্তাব হোসেন খান। তিনি জানিয়েছেন, অভিযানের সময় তার সামনেই সাদিক জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে। পুলিশ তার কথা মতোই বাসা থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও ডিভাইস উদ্ধার করে। এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ  গ্রেপ্তারকৃত নাইমুজ্জামান ও সায়েম মীর্জাকে নিয়ে নগরীর টিলাগড়ের ৩ নম্বর রুটের শাহ ভিলায় অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও সামদ আলী। বাসার মালিক সামদ আলী পুলিশের কাছে আটক থাকা নাইমুজ্জামান ও সায়েমকে চিনেছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া নাইমুজ্জামান ও সায়েম কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার খুলতে তার কাছ থেকে দুই মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেয়। তবে তারা সেখানে কার্যক্রম শুরু করেনি। নির্ধারিত সময়ে এসে তারা ভাড়া দিয়ে যেতো। তিনি জানান, রাতে পুলিশ তাকে নিয়ে এসে ওই বাসায় তল্লাশি চালালেও কিছুই পায়নি। এ সময় নাইমুজ্জামান ও সায়েম পুলিশকে জানিয়েছে, জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে তারা এই বাসা ভাড়া নিয়েছিলো। সিলেটের দুটি বাসায় অভিযানের পর রাতেই গ্রেপ্তারকৃত নাইমুজ্জামান সহ ৫ জনকে নিয়ে সিটিটিসির সদস্যরা ঢাকায় চলে যান। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনকে নিয়ে ঢাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সিটিটিসি টিমের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিলেটে নজরদারির কারণে ব্যর্থ হয় জঙ্গিরা। এরপর তারা ২৪শে জুলাই পল্টনের চেকপোস্টের পাশে এবং সাপাহার এলাকার মন্দিরে বোমা হামলা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জেএমবি’র সামরিক শাখার সদস্য বলে স্বীকার করেছে।  গ্রেপ্তারকৃত নাইমুজ্জামান জেএমবি’র শূরা সদস্য বলে জানান তিনি। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোর্তিময় সরকার মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটের পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে জঙ্গিরা দরগাহে হামলা চালাতে পারেনি। সিলেটের পুলিশ সক্রিয় ছিল। জঙ্গি তৎপরতায় কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status