বিশ্বজমিন

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম

কে এই কমলা হ্যারিস

মানবজমিন ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ৩:০৮ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম। প্রথমবারের মতো ব্লাক-ইন্ডিয়ান আমেরিকান বা কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে জোরালো প্রার্থী করা হয়েছে সিনেটর কমলা হ্যারিসকে (৫৫)। তিনি এবার ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী ছিলেন। প্রথমে তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও পরে মিইয়ে যান। সরে দাঁড়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে। কিন্তু তাকে আবার হোয়াইট হাউজে প্রশাসনিক সঙ্গী বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিলেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। ফলে আগামী ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে এখন মুখোমুখি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট। অন্যপক্ষে লড়বেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস।

কে এই কমলা হ্যারিস
তিনি একজন আমেরিকান রাজনীতিক ও আইনজীবী। ডেমোক্রেট দলের সদস্য। ২০১৭ সাল থেকে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বুধবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করেন জো বাইডেন। সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সহ সারা বিশ্বে আলোচনায় নতুন করে উঠে আসেন তিনি। তাকে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় একাধিক রিপোর্ট প্রকাশ হতে থাকে। এই নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রার্থিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ, তিনিই প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান এবং একই সঙ্গে ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কারণ তার মা ভারতীয়। পিতা আফ্রিকান। এ ছাড়া তিনিই প্রথম সাউথ এশিয়ান আমেরিকান হিসেবে ডেমোক্রেটের মতো বিশাল রাজনৈতিক দলের হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হচ্ছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণা করে জো বাইডেন তার সমর্থকদের বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সেরা ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রাথমিক প্রচারণায় ভাল জায়গা করে নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ক্যালিফোর্নিয়ার এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমলা।

রাজনৈতিক যাত্রা
ক্যালিফোর্নিয়ায় এটর্নি জেনারেল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ার পর ২০১৬ সালের নভেম্বরে কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটর পদে নির্বাচন করেন এবং পরাজিত করেন লরেটা সানচেজকে। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার তৃতীয় নারী সিনেটর হন। একই সঙ্গে এর মধ্য দিয়ে তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান নারী এবং প্রথম সাউথ এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে সিনেটে দায়িত্ব পালন করেন।
সিনেটর হিসেবে তিনি স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংস্কারকে সমর্থন করেন। অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্বের জন্য ড্রিম অ্যাক্টের পক্ষে অবস্থান নেন। অ্যাসল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিল তার অবস্থান। একই সঙ্গে প্রগতির পক্ষে ট্যাক্স সংস্কারের সমর্থক ছিলেন। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ডেমোক্রেট দল থেকে প্রচারণা চালান। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ফ্রন্টরানার হয়ে ওঠেন। কিন্তু পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবের কথা বলে প্রচারণা থেকে সরে যান। কিন্তু মজার বিষয় হলো, তিনি ডেমোক্রেট দলের প্রার্থীদের প্রথম বিতর্কের সময় মুখোমুখি হয়েছিলেন জো বাইডেনের। সেখানে তিনি বাইডেনের  কড়া সমালোচনা করেন। সেই বাইডেনই এবার তাকে বেছে নিলেন রানিংমেট হিসেবে।
প্রেসিডেন্সিয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার ৯ মাস পরে কমলা হ্যারিসের সামনে এই চমক নিয়ে এলেন জো বাইডেন। এর ফলে তিনি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বড় রাজনৈতিক দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তৃতীয় নারী প্রার্থী। এর আগে এমন প্রার্থী করা হয়েছিল জেরাল্ডিন ফেরারো এবং সারাহ প্যালিনকে।

আইনজীবী কমলা হ্যারিস
হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি এন্ড দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, হ্যাস্টিংস কলেজ অব দ্য ল থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন কমলা হ্যারিস। ১৯৯০ সালে তিনি বার পাস করেন। এরপরই তিনি আলমেডা কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির অফিসে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর তাকে কাজ দেয়া হয় সান ফ্রান্সিসকো ডিস্ট্রিক্ট এটর্নির অফিসে। সেখান থেকে সান ফ্রান্সিসকো সিটি এটর্নির অফিসে। ওকল্যান্ডে সহকারি ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কমলা হ্যারিস দৃষ্টি দেন যৌন অপরাধের দিকে। আলমেডাতে তিনি টিনেজ পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালান। ২০০৩ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর ২৭তম ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে অল্প ভোটের ব্যবধানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে এটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচিত হন। ক্রাইম বিরোধী নীতির কারণে তিনি ব্যাপক সমালোচনা সয়েছেন।

আফ্রিকান-ভারতীয় মিশ্রণ
কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। তার মা দক্ষিণ ভারতের একজন তামিল নারী। পিতা জ্যামাইকান। কমলা নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে মনে করেন। তবে মাঝে মধ্যে তিনি তার ভারতীয় শিকড়ের কথা বলে ফেলেন। যেমন চেন্নাই সফরের কথা স্মরণ করেন। তার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে তিনি কোনো এক গ্রীষ্মে সময় কাটিয়েছেন- সে কথা বলেন। তিনি বলেন, তার নানা ভারত সরকারের একজন কর্মচারী ছিলেন। তার মার নাম শ্যামলা গোপালান। তিনি স্তন ক্যান্সারের একজন গবেষক ছিলেন। তিনি ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান ইউসি বার্কলিতে এন্ডোক্রাইনোলজিতে ডক্টরেট করতে। সেখানেই তার পরিচয় হয় জ্যামাইকান ডনাল্ড হ্যারিসের সঙ্গে। তিনি তখন অর্থনীতি নিয়ে পড়ছিলেন।
কমলা হ্যারিসের একটি বোন আছে। তার নাম মায়া হ্যারিস। তিনিও একজন রাজনৈতিক কর্মী। হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারণার সময় তিনি তার সঙ্গে কাজ করেছেন। দুই বোনকে তার মা-ই মূলত দেখাশোনা করে বড় করেছেন। কারণ, কমলা হ্যারিসের বয়স যখন মাত্র ৭ বছর তখন তার পিতামাতার বিচ্ছেদ হয়। এরপর ২০০৯ সালে তার মা মারা যান।
কমলা হ্যারিস বেড়ে উঠেছেন ওকল্যান্ড এবং বার্কলির মধ্যে। কখনো সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিমে। আবার কয়েক বছর মন্ট্রিলে, সেখানে তার মা শিক্ষকতা করতেন।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status