শেষের পাতা

বন্ধুকে খুন করে জানাজা-দাফনে কিশোর হাসান

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

হাসানুল হক হাসান (১৫) ও রাসেল (১৪) দুই বন্ধু। রাসেল স্কুলছাত্র, হাসান ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী। এর মধ্যে হাসান একটু কর্তৃত্ববাদি। কথা কাটাকাটির ক্ষোভ থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানার পশ্চিম জালালাবাদ শাকবাজারুসংলগ্ন একটি নির্জন পাহাড়ে রাসেলকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে খুন করে হাসান। পুলিশ রাসেলের মরদেহ উদ্ধারের পর জানাজা-দাফনেও অংশ নেয় হাসান। সেখানে বন্ধুর মরদেহের খাট জড়িয়ে কান্নাকাটিও করে। যা থেকে সন্দেহ পুলিশের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ আরো বাড়ে। ফলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয় খুলশী থানা পুলিশ। আর তাতে রাসেল হত্যার কথা স্বীকার করে হাসান। শুক্রবার সকালে এমন তথ্য জানালেন, চট্টগ্রাম মহানগর খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী। তিনি বলেন, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর হাসান তার বন্ধু রাসেলকে হত্যার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সে। তাকে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, গত ৩১শে জুলাই ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয় রাসেল। তারপর সে আর বাসায় ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে তার বাবা হুমায়ুন কবির খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ঘটনা তদন্তে নেমে সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের খুলশী থানার পশ্চিম জালালাবাদ শাকবাজার সংলগ্ন একটি পাহাড় থেকে রাসেলের পঁচা গলা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার রাসেলের জানাজা-দাফনে অংশ নেয় হাসান। সেখানে রাসেলের মরদেহের খাট জড়িয়ে কান্নাকাটি করে সে। যা সন্দেহজনক। সন্দেহ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় হাসানকে। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। ফলে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। রাতে জিজ্ঞাসাবাদে সে কিশোর রাসেল হত্যার ঘটনায় নিজের সমপৃক্ততার তথ্য জানায়। এরপর জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য তাকে আদালতে নেয়া হয়। পুলিশ জানায়, জবানবন্দিতে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর হাসান বলেছে, নিহত রাসেল ও সে বন্ধু। পাশাপাশি বাসা। সেই সুবাদে প্রায়ই আড্ডা দেয় তারা। কিছুদিন আগে একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির জেরে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর স্কুলপড়ুয়া রাসেলকে খুনের ফন্দি আঁটে। সে মতে একদিন রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে ছুরি কেনে হাসান। পরে রাসেলকে ডেকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে তাকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিশোর হাসান। পরে সে ফিরে এসে তার রক্তমাখা পোশাক পরিবর্তন করে ঘুমিয়ে পড়ে। রাসেলের লাশ উদ্ধারের পর সে বন্ধুর জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে। শোকার্ত মনে বন্ধুর জানাজা ও দাফন-কাফনেও অংশ নেয়। রাসেল জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির বালুরপাড় প্রিন্সের কলোনির হুমায়ুন কবিরের ছেলে। স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া আদর্শ বিদ্যানিকেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত রাসেল।
বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) পরিত্রাণ তালুকদার বলেন, রাসেলের লাশ উদ্ধার করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই কিশোর অপরাধী হাসান সার্বক্ষণিক ছিল। তার কোনো কর্মকান্ডে সে কাউকে বুঝতে দেয়নি যে সেই রাসেল কে খুন করেছিল। এসব থেকে বুঝাই যায় খুনী হাসান একজন ঠান্ডা মাথার খুনী অপরাধী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status