শেষের পাতা

সিলেটে করোনার দাপট, মারা গেলেন ১৫১ জন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

সিলেটে করোনা নিয়ে আগের মতো আর ‘আতঙ্ক’ নেই। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকেই। চার মাস পর স্বাভাবিক হয়েছে সিলেট নগর। ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে জীবন যাত্রায়। ঈদের পর ঘরবন্দি মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য ছুটে যাচ্ছে পর্যটন এলাকায়। সবকিছু স্বাভাবিক হলেও সিলেটে মহামারি করোনাভাইরাসের দাপট কমছে না। মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২ জন। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫১ জন। আইসিইউতেও লড়াই করছেন অনেক রোগী। তবে- আতঙ্ক কমে যাওয়ায় মৃত্যুর হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। উপসর্গ নিয়ে কতজন মারা গেছেন তার কোনো হিসাব নেই। এই সংখ্যা দুই থেকে আড়াই শতাধিক হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের হিসেব মতে- সিলেট বিভাগে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে সিলেট জেলায়ই এর সংখ্যা বেশি। সিলেট জেলায় ১১১ জন রোগী করোনাভাইরাসে মারা গেছেন। এছাড়া- সুনামগঞ্জে ১৬, হবিগঞ্জে ১১ এবং মৌলভীবাজারে ১৩ জন মারা গেছেন। করোনায় সিলেটে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয় গরিবের ডাক্তার বলে পরিচিত ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যু। তার মৃত্যুর ঘটনা গোটা সিলেটের মানুষকে নাড়া দেয়। সিলেটে মানুষ করোনা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। শুরুতেই টার্গেটে ছিলেন প্রবাসীরা। সিলেটের আকাশপথ খোলা ছিলো। লন্ডন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন বহাল রাখতে কঠোর হয় সিলেটের প্রশাসন। এই অবস্থায় অনেক প্রবাসী দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রবাসীদের দ্বারা সিলেটে করোনা সংক্রমের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলেনি। আকাশ পথ বন্ধ হওয়ার পরও সিলেটে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি। শুরুতেই দেশের মধ্যে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো বেশি। এসব এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ চলে আসে সিলেটে। বৈশাখে হাওরে ধান কাটতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক প্রবেশ করে সিলেটে। মূলত সিলেটের বাইরে থেকে লোকজনের কারনে এপ্রিলের শেষ দিকে সিলেট বিভাগে ব্যাপকহারে ছড়াতে শুরু করে করোনা। আক্রান্ত হতে শুরু করেন পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। সেই সঙ্গে শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল। আতঙ্কের কারণে বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের দরোজা বন্ধ করে দেয়। এতে করে বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালের দরোজায় ঘুরে ঘুরে অনেকেই মৃত্যু বরণ করেন। তবে- একটি মৃত্যু সিলেটের মানুষকে নাড়া দেয় ব্যাপক ভাবে। সিলেটবাসীর প্রিয়জন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। লন্ডন থেকে ফিরে কোয়ারেন্টিনের পর করোনায় বন্দি থাকা মানুষের সেবায় কাজ শুরু করেন। দলীয় কর্মকাণ্ডেও হন সরব। ঈদুল ফিতরের পরপরই করোনায় আক্রান্ত হন তার স্ত্রী আসমা কামরান। এরপরই ৫ই জুন তিনি নিজেও আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালে এবং পরে তাকে নেয়া হয় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ই জুন মারা যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার মৃত্যুতে এখনো শোকাহত সিলেট। কামরানের মৃত্যুর পর সিলেটে করোনা নিয়ে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরেক প্রবীণ নেতা এমএ হক। তিনি বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ছিলেন। সিলেট বিএনপি’র অভিভাবক ছিলেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর তার রিপোর্ট আসে পজিটিভ। এছাড়া- সিলেটের সিনিয়র চিকিৎসক গোপাল শঙ্কর দে সহ অনেকেই করোনার কাছে হার মেনে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। এই মৃত্যুর মিছিল এখনো চলমান। তবে- আগের চেয়ে কমেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন- সিলেটে করোনায় মৃত্যু কমাতে হাসপাতালে অবিরাম লড়াই করছেন চিকিৎসকরা। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার কারণে সিলেটে হাসপাতালে আসা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কম। সিলেটের  কোভিড হাসপাতাল শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। এদিকে- সিলেটে করোনার দাপট কমছে না। করোনার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী বেড়েছে ১০৬ জন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৯৭ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৪৭৫ জন, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৫৫০, হবিগঞ্জে ১ হাজার ২২৬ এবং মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৪৬ জন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।  অন্যদিকে, সিলেট বিভাগের ৩ হাজার ৭৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১ হাজার ১৫৫, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ১৮৯, হবিগঞ্জে ৭৯৪ ও মৌলভীবাজারে ৬২৮ জন রোগী করোনা জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। আর করোনাভাইরাসের উপসর্গ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ১৮৬ জন। এরমধ্যে ১৩৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আর বাকিরা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কমছে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যা। সিলেট বিভাগে মোট কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫২৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৩৬০ জন, সুনামগঞ্জে ৮৮ জন, হবিগঞ্জে ৪২ জন, ও মৌলভীবাজারে ৩৩ জন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status