শেষের পাতা

রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ কামালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম

স্টাফ রিপোর্টার

৬ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক  শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী গতকাল পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে নানা আয়োজন করা হয়। ১৯৪৯ সালের ৫ই আগস্ট শেখ কামাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালোরাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের হাতে তিনিও নির্মমভাবে নিহত হন। শেখ কামাল স্মরণে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ কামাল যদি বেঁচে থাকতো, সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অডিটোরিয়ামে শেখ কামালের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর ভার্চ্যুয়াল ওই আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, শেখ কামালের যে বহুমুখী প্রতিভা ছিল তা বিকশিত হয়ে সব অঙ্গনে ভূমিকা রাখতে পারতো। সে সেটা রেখেও গেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সে ভূমিকা আছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রতিটি আন্দোলনে সে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যোগ দিয়ে আয়োজনের শুরুতে তিনি শেখ কামালের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। কামাল আজ আমাদের মাঝে নেই। ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট বাবা, মা, ভাই, আত্মীয়-পরিজনসহ ঘাতকের নির্মম আঘাতে সে শাহাদাত বরণ করেছে। ছোট ভাই সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এই মাসে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে পরিবারের সবাইকে হারাতে হয়েছে। অদ্ভুত বিষয় হলো আগস্টের ৫ই তারিখে শেখ কামালের জন্মদিন। আর আমার মায়ের জন্মদিন ৮ই আগস্ট। শেখ কামাল আমার থেকে দুই বছরের ছোট। কিন্তু তার সবকিছুতে পরিণতি বোধ ছিল, তার মেধা বহুমুখী ছিল। একদিকে যেমন ক্রীড়া সংগঠক। সাংস্কৃতিক জগতেও তার প্রতিভা রয়েছে। স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। ঢাকা থিয়েটার যখন হয়, নিজেও অভিনয় করতো। গান গাইতো, সেতার বাজাতো। খেলাধুলাতে তার সবচেয়ে বড় অবদান। ধানমণ্ডি এলাকায় তরুণ ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সে-ই উদ্যোগ নেয়। আবাহনীকে আরো শক্তিশালী করে। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। শাহীন স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। সেখান থেকে অনার্স পাস করে, মাস্টার্স পরীক্ষা দেয়। তারপর ১৫ই আগস্ট ঘটে। তার স্ত্রী সুলতানা কামালও একই সঙ্গে পাস করে। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছে। সুলতানা কামাল ভাইভা দিতে পারেনি। ভাইভা দেয়ার আগে এই জগৎ ছেড়ে চলে যায়। শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে তার ছিল সাহসী ভূমিকা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। ২৫শে মার্চে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিতে ব্যস্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়, দেরাদুনে ট্রেনিং নেয়। সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশও নেয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবাহনীর প্রতি তার অন্যরকম আকর্ষণ ছিল। ১৯৭৫-এর ৩০শে জুলাই জার্মানির উদ্দেশে রওনা হই আমি ও রেহানা। তখন তার বিয়ে হয়েছে, নতুন বৌ। যাওয়ার আগে কামালকে বলি। তোমার জন্য কী নিয়ে আসবো? ও ডায়েরি এগিয়ে দিয়ে বললো, অ্যাডিডাস বুট নিয়ে আসবা খেলোয়াড়দের জন্য। নিজের জন্য কোনো দিন কিছু চাইতো না। লেখাপড়া খেলাধুলা নাট্যচর্চা উপস্থিত বক্তৃতা-প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখতো। শৈশবে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য কম পেয়েছেন শেখ কামাল। শেখ হাসিনা সেই প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, আব্বা তো বেশির ভাগ সময় জেলে থাকতেন। শেখ কামালের জন্ম নেয়ার পর থেকে বেশির ভাগ সময় জেলখানায় ছিলেন। আমরা তো আব্বাকে আব্বা বলে ডাকার সুযোগ পাইনি। আমরা একসঙ্গে যখন খেলতাম, আমি আব্বা বলে ডাকতাম। তখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করতো, হাসু আপা তোমার আব্বাকে আব্বা বলে ডাকি। তিনি আরো বলেন, দেশের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য বাঙালি জাতির জন্য আমার বাবা সারাজীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমরা ভাইবোনেরা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের মা আগলে রাখতেন। ছোটবেলা থেকে কামাল শুধু খেলাধুলা নয়, সাংসারিক কাজেও মায়ের সঙ্গে সহযোগিতা করে গেছে। আজকে কামাল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সৃষ্টি আবাহনী ক্লাব এখনো আছে। খুশি হয়েছি-স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীকে নতুন রূপে দেখে। ১৫ই আগস্ট পরবর্তী ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। দেশে ফিরতে পারিনি, ফিরতে বাধা দেয়া হয়েছে। যখন ফিরলাম, মামলা করতে পারিনি। মামলা করার আইনগত অধিকার ছিল না। আইন করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ২১ বছর পর সরকারে এসে তারপর মামলা করে বিচার করি। কত বছর লেগে গিয়েছিল এই বিচার করতে। যখন আমি সরকার গঠন করেছি। তারপর আইন বাতিল করতে সক্ষম হয়েছি। তারপর বিচার হয়েছে। জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করছি। কৃতজ্ঞতা জনগণের কাছে, তারা দেশসেবা করার সুযোগ দিয়েছে। অন্যায় অবিচার তার প্রতিকার করার ও হত্যার বিচার করার সুযোগ পেয়েছি। দিনের পর দিন আমাদের কাঁদতে হয়েছে। একসঙ্গে খেলাধুলা, চলাফেরা, ঝগড়া। দুই ভাইবোন কাছাকাছি ছিলাম। ওদের ছেড়ে থাকতে হবে। তা ভাবতেই পারিনি। ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন: এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন। নগরীর ধানমণ্ডির আবাহনী লিমিটেডে ক্রীড়া কমপ্লেক্সে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে গতকাল সকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক ও মির্জা আজম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, শেখ কামালের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এ ছাড়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, আবাহনী ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পরিচালকবৃন্দ, আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠী, আবাহনী কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়বৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠন শেখ কামালের সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পৃথকভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status