অনলাইন

বিএনপি ইচ্ছা করেই আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে

স্টাফ রিপোর্টার

১ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ৬:৩৩ পূর্বাহ্ন

এলডিপি প্রেসিডেন্ট ড. অলি আহমদ মনে করেন দেশে ১২ বছর যাবৎ কোন রাজনীতি নেই। বিএনপি ইচ্ছা করেই আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। এখন নির্বাচন হলে জাতীয়তাবাদী শক্তি পাবে ৯০ ভাগ আসন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। জামায়াত এখন আর স্বাধীনতা বিরোধী দল নয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক মনির হায়দায়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কর্নেল (অব.) অলি তার খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করেছেন। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আমরা এখানে উপস্থাপন করছি।

মনির: বর্তমানে দেশে কোন রাজনীতি নেই। সে কারনেই চুপ চাপ আছেন নাকি নিজ থেকেই রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বিরতিতে আছেন?
অলি: বর্তমানে না। বিগত প্রায় ১০/১২ বছর বাংলাদেশে কোন রাজনীতি নেই। রাজতন্ত্রে যারা আছে তারাও ভাল আছে। যারা কম্যুনিজমে আছে তারাও আমাদের থেকে ভাল আছে। পাকিস্তান আমল  এর থেকে কয়েক হাজারগুন ভাল ছিল। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মানুষ গালাগালি করে কিন্তু আইয়ুব খানের সময় মানুষকে ঘরে থেকে নিয়ে হত্যা করে নাই। গুম করে নাই। বা রাস্তায় মিছিল করা, মিটিং করা বন্ধ ছিল না। কিন্তু আমি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহ করেছি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে। বঙ্গভবনে ১৬ই ডিসেম্বর এবং ২৬ শে মার্চ আমার দাওয়াত নাই। রাষ্ট্রীয় কোন ফাংশনে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়না।  সর্বপ্রথম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলাম। পুরস্কার হলো এখন- ঘরে বসে থাকতে হবে।
মনির: তো তাহলে আমাদের এই যে লাখ লাখ মানুষের জীবন, আপনাদের এত ত্যাগ, লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জত এগুলোর বিনিময়ে যে রাষ্ট্র তৈরি হলো সেই রাষ্ট্র থেকে আমরা কি পেলাম? আপনারাই বা কি পেলেন? আপনাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমরা বা আমাদের পরের প্রজন্ম কি পাবে?
অলি: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআন শরিফে বলেছেন, ধৈর্য ধারণ করো। তিনি হচ্ছেন সবচেয়ে শেষ বিচারক। আমি মার্চ মাসে বলেছিলাম গজব আসতেছে অপেক্ষা করেন। গজব শুধু বাংলাদেশে না। বিশ্বব্যাপী এসেছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় গজব শুরু হয়েছে সেটা হলো ফ্লাড। এবং ভুয়া সনদ দেয়া- বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধংস করা। জুয়া, মদ সবগুলো একসাথে একত্র হয়েছে।
মনির: তাহলে আপনার কাছে প্রশ্ন যে বাংলাদেশে আপনি সহ আপনারা যারা বিরোধী রাজনীতিক, তারা এখন নিতান্তই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিম্বা সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে কোন একটা সমাধান আসবে সেদিকেই তাকিয়ে থাকা…

অলি: মানুষেরতো সবসময় ঈমান ঠিক রাখতে হবে। আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তুমি তোমার পক্ষ থেকে চেষ্টা করো। আল্লাহর পক্ষ থেকে সমাধান সবসময় এসেছে। এখনো আসবে। আগামীতেও আসবে। এটা থেকে যদি আমরা বিচ্যুত হই তাহলে বেঈমান হয়ে যাব।
মনির: আপনাদের কি চেষ্টা এখন আছে?
অলি: আমাদের চেষ্টাটা হলো নিয়ম নীতি মেনে, আইনশৃঙ্খলা মেনে যতদূর সম্ভব জনগণকে অবহিত করা দেশে কি হচ্ছে না হচ্ছে। রিলিফের চাল কিভাবে চুরি হচ্ছে। ওষুধ কিভাবে চুরি করে বিক্রি করছে। বাংলাদেশ কিভাবে চলছে। বড় বড় প্রজেক্টগুলোতে কিভাবে দুর্নীতি হচ্ছে…
মনির: না, না এগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমি যদি আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করি যে পৃথিবীর কোন দেশে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বা নিয়মশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা মেনে স্বৈরশাসন বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হয়েছে?
অলি: এখানেও হয়তো জনগণ বাধ্য হবে বাহির হতে । এখনতো মাত্র ফ্লাড শুরু হলো। আগেতো জীবন নিয়ে ছিল এখন খাদ্য নিয়ে সংকট শুরু হবে। তারপর অর্থনৈতিক সংকট শুরু হবে। তিনটা সংকটের মুখোমুখি হতে হবে বর্তমান সরকারকে। করোনা ভাইরাস, ফ্লাড এবং অর্থনৈতিক সংকট।
মনির: কিন্তু আমরাতো বরাবরই দেখতে পাচ্ছি যে এই ধরণের কোন দুর্যোগ বা সংকট সেটা ক্ষমতাশীনদের সে অর্থে অতটা স্পর্শ করেনা, করোনা ভাইরাস বলেন বন্যা বলেন বা আরও যে সমস্ত দুর্যোগ এগুলো সাধারণ মানুষকেই বেশি আক্রান্ত করে বা ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অলি: তখনই সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে। সরকার আত্মসমর্পণ করবে।
মনির: আচ্ছা। ঠিক আছে সে আশা আপনারা করছেন। আপনি… ব্যক্তিগতভাবে আমরা আপনাকে যতদিন দেখেছি , আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি একজন তেজস্বী বা প্রতিবাদী মানুষ হিসেবেই অতীতে আপনাকে দেখা গেছে। কিন্তু আজকাল আপনাকে আর আপনার তরফ থেকে সেরকম কোন প্রতিবাদ, প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তার মানে কি দেশে এখন কোন অন্যায় অত্যাচার, জুলুম নাই নাকি না আপনার চরিত্রের বদল ঘটেছে?
অলি: না এটা ঠিক না। গত চার মাস আমি ৫ টা স্টেটমেন্ট করেছি। করোনা ভাইরাস কিভাবে কন্ট্রোল করবে, সর্বপ্রথম স্টেটমেন্ট আমার পক্ষ থেকে গিয়েছে।তখন আমি বলেছিলাম ইমারজেন্সি ডিক্লেয়ার করেন অথবা কারফিউ দেন। কারফিউ দিয়ে সবাইকে ১৫ দিনের জন্য ঘরে ঢুকিয়ে দেন। ১৫ দিনের মধ্যে সেটেল্ডডাউন হয়ে যাবে। যারা মারা যাওয়ার তারা মারা যাবে। যাদের চিকিৎসা পাওয়ার কথা তারা চিকিৎসা পাবে। যারা সুস্থ থাকার কথা তারা সুস্থ থাকবে। সংক্রমণটা ব্যাপ্তি ঘটবেনা।
মনির: না এগুলোতো ছিল আপনার পরামর্শ। পরামর্শতো সরকার শুনছেনা আর কখনোই আমরা তা দেখি.. বিশেষ করে আপনারা যারা বিরোধী রাজনীতি করেন। পরামর্শ দিয়ে কি কোন লাভ আছে?
অলি: না, লাভ থাক আর না থাক । আমার একটা ঈমানি দায়িত্ব রয়েছে। জনগণকে অবহিত করা এবং সরকার, অবৈধ সরকার হলেও যেহেতু তারা চেয়ারে বসে আছে তাদেরকে পরামর্শ দেয়া।
মনির: মুল প্রশ্নটা ছিল প্রতিবাদের। পরামর্শ আর প্রতিবাদতো এক হলো না।
অলি: প্রতিবাদ আমি করছি। প্রতিবাদ আমার বন্ধ হয়নাই। আমারটাতো বড় পার্টি না। আমি যদি মনে করি, আমি বড় হইতে পারি কিন্তু আমার পার্টি বড় না।
মনির: না, কিন্তু আপনার পার্টি কেন বড় না এই প্রশ্ন যদি করি যখন এই পার্টির সুচনা করেন আমরা দেখেছি যে আপনি একটা খুব চমক দেখানো কাজ করেছিলেন যে আপনার সাবেক দল আপনি যে দল ছেড়ে এসেছেন সে দলের অনেক, কয়েকজন সংসদ সদস্য , কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী আপনার সঙ্গে এসে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিল এই দল করার। আবার অন্যদিকে দেখলাম সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী তিনি তার দল বিলুপ্ত করে দিয়ে এসে আপনার দলে যুক্ত হলেন। বা আপনারা দু’জন এক হয়ে গেলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার দেখা গেল তিনি আবার তার আগের জায়গায় চলে গেলেন। আগের দল নিয়ে। আপনার সঙ্গে যে সমস্ত সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রীরা এসেছিলেন তাদেরকেও আর ওইভাবে দেখা যায়না। এই যে বড় সূচনা আবার ছোট হয়ে গেল কিনা!
অলি: না, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ পারসেন্ট ইন্তেকাল করেছেন। আমার সাথে যে ৩২ জন আসছিল তাদের মধ্যে এখন জীবিত আছেন মাত্র ৪ জন।
মনির: ও তাই! তার মানে আপনার এখানে যারা এসেছিল আগের বিএনপি থেকে তাদের মধ্যে ৩২ জনের মধ্যে ২৮ জনই মারা গেছেন?
অলি: ২৮ জনই মারা গেছে। তাছাড়া পলিটিক্যাল পরিবেশ না থাকাতে নতুনভাবে লোক নেয়ার, রিক্রুট করার বা গ্রামে গঞ্জে গিয়ে মিটিং করা, জনগণকে দলের কথা বলা, দেশের কথা বলা, সমস্যাগুলো বলা এগুলোতো আর সম্ভব হচ্ছেনা। বিশেষ করে করোনা আসার পরে আমার কাছে প্রায় গত ৪ মাসে ৫/৬ হাজার লোক যোগদান করেছে। তাদেরকে নিয়ে মিটিং করার কথা ছিল। এখন সম্ভব হচ্ছেনা । করোনার কারণে।
মনির: না। এখনতো সেটা সম্ভব না হওয়ারই কথা। ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে আপনি, আপনার দু’জনের পথ এক জায়গায় এসে মিলল আবার দু’জনের পথ দুদিকে কিভাবে চলে গেল?
অলি: এটা নিয়ে আমি বলতে চাচ্ছিনা। তিনি একজন সম্মানিত ডাক্তার। ভাল ডাক্তার দেশের। আমি উনাকে অনুরোধ করেছি আপনি আপনার পুরনো পার্টিতে চলে যান।
মনির: ও আপনি উনাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন?
অলি: উনাকে অনুরোধ করেছি পুরান পার্টিতে চলে যান…।
মনির: ও আচ্ছা। আমরা যতটুকু জানি যখন বিএনপি সৃষ্টি হয় , বিএনপি দল তৈরি হয় তখন এই দলে তাকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আপনার একটা ভুমিকা ছিল।
অলি: ১০০% ভূমিকা ছিল। তিনি আমার ডাক্তারে প্রোগ্রাম করতেন, ভাল ভাল কথা বলতেন সুতরাং তার সেই কথাগুলো ব্যবহার করার জন্যই প্রেসিডেন্ট জিয়াকে আমি অনুরোধ করেছিলাম , উনি ভাল ভাল কথা বলেন, জনগণের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, রাজনৈতিক একটা ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। উনার আব্বাও ছিলেন রাজনীতিতে সুতরাং তাকে আমরা নতুন পার্টি করলে সেটাতে ব্যবহার করা যাবে। এখন থেকে যদি মন্ত্রীসভাতে নিয়ে আসা হয় তাহলে তাকে ঐভাবে প্রস্তুত করা যাবে।
মনির: আপনি যখন বিএনপিতে ছিলেন তখন আমরা দেখেছি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আপনার ধীরে ধীরে মতদ্বৈধতা যখন শুরু হলো সেটার মূলে ছিল চট্টগ্রামের একটি আসন যেটা আপনার দ্বিতীয় আসন হিসেবে বিবেচিত হতো সেখানে জামায়াতের একজন প্রার্থীকে প্রার্থীতা ছেড়ে দেয়া, বা আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয়া তো সেই ইস্যুতে আপনি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তারপরতো আপনি একটা পর্যায়ে বিএনপি ছেড়ে চলেই গেলেন। আজ এত বছর এসে দেখা যাচ্ছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার প্রস্তাব উঠছে। এই ব্যাপারটা কি বিএনপির একার? নাকি জামায়াততো একটা জোটের অংশীদার যে জোটে আপনার দলও আছে । এটা কি জোটগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার নাকি বিএনপি দল হিসেবে একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে আমরা জামায়াতকে সঙ্গে রাখবো অথবা রাখবো না…

অলি: জামায়াত বিএনপির সাথে ছিলো আমাদের অনেক আগে থেকেই। নাইন্টি সিক্স এর পরে যখন চার দলীয় ঐক্যজোট গঠন হয় জামায়াত তখন থেকেই বিএনপির সাথে ছিল। দীর্ঘদিনের বিএনপির সাথী। তখন কিন্তু জামায়াতের বিরুদ্ধে শুধু আমিই কথা বলেছি। বিএনপির কেউ কথা বলে নাই। এখন আমি জামায়াতকে সমর্থন করি কারণ জামায়াতে এখন কোন রাজাকার নাই।
মনির: আচ্ছা…
অলি: জামায়েত যারা আছে তারা সবাই বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে, এবং বাংলাদেশ জিন্দাবাদে বিশ্বাস করে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কোন আপত্তি থাকার কথা না। এখন বিএনপি কেন তাদের চায় বা চায় না এই ব্যাপারে আমার মন্তব্য করাটাও ঠিক হবেনা। কারণ আমি যেহেতু বিএনপির সাথে দলের সদস্য নই, বিশদলীয় ঐক্যজোটের সাথে আছি , জোটগতভাবে জামায়াত থাকবে কি থাকবেনা এই ব্যাপারে কোন আলাপ আলোচনা হয়নি। আমি একাধিকবার বলেছি এখন যারা জামায়াতে আছে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী নয়, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নয়, তাদের অনেকেরই জন্ম হয়েছে ১৯৬৫ সালের পরে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ থাকার কথা না। শুধু নাম জামায়াত থাকবে এজন্য তাদের ঘৃণা করবো এটা কিন্তু ধর্মে শিক্ষা দেয় নাই।
মনির- তার মানে… জামায়াত যখন দায় ছিলো, বোঝা ছিল তখন বিএনপি সেই বোঝা টেনেছে। কিন্তু এখন যখন জামায়াত আপনার দৃষ্টিতে অনেকটাই নির্দোষ একটা সংগঠন বা দল সেই সময়ে বিএনপি জামায়াতকে ছেড়ে দিতে চাইছে এর কারণটাতো আপনি বললেন আপনার জানা নেই…

অলি: আমার জানা নেই। কারণ আমার সাথে কোন আলাপ হয়নাই এ ব্যাপারে।
মনির: আপনি এবং আপনার দল এলডিপি এখন পর্যন্ত বিশ দলীয় জোটের শরিক কিন্তু বিগত নির্বাচন যেটি রাতের ভোট হিসেবে এরইমধ্যে ব্যাপকভাবে চিহ্নিত সেই নির্বাচনে বিশ দলীয় জোটের বাইরে আরেকটা জোট হয় । সেটার নাম হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাতে আপনার কোন ভূমিকা বা অংশগ্রহণ দেখা যায়নি এবং সে সময়ে আপনার বক্তব্যও অতটা পরিষ্কারভাবে আসেনি।
অলি: খুব স্পষ্টভাবেই ছিলো। আমাকেও ঐক্যজোটে নেয়ার জন্য আমার ঘরে এসেছিলো ব্যারিস্টার মইনুল  হোসেন সাহেব। উনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন যে ডক্টর কামাল হোসেন হবে এক নম্বরে, দুই নম্বরে বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং আমার অবস্থান হবে। আমরা দুজনেই সেকেন্ডম্যান হিসেবে কাজ করবো। তখন উনাকে আমি অনুরোধ করেছিলাম এই জোটে আমি যাবো না। কারণ ডক্টর কামাল হোসেন সাহেব খুবই ভাললোক, ভদ্রলোক। পৃথিবীর একজন প্রসিদ্ধ  আইনজীবী। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেননি। সুতরাং তার নেতৃত্বে যে সফলতা আসবে এটা আমি বিশ্বাস করিনা। এবং পরবর্তীতে আপনারা, সবাই দেখেছে, পৃথিবীর জনগণ সবাই দেখেছে কোন মিটিংয়ে তিনি জিয়াউর রহমানের কথা বলেন নাই বেগম জিয়ার কথা বলেন নাই। বঙ্গবন্ধুর কথা বলছেন । জয় বাংলার কথা বলছেন। জয় বাংলা দিয়ে শুরু করেছেন। জয় বাংলা দিয়ে শেষ করেছেন। আমার মনে হয় এই জোটটা হয়েছিল বিএনপিকে ইলেকশনে আনার জন্য এবং বিএনপিকে একটা শাস্তি দেয়ার জন্য। যেটা হয়েছে পরে।
মনির : তাহলে কি ঐক্যফ্রন্ট নামের যে জোট হয়েছিল এই জোট দ্বারা বিএনপি প্রতারিত হয়েছে?

অলি: বিএনপি চরমভাবে প্রতারিত হয়েছে। শুধু প্রতারিত হয়েছে বললে শব্দটা সঠিক হবেনা।
মনির: এবং বিএনপি এখনো সেটা বুঝতে পারছে না!
অলি: ঠিক আমি বলতে পারবো না। কারণ বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে অনেকের সাথে আমার কথা হয়নাই। নির্বাচনের পরে তাদের সাথে কোন মিটিংয়ে আমি বসিনাই।
মনির: ও বিশ দলীয় জোটের এখন পর্যন্ত কোন মিটিং হয়নি নির্বাচনের পরে …
অলি: না, মিটিং হয়েছে। দুইটা মিটিং হয়েছে গত দেড় বছরে, পৌনে দুই বছরে । কিন্তু সেই মিটিংগুলোতে আমি যাইনি। কারণ বেগম জিয়া না থাকলে সেখানে আমি কার নেতৃত্বে গিয়ে মিটিং এ বসবো। আর আমার জায়গাটাতো স্পষ্ট না। আমি যে কোন জায়গায় আছি নির্বাচনের আগে কখনো বলা হয়েছে আমাকে প্রধান সমন্বয়কারী। তারপরের মিটিংয়ে বলা হলো সমন্বয়কারী। তারপরের মিটিংয়ে বলা হলো মুখপাত্র। তারপরে কোন পাত্রেই নাই।
মনিরঃ তাহলে বিশ দলীয় জোট কি সক্রিয় আছে এখনো ?
অলি- আমি বলবো না এটা সক্রিয় আছে। কারণ যতগুলো প্রোগ্রাম হয়েছে বিএনপি এককভাবে করেছে। ভার্চুয়াল একটা মিটিং এর মাধ্যমে … যেমন বাজেট হয়েছে। উচিৎ ছিলো একটা মিটিং করে মিটিংয়ের পরে বাজেটের উপর বক্তব্য রাখা। কিন্তু বিএনপি এককভাবে বাজেটের উপর প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। পরে হঠাৎ বোধহয় তাদের কেউ দৃষ্টিতে এনেছে এটা ভুল হয়েছে । বিশদলীয় ঐক্যজোটকে একসাথে করে একটা প্রেস কনফারেন্স করলে ভাল হবে। তখন আমাকে টেলিফোন করলো জনাব নজরুল ইসলাম- যে আপনাদের সাথে, আমরা একসাথে বসতে চাই। আমি … অবশ্যই বসবেন ওইরকম লোক যদি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে আমিও অংশগ্রহণ করবো। কিন্তু আমি যদি দেখি বিলো স্ট্যান্ডার্ড লোক অংশগ্রহণ করছে আমি তাদের সাথে গিয়ে নিজের মান ইজ্জত নষ্ট করতে যাবো না। সুতরাং ঐ মিটিংয়ে আমি মাইকের সামনে বসার পরও উইথড্রো করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
মনিরঃ তাহলে কি আপনার দল এখনো কি বিশদলীয় জোটে আছে?
অলি: হ্যাঁ আছে।
মনির: আপনারা থাকতে চান এভাবেই?
অলি: যতদিন সম্ভব। আমাদের যে থাকতে হবে বাধ্যতামূলক… আমি কারো চাকরি করিনা। দেশের জনগণের যেটা ভাল হবে সেটাই করবো।
মনির- না নিশ্চয়। কিন্তু বিশদলীয় জোটের এই মুহূর্তে নেতা কে? প্রধান নেতা কে?
অলি- আপনিতো একজন প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ছিলেন বাংলাদেশে। এখনতো দূরে আছেন, আমেরিকা আছেন… এখনতো আপনি নিশ্চয় জানেন, স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে নির্দেশ দেয় সেভাবেই দল চলে। বেগম জিয়ার পক্ষে এটা সম্ভব না। তিনি এখন প্যারোলে আছেন। প্যারোলে থাকা অবস্থায়তো তিনি রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। কিছু সমস্যাতো আছেই।
মনির- তাহলে আপনাদের বিশদলীয় জোটের নেতা তারেক রহমান?
অলি: আমি নিজেই জানিনা। কারণ আমি যেহেতু মিটিংয়ে যাইনা। অনেক মিটিংয়ে আমার মহাসচিবও যায় নাই।
মনির: তাহলে এই থাকার অর্থ কি? আপনিও যান না আপনার মহাসচিব যায়না। তাহলে এই জোটে থাকা…
অলি- আরেকজনকে পাঠাই। ঐ স্তরের আরেকজনকে পাঠাই। যে স্তরের লোক ওখানে থাকে সে স্তরের লোক ওখানে পাঠাই।
মনিরঃ তাহলে এই থাকা না থাকার পার্থক্যটা কি?
অলি: খুব একটা বেশি নাই।
মনির: বিশ দলীয় জোটে এখন কয়টা দল আছে?
অলি- নামে বিশ দল। একজন একজন করে আরও ৩ টা দলকে নেয়া হইছে ওদের আর দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই।
মনির: তাহলে এটাকে বিশ দল কেন বলা হয়?
অলি: এটা বোধয় তাদের খুব পছন্দ হয়। যারা নাম দিয়েছিল সেজন্য।
মনির: অনেক প্রশ্ন এবং বিতর্ক থাকলেও দেশে কিন্তু একটা পার্লামেন্ট এক্টিভ আছে। সক্রিয় আছে। এবং এটা সত্য, এবং সেই পার্লামেন্টে বিএনপিও আছে। তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার একজন অংশীদার বা একজন উদ্যেক্তা হিসেবে পার্লামেন্টে বিএনপির এই অবস্থানকে আপনি কিভাবে দেখেন?
অলি- আমি মনে করি এটা জনগণের সাথে প্রতারণা।

মনির: কারা করেছে এই প্রতারণা?
অলি : যারা সংসদে গিয়েছে তারা। যারা তাদেরকে যেতে বলেছে তারা। কারণ যেখানে জনগণ ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারেনাই । রাত্রিবেলা ভোট হয়েছে। পৃথিবীতে কোনখানে হয়না। আগের দিন সন্ধ্যা সাতটার পরে থেকে নিয়ে রাত ১ টার মধ্যে ভোট শেষ। রাস্তার সাথে কয়েকটা সেন্টারে পঞ্চাশ পারসেন্ট বা ত্রিশ পারসেন্ট ভোট রেখেছে। কেউ যদি পায় সর্বোমোট হয়তো দশ বারো হাজার, পনের হাজার ভোট পাবে এভাবেই ব্যালট পেপারগুলো রাখা হয়েছিল।
অত্যান্ত সুপরিকল্পিত ভাবে। সুতরাং ঐ ধরণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে… এটা সরকারের তাদেরকে যদি একদম অনুদান হিসেবে না দেয় তাহলে তাদেরতো নির্বাচিত হওয়ার কথা না।

মনির: আমার প্রশ্নটা ছিল যে বিএনপি দেশে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো এবং কোন সন্দেহ নাই দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। সেই দল সংসদে এখন তৃতীয় বৃহত্তম দল। আপনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। এই ব্যাপারটা আপনার কাছে কেমন লাগে?
অলি: অত্যান্ত দুঃখজনক। বিএনপির কখনো ক্ষমতা থেকে যাওয়ার কথা না। কারণ জাতীয়তাবাদীর পক্ষে বাংলাদেশের মেজরিটি লোক টিল টুডে। এখনও পর্যন্ত যদি নির্বাচন হয় জাতীয়তাবাদী শক্তি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ৯০% ভোট পাবে জাতীয়তাবাদী শক্তি। বিএনপি ইচ্ছা করেই দিয়ে দিয়েছে। কারণ কতগুলো ষড়যন্ত্রকারীকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া তখন টের পায়নাই এই ষড়যন্ত্রকারীরা কি কাজ করতে পারে। যারা জ্বি হুজুর করে রাজনীতি করে তারা কিন্তু ষড়যন্ত্রে শামিল থাকে।

মনির- আপনি বলছেন বিএনপি ইচ্ছে করেই আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে?
অলি: আমার মনে হয় এটা ইচ্ছে করেই দিয়েছে। কারণ আমি এজন্যই বলতেছি আপনি সবসময় দেখবেন যে সমস্ত লোক সামনে কথা বলে বা একটু মেজাজ গরম তারা কিন্তু সৎ লোক। এবং সত্যবাদী লোক। যারা মিন মিন করে কথা বলে মুখের ভেতরে শব্দগুলো রাখে এগুলো কিন্তু বদমাস।

মনির: আপনি বলেছেন যে এই মুহূর্তে একটা ফেয়ায় ইলেকশন হলে ৯০ ভাগ ভোট জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে যাবে। এটা ৯০ ভাগ হোক কিম্বা ৭০ ভাগ হোক এই জাতীয়তাবাদীদের নেতা কে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে?
অলি: নেতা ছাড়াও ইন্ডিভিজুয়ালি যারা ভাল ভাল লোক দাঁড়াবে তারা নির্বাচিত হয়ে আসবে।
মনির: না, আমি সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না। আমি বলছি এই বিপুল সংখ্যক জাতীয়তাবাদী মানুষ বাংলাদেশে আছে সমর্থক এদের নেতৃত্বটা কোথায়? নেতা কে এদের?
অলি: যথা সময়েই বের হয়ে আসবে। কোন সময় কোন জায়গা খালি থাকেনা।
মনির: তার মানে এই মুহূর্তে কোন নেতা নেই জাতীয়তাবাদীর আপনি তাই বলতে চাইছেন?
অলি: অবশ্যই আছে। তারা অবস্থান নিয়ে আছে। আমি যেভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে ক্ষমতা থাকা অবস্থায় আপনাদেরকে ইন্টারভিউ দিয়েছি ২০০৩, ২০০৪ সালে এটা কোন বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য নয়। বিএনপিকে সাবধান করে দেয়ার জন্য। সঠিক পথে আনার জন্য। কিন্তু বিএনপি সেটা ভুল বুঝেছে। বিএনপি মনে করেছে আমি তাদের শত্রু। আমার ইচ্ছা ছিল যে আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করুক। ভুলটা কোথায়? আমি তাদেরকে দেখায় দিতাম। তাহলে ২০০৬ সালে ‘ইয়েসউদ্দিনের’ মত লোককে রাষ্ট্রপতি করা উচিত ছিল না। রাষ্ট্রপতি করা উচিৎ ছিলো একজন গারটসওয়ালা(অস্পষ্ট) লোক, পার্টসওয়ালা লোক। এই ভদ্রলোকের না পার্টস ছিল না গাটস ছিল। এই ধরণের ভেজিটেবলওয়ালা একটা লোককে যদি রাষ্ট্রপতি করা হয় তো বিএনপির ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। তিনি সব কাপড় চোপর নিয়ে বঙ্গভবন থেকে পালায় গেছেন।

মনির: আমরা… এটা অনেক বড় বিষয়। আপনার সঙ্গে আমার খুবই ইচ্ছে রইলো যে এই সাবজেক্টের উপর আরেকদিন কথা বলবো। আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status