বাংলারজমিন

ব্যস্ত সময় পার করছে কামার শিল্পীরা

এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)

৩১ জুলাই ২০২০, শুক্রবার, ৮:১৪ পূর্বাহ্ন

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে তত ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে ঘাটাইলের লৌহ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কামারদের। বিশেষ করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় লৌহ শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলাটির পাকুটিয়া গ্রামসহ ঘাটাইলের প্রতিটি ইউনিয়ন গ্রাম ও অলিগলি। এক সময় সারা পৃথিবীর মধ্যে পাওয়ার টিলারের (লাঙ্গলের) ফাল আবিষ্কার করে সারা দুনিয়াজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল পাকুটিয়ার কামার শিল্পীরা। বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও আবিষ্কার হওয়ার কারণে সেটা এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। তবুও থেমে নেই এখানকার লৌহ শিল্পের কদর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো ঘাটাইল উপজেলার কামার শিল্পীদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের লৌহজাত পণ্যর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা দেশজুড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদকে সামনে রেখে কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোরবানির পশুর চামড়া ও হাড় হাড্ডি, মাংস প্রক্রিয়া জাত করার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলের কামার শিল্পীদের ব্যস্ততায়। দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তাদের কাজের ব্যস্ততা।
তবে বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে থমকে আছে দেশ। তারপরেও প্রতিবারের তুলনায় এ বছর কামারপল্লীতে কাজের চাপ অনেকটা কম দেখা গেছে।
সরজমিন দেখা যায়, ঘাটাইল উপজেলার, পাকুটিয়া, কুতুবপুর, পোড়াবাড়ি, গারোবাজার, সাগরদিঘী, ধলাপাড়া, জোড়দিঘীসহ প্রতিটি অঞ্চলের কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোর থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত নতুন চাপাতি, ছুরি তৈরির পাশাপাশি চলছে পুরনো অস্ত্রে শান দেয়ার কাজ। এসব পণ্য তারা হাটে বাজারে বিক্রিও করছে। পাকুটিয়া এলাকার জিতেন কামার, মুকুল কর্মকার, নিতাই কর্মকার এবং জোড়দিঘী বাজারের সেন্টু কামার বলেন, ‘ঈদের আগে কাজের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে প্রতিবারের চেয়ে এবছর করোনার কারণে কাজের চাপ অনেক কম। এজন্য বর্তমানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছি। আগে খুব সকালে দোকানে আসতাম আর বাড়ি যেতাম গভীর রাতে। এখন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাসায় চলে যাই। গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি কাজ করে হাজার দেড়েক টাকা আয় হচ্ছে ২-৩ দিন ধরে। আগে এর চেয়ে বেশি আয় হতো।
তারা আরো বলেন, একটি বড় দা পাঁচ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৮০০ টাকা, এক কেজি ওজনের কুড়াল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাপাতি প্রকার ভেদে ৪৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, বিভিন্ন আকারের ছোরা ৩৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্য সময়ের চেয়ে এখন চাপাতি, চাকু, ছুরির দাম বেশি রাখা হচ্ছে। সরজমিন ঘুরে পাকুটিয়া, কুতুবপুর, সাগরদিঘীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার কামারপট্টির কামারদের এখন কাজের চাপ কিছুটা বেশি। একের পর এক ক্রেতা এসে দোকানে ভিড় করছেন। আগের চেয়ে বর্তমানে একটু কম চাপ থাকলেও দোকান ছেড়ে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। তাই সকাল, দুপুরের খাবার তারা দোকানে বসেই সেরে নিচ্ছেন। পুরনো দুইটি দা, একটি বঁটি ও একটি ছুরিতে শান দেয়ার জন্য ৩৫০ টাকা নিচ্ছেন। অন্য সময় মজুরি ছিল ১৫০ টাকা। আর নতুন একটি ছোরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বঁটি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সাগরদিঘী বাজারের আবুল কামার বলেন, ‘সারা বছরই আমাদের তৈরি জিনিসের কমবেশি চাহিদা থাকে। তবে ঈদে পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাক্কুর কদর প্রতি বছরই বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে চাহিদা কম। তারপরেও কিছু  তৈরি করে রাখছি। তিনি আরো বলেন, ‘আগে অন্য হাট-বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। তবে ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ১ হাজার টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে। ঈদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে এ বছর সময় কম লাগছে। এ বছর আমি নতুন কাজের অর্ডার নেয়া বন্ধ করিনি। গত বছর এ সময় অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এ বছর তার উল্টো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status