বাংলারজমিন

করোনার সংকটে মাদ্রাসা ছাত্র এখন ‘হোটেল বয়’

আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা) থেকে

৬ জুলাই ২০২০, সোমবার, ৭:২১ পূর্বাহ্ন

বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ভায়লাবুনিয়া গ্রামের দিনমজুর মোঃ বেল্লাল খানের পুত্র ও ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্র মোঃ ইয়ামিন (১৫) এখন হোটেল বয়। করোনার কারণে সংসারের অভাব কিছুটা দূর করা জন্য ও পেটের তাগিদে পড়ালেখা ছেড়ে গত দুই মাস ধরে হোটেল বয়ের কাজ করছেন শিক্ষার্থী ইয়ামিন।
জানা গেছে, উপজেলার ভায়লাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ বেল্লাল খানের ৫ জনের সংসার। স্বামী- স্ত্রী একমাত্র পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে তিনি গ্রামেই বসবাস করেন। বড় ছেলে মোঃ ইয়ামিন (১৫) ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসার ৭ম শ্রেনীর ছাত্র ও কন্যা সাথী ভায়লাবুনিয়া সকরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী এবং অপর কন্যা আয়েশার বয়স মাত্র ২ বছর। দিনমজুরের কাজ করে কোনরকম চলতো বেল্লাল খানের সংসার। হঠাৎ করে দেশে চলে আসলো মহামারী করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব। ভাইরাসের কারনে এক রকম আয়রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনমজুর বেল্লাল খান সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। সংসারে শুরু হলো অভাব অনটন। বড় ছেলে মোঃ ইয়ামিন ছারছিনা দ্বিনিয়া মাদ্রাসা লিল্লাহ্ বোর্ডিংএ থেকে মাদ্রাসার খরচে পড়ালেখা করে। করোনায় মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেও বাড়ীতে চলে আসে। পুত্র ইয়ামিন বাড়ীতে চলে আসায় সংসারের খরচ আরো বেড়ে যায়। দিন যত সামনে যাচ্ছে তাতে বেল্লাল খানের পক্ষে দিন মজুরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে তিন বেলা আহার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে সংসারের অভাব দূর করার জন্য মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে ইয়ামিনকে হোটেল বয়ের কাজে লাগিয়ে দেন। বর্তমানে ইয়ামিন আমতলী পৌর শহরের চৌরাস্তা সংলগ্ন হোটেল সকাল সন্ধ্যায় বয়ের কাজ করছেন। প্রতিদিন তিন বেলা আহার শেষে মাসে ৩০০০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন মাদ্রাসা ছাত্র ইয়ামিন। সংসারের অভাব দূর করার জন্য মাস শেষে বেতনের সব টাকাই তুলে দিচ্ছেন দরিদ্র দিনমজুর পিতার হাতে।

গত দুই মাস ধরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ইয়ামিন হোটেল বয়ের কাজ করছেন। যে বয়সে বই, খাতা, কলম নিয়ে বাড়ীতে বসে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা করার কথা। সেই বয়সে ইয়ামিন পেটের তাগিদে হোটেলে কঠোর পরিশ্রম করছেন। পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের দৈন্যদশা, অভাব অনটন ও পিতার বৈরী মনোভাবে তার সে আশা-আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হওয়ার পথে। দারিদ্রতার কারণে তার আর লেখাপড়া হবে কিনা তাও বলতে পারছেন না ইয়ামিন।

খোজ নিয়ে দেখাগেছে, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া বেশ কিছু অস্বচ্ছল পরিবার তাদের কিশোরদের একটু বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঠেলে দিচ্ছেন। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে এসব কিশোররা না বুঝেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন।

মাদ্রাসা ছাত্র ইয়ামিন বলেন, করোনা মহামারীর আগে বাবা দিনমজুর করে যা আয় করতো তা দিয়ে আমার মা-বাবা ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা তিন বেলা কোন রকম খেয়ে পরে থাকতো পারতো। মহমারী করোনাভাইরাস আসার পর আমার মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। আমিও বাড়ী চলে আসি। বাবায় দিন মজুরী করে এখন যা উপার্যন করে তা দিয়ে আমরা তিনবেলা খেতে পারিনা। তাই পেটের তাগিদে আমি এখন হেটেল বয়ের কাজ করি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status