প্রথম পাতা

চালের দাম নিয়ে নাভিশ্বাস

আলতাফ হোসাইন

২০২০-০৬-২৬

করোনাকালে এমনিতেই অর্থ সংকটে পড়েছে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ এমনিতে জীবন-জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় কারণ ছাড়াই চালের দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস অবস্থা তাদের। রাজধানীর বাজারে গত এক মাসে মানভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত। ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখছেন না তারা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে 
বরাবরের মতো মিলমালিকদের দূষছেন আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা। ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দিয়ে মিলমালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই মহামারির সময় চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে শুধু স্বল্প আয়ের মানুষেরা নয় কম-বেশি সব শ্রেণির মানুষই চাপের মুখে পড়বে।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজার, মগবাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর মৌসুম শুরু হলেই চালের দাম কমে। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। ধানের বাম্পার ফলন হলেও গত এক মাসে গুটি স্বর্ণা এবং মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৯ টাকা পর্যন্ত। নাজির এবং পাইজাম চালের দাম কেজিতে ৮ টাকা আর আটাশ চাল কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। আর এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে প্রায় ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ইরি ও স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়।
কাওরান বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবু ওসমান মানবজমিনকে জানান, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কথা ছিল না। প্রতি বছর এ সময় দাম কিছুটা কমে। তবে এবার কেন দাম বাড়লো সেটা মিলমালিকরা বলতে পারবেন। কারণ তারাই দাম বাড়ান। তাদের অজুহাত সরকার ধান-চাল কিনছে, সেজন্য ধানের বাড়তি দামের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তিনি জানান, ঈদের পর থেকে প্রতি বস্তা চালের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে গুটি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৩৬ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায় যা আগে ছিল ৪৬ টাকা, নাজির শাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬২ টাকা, পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায়, আটাশ বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকায়।
রনি রাইস এজেন্সির মনিরুল ইসলাম বলেন, এখন যে আটাশ চাল আমরা বিক্রি করছি ৪২ টাকায় তা গত বছর বিক্রি করেছি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। মিলমালিকরা এবার বলছে ধানের দাম বেশি তাই চালের দাম বাড়ছে।
এদিকে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে প্রতিমণ ধানের দাম ১০৪০ টাকা বেঁধে দিলেও মিল মালিকদের দাবি তাদের আরো বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা বলছেন সরকারি দামেই ধান বিক্রি করছে তারা। নাটোর ও নওগাঁর দু’জন কৃষক জানান, এ বছর আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই ধান বিক্রি করছি। গত বছর এবং তার আগের বছর ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণে ধান বিক্রি করেছি। এবার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি।
এদিকে বাজার ঘুরে ডিম, মুরগি, শাক-সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দামে বেশ অসঙ্গতি দেখা গেছে। বাজারগুলো ছাড়াও ভ্যানে করে শাক-সবজি বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। বিক্রেতারা সব কিছুর ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছে। মগবাজারে ৭০ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করতে দেখা যায়। আবার হাতিরপুলে গিয়ে দেখা যায় একই মানের টমেটো ৮০-৯০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। হাঁসের ডিম হাতিরপুল বাজারে ৪০ টাকা হালি বিক্রি হলেও কাঁঠালবাগান এলাকায় ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া বাজারে প্রায় শাক-সবজির দামই চড়া দেখা যায়। বাজার ও মান ভেদে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা, বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা, চিচিংগার কেজি বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে, ঝিঙা ও পটোল ৫০-৬০ টাকা, করলা ৫০-৭০ টাকা, কচুরলতি ৪০-৬০ টাকা, কচুর মুখী ৬০-৭০ টাকা, কাকরোল ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে। এদিকে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। বয়লার মুরগির কেজি ১৬০- ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা কেজিতে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এমনিতেই করোনার প্রভাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। এ অবস্থায় চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা হতাশাজনক। এতে স্বল্প আয়ের মানুষেরা চাপে পড়বে। এখন কেন চালের দাম বাড়ছে এটা খতিয়ে দেখতে হবে। সরকারকে মনিটরিং করতে হবে। সরকার এখন চাল কিনছে, সেই প্রভাবটিই বাজারে পড়ছে কি-না সেটিও দেখতে হবে। সরকার চাল কিনলে বাজারে যদি পণ্যটির সংকট হয় তাহলে সরকারের মজুতকৃত চাল থেকে ক্রেতাদের দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status