শেষের পাতা

চট্টগ্রামে রেড জোনে এ কেমন লকডাউন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৩ জুন ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগরীর ১০টি ওয়ার্ড ও ৯টি উপজেলা রেড জোনের তালিকায়। যেগুলোতে ক্রমান্বয়ে লকডাউন কার্যকর করার কথা। কিন্তু রেড জোন ঘোষণার সপ্তাহ-দশদিন পার হলেও কার্যকর হয়নি লকডাউন। তবে ১৬ই জুন দিবাগত রাত থেকে শুধুমাত্র নগরীর ১০নং উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডে লকডাউন চলছে। তবে এ এলাকায় লকডাউন আইনের বালাই নেই। লকডাউন কার্যকর করার পর স্বাস্থ্য সেবা থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করার কথা বললেও গত এক সপ্তাহে তার কোন হদিস নেই। যা দেখে মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কাসেম বলেন, লকডাউন শুরুর সময় ১৬ই জুন রেডজোন ঘোষিত এলাকায় প্রবেশ ও বাইরে যাওয়া সমপূর্ণ নিষেধ করা হয়। এলাকার ২০টি প্রবেশপথ চিহ্নিত করে তা বড় আকারের বাঁশ গেড়ে বন্ধ করে দেয়ার দাবি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু পরের দিন উষার আকাশে সূর্যের কিরণ দেখা দেয়ার আগেই এসব বাঁেশর ভেতর দিয়ে বুকডাউন দিয়ে যাতায়াত শুরু করে গার্মন্টসসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরা। এমনকি সকাল থেকে লকডাউন এলাকায় খুলে বসে দোকানপাটও। যেখানে অবাধে কেনাকাটা করে মানুষ। যা অব্যাহত রয়েছে এখনো। আনোয়ারুল করিম নামে এক বাসিন্দা বলেন, এলাকাবাসী ধারকর্জ করে বাজার সদাই করে মধ্যরাত থেকে বাড়িতে ঢুকেছে। অনেকে স্বর্ণবন্ধক রেখেছেন ২১দিন লকডাউন মেনে বাসায় থাকার জন্য। অথচ উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডের ভেতরে থাকা ১৪টি গার্মেন্টস ও ১০-১২টি কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। ফলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা লকডাউন এলাকায় যাতায়াত করছে গার্মেন্টস ও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রথম দিকে করোনা সংক্রমিত এলাকা উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে ১৫৯ জন করোনা শনাক্ত রয়েছে এখন। একজন গার্মেন্টসকর্মী থেকেই করোনা সংক্রমণের শুরু হয়েছে। যার ফল ভোগ করছে এলাকাবাসী। অথচ এলাবাসীকে ঘরে রেখে গার্মেন্টসকর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়ে এ কেমন লকডাউন? এভাবে সারা বছর লকডাউন দিলেও করোনা সংক্রমণ কমবে না। শুধু তাই নয়, লকডাউন এলাকায় দোকানপাটও প্রতিদিন খোলা। যেখানে আগের মতো বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এসে কেনাকাটা করছেন। লকডাউন করার পরের দিন বিকেলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হলেও এর কোন পরিবর্তন নেই। অথচ লকডাউন এলাকায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকার কথা থাকলেও তাদের দেখা নেই। নেই স্বাস্থ্য সেবাও। যেখানে কয়েকটি বুথ বসিয়ে এলাকার লোকজনের নমুনা সংগ্রহের কথা। সেখানে লকডাউন করার সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও একটি বুথও বসেনি।  
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যা বললেন: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক লকডাউন প্রসঙ্গে বলেন, নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ১৭ই জুন বিকেলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। লকডাউন চলাকালীন জনসাধারণের বিনা প্রয়োজনে চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় ১১ জনকে ও দোকান খোলা রাখায় ৭ দোকানিকে অর্থদণ্ড করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক জানান, লকডাউন ঘোষণা করা হলেও লোকজন সরকারি আদেশ অমান্য করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্কবিহীন অযথা ঘুরাফেরা করে। যার ফলে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় চা স্টল সহ গ্রোসারী দোকান খুলে মানুষের ভীড় বাড়িয়ে বেচাকেনা করছে। যার ফলে তাদেরকে অর্থদন্ড করা হয় এবং ভবিষ্যতে দোকান খুলবেনা মর্মে মুচলেকা আদায় করে মর্মে সতর্ক করা হয়। অভিযানকালে দেখা যায় আসরের নামাযে একটি মসজিদে প্রায় ৪০জন মুসল্লি নামায আদায় করে। ফলে মুয়াজ্জিন ও ইমামকে অনুরোধ করা হয় যাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর নির্দেশ অনুযায়ী ৫ জনের জামাত নামাজ পড়া হয়। মাইকিং এর মাধ্যমে সবাইকে লকডাউনের বিধি-নিষেধ মেনে চলার জন্যে অনুরোধ করা হয়।
স্বাস্থ্য সেবার বালাই নেই: লকডাউনে থাকা ব্যক্তির নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা, বা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কোনটাই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ চট্টগ্রামের প্রথম লকডাউন করা এলাকা উত্তর কাট্টলীর বাসিন্দাদের। তাই বাধ্য হয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন বলে দাবি তাদের। জানা যায়, গত বৃহসপতিবার রাতে লকডাউন চলাকালীন অবস্থায় উত্তর কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী জুয়েল শীলের বোনের প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ সময় দ্রুত কন্ট্রোল রুমের হেল্প লাইনে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ফোন দেয়া হয়। কিন্তু কোন ধরনের সেবা পাওয়া যায়নি। পরে রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
গণমাধ্যম কর্মী জুয়েল শীল বলেন, হেল্পলাইন থেকে বলা হয় দেখি আপনাদের জন্য ব্যবস্থা করতে পারি কি না। প্রায় ৩০ মিনিট চলে যাওয়ার পরেও কোনো কল আসেনি। পরে অন্য যায়গায় ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স আনতে হয়েছে। নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় আটাত্তর হাজার মানুষের বসবাস। এখানে করোনার বিস্তার রোধে কয়েকটি বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত একটি বুথও বসানো হয়নি। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, চিকিৎসা সেবাসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও কিছুই পাওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ কাট্টলীবাসীর।  তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের দাবি, অভিযোগগুলো উদ্দেশ্যমূলক। স্বেচ্ছাসেবকরা লকডাউন এলাকায় প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আর চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জনসাধারণ পর্যাপ্ত সেবা না পেলে, লকডাউন সফল হবে না। এদিকে নগরীর আরও ৯টি ওয়ার্ড এবং ৯টি উপজেলা রেডজোন ঘোষণা নিয়ে হাসাহাসি করছে স্থানীয়রা। কেউ কেউ ক্ষোভে ফুঁসছে। বাসিন্দাদের ভাষ্য, রেডজোন ঘোষণার ১০ দিন পার হলেও এখনো সেখানে কার্যকর হয়নি লকডাউন। ফলে এসব এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। নগরীর রেডজোন ঘোষিত ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে- ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর, ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার, ২১ নম্বর জামালখান, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড। উপজেলা হচ্ছে-পটিয়া, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, ও রাউজান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ বলেন, নগরীর ওয়ার্ড ও উপজেলাগুলোতে পর্যায়ক্রমে লকডাউন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। লকডাউন এলাকায় নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status