দেশ বিদেশ

৩ হাসপাতাল ঘুরে মারা গেলেন চিকিৎসক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে

২০২০-০৬-১০

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধুনিক হাসপাতালের মালিক, গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ডা. আনোয়ার ঢাকায় তিন-তিনটি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন। সোমবার তাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় প্রথমে স্কয়ার, তারপর এ্যাপোলো, এবং আরো একটি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করেও বিফল হন তার নিকটাত্মীয়রা। শেষ পর্যন্ত বাড্ডার একটি হাসপাতালে রাতে ভর্তি করা হলেও মধ্যরাতে মারা যান বরিশালের প্রিয় এই মানুষটি। মাটির মানুষ হিসেবে পরিচিত ডা. আনোয়ার  শল্যচিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার বাড়ি ঝালকাঠির মানপাশায়। এক ছেলে এক মেয়ে, স্ত্রী ও এক ভাই নিয়ে যৌথ পরিবার। শিক্ষানুরাগী হিসেবে তার সুনাম চারদিকে। নিজ বাড়ির সামনের স্কুলে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে ভবন করেছেন, বরিশালেও একটি স্কুলের সভাপতি। ২টি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক। নিজের জমানো সব অর্থ আর ব্যাংক ঋণ দিয়ে বরিশালে নির্মাণ করেন ১১ তলাবিশিষ্ট রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল। প্রায় একাই এত বড় হাসপাতালটি চালু রেখেছেন। শল্যচিকিৎসক হিসেবে দক্ষ হওয়ায় রোগীর কমতি ছিল না। ফিস নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো রোগীর কোনো অনুযোগ ছিল না। বিএনপি নেতা এডভোকেট আলী হায়দার বাবুল মাত্র ২ দিন আগে ফেস বুকে লিখেছিলেন, ডা. আনোয়ারের অক্লান্ত সেবায় তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন।
করোনা মহামারিতে বরিশালের সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জীবন বাঁচাতে যখন ঘরে উঠেছেন, ডা. আনোয়ার তখন তার হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছিলেন। বেশ কয়েকজন করোনা রোগী তথ্য গোপন করে তার হাসপাতালে ভর্তি হলে অবস্থার অবনতি ঘটে। প্রথমে ২ জন স্টাফ আক্রান্ত হন করোনায়। তারপর নিজে। রোববার রাতেও তিনি ৭/৮টি অপারেশন করান। সোমবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুরের পর তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে ঢাকা থেকে এয়ার এম্বুলেন্স আনা হয়। বিকাল সোয়া ৫টায় তাকে নিয়ে উড়াল দেয় এয়ার এম্বুলেন্স। প্রথমে যাওয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে জানিয়ে দেয়া হয় সিট নেই। এরপর এ্যাপোলো হাসপাতাল। একই ঘটনা ঘটলো। আরও একটি হাসপাতাল ঘুরে উপায় না পেয়ে তাকে বাড্ডার একটি হাসপাতালে বাধ্য হয়ে ভর্তি করানো হলো। হাজারো মানুষের জীবন বাঁচানো ডা. আনোয়ার প্রায় বিনা চিকিৎসায় রাত আড়াইটায় মারা যান। ডা. আনোয়ারের মৃত্যু সংবাদে পুরো বরিশাল যেন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। সাংবাদিকদের কলমও স্থবির হয়ে পড়ে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবাই হতবাক হয়ে পড়েন। এভাবে সময় না দিয়ে তিনি চলে গেলেন বরিশালের স্বনামখ্যাত দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল পত্রিকার প্রকাশক তিনি। পরে তিনি বরিশালের আজকাল নামের পত্রিকাটি কিনে নেন। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর প্রিয়ভাজন ছিলেন ডা. আনোয়ার। দাতা হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছিল। পুত্র ও কন্যা দুজনেই মেডিকেল স্টুডেন্ট। গতকাল দুপুরে তার নিজবাড়ি ঝালকাঠির মানপাশায় তাকে দাফন করা হয়।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status