দেশ বিদেশ

করোনা পরিস্থিতি: বাংলাদেশের অর্থনীতি

মেরিনা দেবনাথ, সহকারী কমিশনার, রংপুর

৩ জুন ২০২০, বুধবার, ৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

করোনা (কোভিড-১৯)  বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে বিশ্বের ২০৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড- ১৯ সংক্রমণের ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে যা  বৈশ্বিক অর্থনীতিকে হুমকির মুখে  ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মোটা দাগে কৃষি, সেবা ও শিল্পখাতে ভাগ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী,  দেশের অর্থনীতিতে এখন সেবা, শিল্প ও কৃষিখাতের অবদান যথাক্রমে প্রায় ৫০ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশের মতো। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুসারে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০.৪ শতাংশ মানুষ শিল্পে এবং ৩৯ শতাংশ মানুষ সেবাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব শিল্প ও সেবাখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বেসরকারি খাত হলো পোশাক ও চামড়া শিল্প। সারা দেশে পোশাক ও চামড়া শিল্পে নিয়োজিত কর্মীর সংখ্যা ৪.৫ মিলিয়ন এবং দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আসে এই গার্মেন্টস ও চামড়াজাত পণ্য থেকে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০  কোটি টাকা (যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ) আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেন। এরমধ্যে করোনার আঘাত থেকে রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকদের বাঁচাতে ৫ হাজার কোটি টাকার (যা জিডিপির প্রায় ০.২ শতাংশ)  প্রণোদনা প্যাকেজও রয়েছে। দেশের শিল্প-বাণিজ্যে করোনার আঘাত আসতে পারে মনে করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৫শে মার্চ ২০২০ তারিখে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাই এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন বলে ঘোষণা করেন। যা দেশ ও  দেশের অর্থনীতির জন্য যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে এ ঋণ প্রদান করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রদান করবে।যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ৩৫০ কোটি ডলার  থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) যুক্ত হবে অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০  কোটি টাকা। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে সুদের হার ২ দশমিক ৭৩ থেকে কমে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পসেবা খাতগুলোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা, যা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সুবিধায় সুদের হার ৯ শতাংশ। এর অর্ধেক অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা দেবে। বাকি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার ব্যাংককে দেবে। এরফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সমানতালে চলবে। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট ফাইন্যান্স স্কিম নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার  কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে, এই সুবিধায় সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।
এসবের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি শিল্পের জন্য আলাদাভাবে কৃষকদের কল্যাণে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। সেটিমাত্র ৫ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে সরাসরি ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ৯ হাজার কোটি টাকা সারের জন্য ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ১০০ কোটি টাকা, বীজের জন্য ১৫০  কোটি টাকা প্রাথমিক প্রণোদনা হিসেবে  ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি এসব ভর্তুকি প্রাপ্তির ফলে কৃষকদের কৃষি উপকরণ ক্রয়সহ ফসল উৎপাদনের জন্য কম অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। যন্ত্র ব্যবহারের ফলে শ্রমিক বাবদ খরচ কমে যাবে এবং শ্রমিকদের চলাচলও কম হবে। ফলে করোনা ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। এ ছাড়া উন্নতমানের বীজ বা ভালো বীজ বা কিছু কিছু বীজ যেগুলো বিদেশ  থেকে আমদানি করতে হয়  সে সব ক্ষেত্রে অনুদান ও প্রণোদনা প্রদান অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত যা দেশের কৃষি অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status