বাংলারজমিন

উৎকন্ঠার ঈদে সিলেটে ‘নেতৃত্ব’ দিচ্ছে করোনা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৫ মে ২০২০, সোমবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কোয়ারেন্টিনে। ব্যক্তিগত সহকারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এ কারনে বাসার সবাই কোয়ারেন্টিনে। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সুস্থ রয়েছেন। বাসায়ই পালন করছেন ঈদ। দুপুরের দিকে নিজের পরিবারের উদ্যোগে ঈদের রান্না করা খাদ্য সামগ্রী বিতরন করলেন মানুষের মধ্যে। মন ভালো নেই কারো। সিলেটবাসীর প্রিয়জন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক। খুব সংবেদনশীল নেতা। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন দু’দিন আগে। ঠিক তার দু’দিন পরে আক্রান্ত চার বারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। বিএনপির বয়োবৃদ্ধ অনেক নেতাই নিজ থেকে আইসোলেটেড। প্রাণের শাহী ঈদগাহ। যেখানে ঈদের দিন হয় মিলনমেলা। সব মত ও পথের মানুষ ছুটে যান ঈদগাহে। এবার শাহী ঈদগাহে ঈদ জামাত হলো না। পাড়া-মহল্লায় হলো ঈদ জামায়াত। তেমন উৎসাহ নেই, উদ্দীপনা নেই। সিলেটকে গ্রাস করেছে আতঙ্ক। এমন আতঙ্কের ঈদ কখনোই দেখেনি সিলেটের মানুষ। বলায় হয়, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্প্রতির শহর সিলেট। ঈদ এলেই সবাই মিশে যায় এক কাতারে। সেটি এবার হলো না। মন্ত্রী, এমপিদের অনেকেই এলাকায় নেই। প্রাণঘাতী করোনায় সবকিছু যেনো তছনছ করে দিয়ে যাচ্ছে। থমকে আছে জীবন, থমকে গেছে পরিবেশ। দীর্ঘশ^াস বাড়ছে সিলেটে। লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ৫০ জন রোগী। রোগী হয়ে নিজ বাসা-বাড়িতে আইসোলেটেড আছে কমপক্ষে পৌনে ৩শ’ রোগী। তাদের জন্য প্রার্থনা অন্ত ছিলো না ঈদের দিনে। মসজিদে মসজিদে অঝোরে কেদেছেন সুস্থ থাকা স্বজনরা। ঈদ তো কেটে যাচ্ছে। কিন্তু শঙ্কা কাটছে না সিলেটে। সিলেট শহরের প্রায় এলাকায় ধাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস। সবখানেই দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। ঈদের সকাল পর্যন্ত শুধু সিলেট জেলাতেই সেটি বেড়ে ৩১০ জন। গত ১০ দিনের পরিসংখ্যান খুবই ভয়ঙ্কর। রোগী বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। বাড়ছে রোগী, বাড়ছে উৎকন্ঠা। এই উৎকন্ঠা আরো ডালপালা মেলছে নানা ভাবে। হিসেব মিলছে না সিলেটে। কোথায় গিয়ে দাড়াবে মৃত্যুর মিছিল- এ ভাবনায় ঈদের খুশি হারিয়ে গেছে। এতো রোগী হওয়ার কথা ছিলো না সিলেটে। শুরু থেকেই সবাই ছিলেন সচেতন। প্রবাসীদের নিয়ে প্রথমে হৈ-চৈ হয়েছে। প্রাণে টানে দেশে আসা প্রবাসীরা অনেকেই করোনায় আতঙ্কিত হয়ে চলে গেছেন। যারা সিলেটে ছিলেন তারাও ছিলেন সতর্ক। ফলে প্রবাসীদের দ্বারা সিলেটে করোনা সংক্রমনের কোনো প্রমান মিলেনি। কোনো যুক্তিও কেউ দেখাতে পারেনি। সবাই সতর্ক ছিলেন। গোটা নগরে জীবানু নাশক স্প্রে দেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে করোনা নিয়ে স্বস্তিতেই ছিলেন প্রবাসী শহর সিলেটের মানুষ। প্রবাসী সংক্রমন ঠেকানো গেলো। এতে করে হাফ ছেড়ে বাচলেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ৩১ মার্চ থেকে আকাশপথের ফ্লাইটও বন্ধ। কিন্তু স্থানীয় সংক্রমন ঠেকানো গেলো না কোনো ভাবেই। শুরুতেই করোনা থাবা বসালো হবিগঞ্জে। সিলেটের নিকটবর্তী জেলা এটি। গার্মেন্টস বন্ধের ঘোষনায় বহু মানুষ করোনার হটস্পট ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে এসে ঢুকলেন হবিগঞ্জে। এরপর নারায়ানগঞ্জ, নরসিংদীর মতো হবিগঞ্জ নিয়ে উৎকন্ঠা দেখা দিলো। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সচেতন ছিলেন। আইসোলেটেড করে সংক্রমন ঠেকালেন। এরপর করোনা সংক্রমিত হলো সুনামগঞ্জেও। সেখানে ধান কাটার বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এলেন করোনা প্রবণ এলাকা থেকে। রাতারাতি সুনামগঞ্জেও বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। হাল ছাড়লেন না সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা মনোযোগী হলেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেটেড করে করে প্রায় নিয়ন্ত্রনই করে ফেললেন। এরপরই শুরু হয় সিলেটে। হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে করোনা রোগী বেশী। রাতের সড়কপথ প্রায় উন্মুক্ত। ঢাকা, নারায়ন গঞ্জ থেকে নিত্য পণ্যের মালামাল নিয়ে এলো ট্রাক। সঙ্গে নিয়ে এলো করোনা। শুরু হলো হলো রমজান মাস। প্রথমে কিছুটা নিয়ন্ত্রন করা গেলো মধ্য রমজান থেকে আর সম্ভব হয়নি। ঢাকা ও নায়ায়নগঞ্জ থেকে সিলেটে আসতে থাকলো ঈদ কাপড়ের চালান। সিলেটের হাসান ও হকার মার্কেট খুলা হলো। শহরের অর্ধেক এলাকা সরব হয়ে উঠলো। জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা চেয়েছিলেন ঈদে মার্কেট বন্ধ রাখতে। কিন্তু পারলেন না। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত জমিয়ে হলো ঈদ বাজার। সেই সঙ্গে লাফিয়ে বাড়লো রোগীও। সর্বশেষ গত রোববার রাতেও আক্রান্ত হলেন ২৫ জন। ঈদেও করোনা প্রবন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ এসে ঢুকেছে সিলেটে। পরিসংখ্যান বলছে- সিলেটে টেস্ট হচ্ছে কম। এ কারনে রোগীও কম। টেস্ট বাড়ালে রোগী বাড়বে। সিলেটে এখন গড়ে প্রতিদিন তিনশ’র মতো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা হাজারে গেলো রোগী মিলবে তিন থেকে চার গুন। সিলেটে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারাও অনেকটা ক্লান্ত। লকডাউন মানা হচ্ছে না। এ কারনে বাড়ছে রোগী। তাদের ধারনা- বহু মানুষ প্রাণঘাতী করোনা নিয়ে ঘুরছে সিলেটে। আর রেশিও অনুযায়ী তাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছে করোনা। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ। এক’শ মতো স্বাস্থ্য কর্মী করোনা আক্রান্ত। পুলিশের সংখ্যাও কম নয়। ৪০ জনের মতো আক্রান্ত। ফলে ফ্রন্টলাইনের যুদ্ধাদের আক্রমন করছে করোনা। লড়াই করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাল ছাড়ছে না প্রশাসনও। সবাই চান সিলেটে করোনার নিয়ন্ত্রন। কিন্তু নিয়ন্ত্রনের পথ খোজা হচ্ছে না। লকডাউন মানছেন না কেউ। সবাই যার যার মতো ছুটছে। ঘরে ফেরার তাগিদ নেই কারো মধ্যে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status