শেষের পাতা

ঈদকে ঘিরে তৎপর অপরাধী চক্র

শুভ্র দেব

২১ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

প্রতীকী ছবি

ঈদকে ঘিরে ঢাকায় সক্রিয় অপরাধী চক্র। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন থাকায় প্রথমদিকে অপরাধ তৎপরতা কিছুটা কম ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি ডাকাতি, ধর্ষণ, খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হওয়াতে বেড়েছে মানুষের অবাধ চলাফেরা। কারখানা, শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। শহরে রাত-দিন  বেড়েছে অস্বাভাবিক যান চলাচল। আর এ সুযোগেই তৎপরতা শুরু করেছে অপরাধীরা। ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা কিসিমের অপরাধীরা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ঘটনাই তার জানান দিচ্ছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারন ছুটি ঘোষণা ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করার পর শহরে মানুষের চলাচল কম থাকায় অপরাধীরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু ইদানিং ঈদকে ঘিরে শহরে মানুষের চলাচল বেড়েছে। সেই সঙ্গে অপরাধীরাও তাদের তৎপরতা শুরু করেছে। বেশ কিছু ঘটনায় তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। চিহ্নিত অপরাধীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুরো শহরে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাধিক টিম ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে দায়িত্বপালন করছে।  

১০ই মে দুপুরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্টকে মারধর করে ৫৫ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মারুফ এন্টারপ্রাইজ ও এইচ ২৪ এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম সবুজ পুলিশকে জানিয়েছেন,

যাত্রাবাড়ী কাজলা বউ বাজার অফিস থেকে দুটি ব্যাগে করে ৫৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা নিয়ে বড় ভাইসহ মোটরসাইকেল যোগে তিনি মতিঝিল যাচ্ছিলেন। যাত্রাবাড়ী জনপদ মোড়ে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে মোটরসাইকেলটি পৌঁছালে হঠাৎ ছিনতাইকারীদের দুটি মোটরসাইকেল তাদের চলন্ত মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। দুই মোটরসাইকেলে থাকা চারজন ছিনতাইকারী তাদের রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। পরে তাদের কাছে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগ দুটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিও করে। এ ঘটনায় তারা যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় ঘটনাস্থলের সিসিক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে কাজ করছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বকেয়া তিন মাসের বেতন নিয়ে নর্দার অফিস থেকে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন বেসরকারি অফিসের চাকরিজীবী  ফারজানা ইয়াসমিন। তাকে বহনকারী রিকশাটি বিশ্বরোড এলাকায় যাওয়ার পরপরই প্রাইভেট কারে আসা ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে করে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় রিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। রিকশা থেকে পড়ে ইয়াসমিন ও রিকশা চালক আহত হন। এসময় প্রাইভেট কারে থাকা ছিনতাইকারী ইয়াসমিনের ব্যাগ নিয়ে পালাতে থাকে। পরে তার চিৎকারে আশেপাশের মানুষ এগিয়ে এসে ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করে কারের চালককে আটক করে। কিন্তু অপর ছিনতাইকারী ছুরি দেখিয়ে পালিয়ে যায়। যাবার সময় সে ফারজানার ব্যাগে থাকা ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে ছিনতাইকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ভ্ক্তুভোগী ফারজানা পরিবার ভাটারা থানায় একটি মামলা করেছে।

মঙ্গলবার রাতে অনলাইন নিউজপোর্টাল সারাবাংলার গাড়িচালক আজগর আলী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে অফিসের নীচে গাড়ি জমা দিয়ে তিনি বাইসাইকেলযোগে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফেরার পথে বাংলামোটর থেকে সোনারগাঁও সড়কে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এসময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা সাড়ে ৭ হাজার টাকা, মোবাইলফোন ও তার বাইসাইকেলটি নিয়ে যায়। পরে আহত আজগরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি মলমপার্টি ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা বেড়েছে শহরে। শহরের বাজার ও শপিংমল এলাকায় এসব চক্র ছড়িয়ে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা স্পে, মলম জাতীয় জিনিস চোখেমুখে লাগিয়ে দেয়। অথবা চেতনানাশক ওষুধ খাদ্যদ্রব্যর সঙ্গে মিশিয়ে পথচারি বা সাধারন মানুষকে খাইয়ে দেয়। পরে ভ্ক্তুভোগীর কাছ থেকে তারা টাকা, মোবাইলফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের আসাদগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলমপার্টি চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- কালু মিয়া, মিলন হাওলাদার, রিপন মিয়া, আলিয়ার রহমান ও দিদার হোসেন। এ সময়  তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অজ্ঞান করার বিভিন্ন মলম। র‌্যাব জানিয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে এই চক্রটি ঢাকায় তৎপরতা শুরু করেছিলো। সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা মানুষকে টার্গেট করে সর্বত্র লুট করতো। মলম সাধারণ পথচারীদের চোখে-মুখে ছিটিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নিতো। আবার ডাব কিংবা অন্য খাবারের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বত্র লুটে নিত। গত কয়েকদিনে এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কিছু লুটে নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) যুগ্মকমিশনার মাহবুব আলম মানবজমিনকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মানুষ এখন ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছে। আর এ সুযোগে অপরাধীরা তৎপরতা শুরু করেছে। করোনাকালে সাধারন মানুষের মত অপরাধীরাও মাস্ক ব্যবহার করে। মাস্কের আড়ালে কে ভালো মানুষ আর কে অপরাধী সেটি বুঝা যায় না। আর সন্ধ্যার পর কিছুটা রাস্তায়ঘাট ফাঁকা হয়ে যায় তাই ছিনতাইকারী ওৎ পেতে বসে থাকে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ এসেছে। আমরা এসব অভিযোগ ধরে তদন্ত করছি। ইতোমধ্যে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। ঈদকে ঘিরে অপরাধীরা যেমন সক্রিয় হয়েছে ঠিক তেমনি ডিবির একাধিক টিম মাঠে নজরদারি করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) কৃষ্ণ পদ রায় মানবজমিনকে বলেন, করোনার প্রথমদিকে মাস্ক পরে দুটি ওষুধের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিলো। ওই ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীতে একটা বড় ছিনতাইয়ের ঘটনা আছে। এর বাইরে আরও কিছু অভিযোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, আমাদের দুটো দিকেই এখন কাজ করতে হচ্ছে। মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মানানোর পাশাপাশি শহরে যাতে অপরাধপ্রবনতা বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখছি। সামনে ঈদ। এসময় অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে যায়। ঈদকে ঘিরে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে আমাদের নজরদারি আছে। গোয়ান্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status