বাংলারজমিন
শাহরাস্তিতে দাফনে গ্রামবাসীর বাধা দেওয়া শামসুলের করোনা পজিটিভ
শাহরাস্তি (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
২০ মে ২০২০, বুধবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে করোণা উপসর্গ নিয়ে মৃত শামসুল আলমের নমুনা রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। বুধবার(২০ মে)চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে আশা নমুনা রিপোর্টে করোনা পজিটিভ নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (আরএমও) ডা: অচিন্ত্য চক্রবর্তী চক্রবর্তী আক্রান্তের পরিবার, স্থানীয় সূত্র জানায়, গত রবিবার (১৭মে) শাহরাস্তিতে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে নিয়ে আসা এক পোশাক শ্রমিকের মরদেহে কোরোনা উপসর্গ সন্দেহে দাফনে গ্রামবাসী বাঁধা দিয়েছিল।ওই সময় তার কফিন আটকাতে একদল গ্রামবাসী মাইকিং করে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।ওই দিন উপজেলার টামটা উত্তর ইউপি’র ঢুশুয়া গ্রামের মুন্সিবাড়িতে মরদেহ নিয়ে মানবিকতা নিয়ে এ বিপর্যয় তৈরি হয়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে অবহিত করলে অবশেষে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেন দাফন প্রক্রিয়ার। ওই বাড়ির মরহুম দেলোয়ার মাষ্টারের ছোট ভাই শামসুল আলম(৫৭) ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন।রবিবার (১৭মে)তার পরিবারের দাবি,তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে স্বজনরা মরদেহের দাফন দিতে নিজ গ্রামে ছুটে আসেন। এতে তৈরি হয় বিপত্তি, শামসুল আলমের মৃতদেহ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অতিক্রম করে নিজ গ্রামে প্রবেশ করতেই একদল গ্রামবাসী মাইকিং করে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে এই মরদেহ দাফনে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক দর্জি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করে। পাশাপাশি তিনি ওই গ্রামবাসীর নিকট ছুটে গিয়ে দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে মানবিক বিপর্যয়ের কথা বুঝিয়ে ওই মরদেহের করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের জন্য শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েনিয়ে আসেন। এতে গ্রামবাসী খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে শামসুল আলমের কবরস্থ করার সম্মতি দেয়। এরপর শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার বিষয়টি অবহিত হয়ে শাহরাস্তি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহ আলমকে ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন। পরে পুলিশ পাহারায় গ্রামের উদীয়মান কিছু যুবক ও চেয়ারম্যান ফারুক দর্জির উদ্যোগে শুরু হয় শামসুলের দাফন কাজ। তাতেও সস্তি মিলেনি, নেই মরদেহের গোসলের ব্যবস্থা, মিলছেনা খাটিয়া ধরার ব্যক্তি । পরে চেয়ারম্যান দর্জি সব বাধা অতিক্রম করে কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে নিজেই কবর খুড়েও খাটিয়া কাঁধে নিয়ে শামসুল হকের মরদেহের কবরস্থ করার উদ্যোগ নেন।পরে ওই কাজে যুক্তহন, স্থানীয় রাঢ়া দারুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ওবায়েদুর রহমান ও শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ইদ্রিস মিয়া ও সঙ্গীয় ফোর্স। চেয়ারম্যান দর্জি মানবিক ও মহৎ কাজটি সম্পন্ন করায় পর গত সোম-মঙ্গলবার প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি। ওই প্রশংসার উচ্ছাস এতোটাই মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘‘ফেসবুকে’’ রীতিমত ভাইরাল হয়ে পড়ে। চেয়ারম্যানের কাঁধে মরদেহের খাটিয়ার ছবি। এ কাজ করে তিনি সমাজ বুদ্ধাদের দৃষ্টিতে বৈশ্বিক করোনা সংকটে বিপর্যস্ত পৃথিবীর সঙ্গে এ উপজেলার করোনা পজেটিভে অভিযুক্ত শামসুলের মরদেহ কবরস্থ করে তার আত্মার প্রতি যে সম্মান দেখিয়েছে। তা যুবসমাজ ও আগামী প্রজন্মের জন্য চলমান করোনা বিপর্যয় অন্যদের সাহস ও সম্মান দেখাতে শিখাবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।শাহরাস্তি থানার ওসি শাহ আলম জানান, করোনা সন্দেহে মরদেহ দাফনে স্থানীয় জনগন বাধা দেয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং পাহারা দিয়ে দাফন সম্পন্ন করে। অবশেষে স্থানীয়রা বলছে, মৃত শামসুল আলমের নমুনা রিপোর্ট করোণা পজিটিভের মধ্যে দিয়ে নিঃপত্তি হলো গ্রামবাসীর আশষ্কা ও বিরোধের আর শামছুলও বৈশ্বিক করোণা যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করে নিজ ভিটে মাটিতে চিরনিদ্রা যেতে পেরে তার আত্মা শান্তি পাবে।