মত-মতান্তর
'২৫শো টাকার সরকারি সহায়তার তালিকায় এক মোবাইল নম্বর ২০০ বার..!'
সৈয়দ আহমেদ সালেহীন
১৭ মে ২০২০, রবিবার, ৭:০৪ পূর্বাহ্ন
আপনি অবাক হচ্ছেন..! আমি কিন্তু মোটেও অবাক হইনি...
যে শহরের চার দেয়ালের ভেতর মৃত্যুর দু'ঘণ্টা আগে পানি ছাড়া কিছুই খাওয়ার সামর্থ রাখেন না বৃদ্ধ, ঠিক একই সময়ে তার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী রোজা ভাঙ্গছেন পান্তাভাত খেয়ে, সে শহরে এই অর্থ লোপাটের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। গরীবের অর্থ লুট হয় বলেই অনাহারে দুশ্চিন্তায় প্রান যায় ষাটোর্ধ বৃদ্ধের।
আজ যারা টাকা লোপাট করার মহোৎসব করছেন, তাদের জন্যেইতো রোজদার পরিবার পান্তাভাত খেয়ে ইফতার করে, অর্থ কষ্টে মৃত্যু বরণ করতে হয় বৃদ্ধকে। অর্থসঙ্কট, বাড়িভাড়া, নিত্যদিনের বাজার, সন্তান-পরিবারের ভরণ-পোষণের চিন্তায় বৃদ্ধের হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরন করতে হচ্ছে, ওইসব অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের জন্য৷
হ্যা কথাগুলো বলছিলাম কুষ্টিয়া থেকে বেশ কয়েকবছর আগে শূন্য হাতে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. আজিজুর তাঁকে নিয়ে। সঙ্গে সহধর্মীনী ও দুই সন্তান। দিনমজুর বড় ছেলে, ছোটছেলে পড়তো অষ্টম শ্রেনীতে। সংসারের বোঝা টানতে হিমসিম খাওয়া বৃদ্ধ বাবা কাজ করতেন নূন্যতম বেতনে নৈশপ্রহরী হিসেবে। গৃহবধু স্ত্রী কাজ করতেন একটি পোষাক কারখানায়। ফেব্রুয়ারিতেই তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনিও নিরুপায়। বড়ছেলেও কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন। এমন এক দুঃসময়ে চারমাসের ঘরভাড়া বকেয়া, দোকান বাকি ছাড়িয়েছে ১০ হাজার টাকার উপরে, দিনের আহার জোগাড় যাদের জন্য অসাধ্য ছিলো। তাই ইফতারে পান্তাভাত খেতে হয়েছে পরিবারটিকে বিংশ শতাব্দিতে এসে, তাও খোদ এই রাজধানীতে। এর থেকে কষ্টের কি হতে পারে..!
রমজান সংযম শিখায়। কিন্তু তারা সংযমের বিনিময়ে জীবন দান করতে শিখিয়েছে। পথ হারিয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন দু'বেলা আহার জোগাড়ে।
বলবেন এর দায় কার..? আমি বলবো তার, সেই বৃদ্ধ আজিজুরের। কারণ তিনি সেই অসাধু ব্যক্তির ন্যায় ক্ষমতাধর হতে পারেনি। যারা সরকারের সহায়তার টাকার তালিকায় একজনের নামের বিকাশ নম্বর ২০০ বার তালিকাভুক্ত করতে পেরেছে..! তার মৃত্যু শুধু ব্যর্থ করেছে তাকেই, অন্যকে নয়।
সরকারের ত্রানের চাল-তেল-অর্থ চুরি নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা যেখানে, সেখানে একজনের নাম কয়েকশোবার নয় কয়েক হাজারবার তালিকায় থাকলেও আমি অবাক হইনা। কেননা তাদের কারণেই অসংখ্য আজিজুরকে আমরা প্রতিনিয়তই হারাতে দেখি অর্থকষ্টে, দুঃশ্চিন্তায়।
গত ৪/৫ দিন আগে আমার এলাকা মিরপুরের পূর্ব মনিপুরে নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বের সাথে কাজ করতেন ষাটোর্ধ আজিজুর চাচা। দীর্ঘদিন যাবদ নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন অতীতে ব্রেনস্ট্রোক করা এই মুরব্বি লোকটি। অতি ভালো লোক খুব কমই দেখা মেলে এই শহরে। চেষ্টা করতাম তার সুখ-দুঃখে পাশে থাকার। সাধারণ ছুটি আর লকডাউনের কারণে মানুষের বাসা থেকে তার বেতনের টাকা উঠছিলোনা কোনোভাবেই। কোনমতে পরপর দুমাসের টাকা নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়েছিলো নৈশ্যপ্রহরী পরিচালনা কমিটিকে। পরবর্তি মাসের টাকা দিতে না পারার আগাম কথা জানিয়ে সাময়িক ছুটি দেয়া হয়েছিলো আজিজুর চাচাকে। কিন্তু সেই ছুটিই অনন্ত ছুটি হবে কেউ ভাবেনি কখনও। খবর আসে তার মৃত্যুর, স্ত্রীর কান্নাজড়া কণ্ঠে শুনতে হলো মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা আগে তার বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা। ঘরে ছিলোনা কোনো খাবার, আগের দিনের বাশি ভাত পান্তা করে ইফতার করেছেন ছোট ছেলেকে নিয়ে মা, বাবা খেয়েছেন শুধুই পানি। রাত ১০টার দিকে শুয়ে থেকেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন আজিজুর চাচা। সেই শেষবারের মত পানিই খেয়েছিলেন তিনি।
গ্রামের ভিটে বাড়িও খোয়া গেছে প্রভাবশালীদের জালিয়াতির কারণে। তারপরেই দেনাদার জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে যাওয়া আজিজুর একপ্রকার পালিয়ে এসেছিলেন রাজধানী ঢাকায়, নতুন করে শুরু করার প্রত্যাশায়। কিন্তু আশা পূরণের আগেই হারাতে হয়েছে নিজেকেই। বলছিলেন তার সহধর্মীনি।
আমরা বন্ধুরা মিলে কিছু টাকা ও দুই ব্যাগ খাবার পৌঁছে দিয়েছি তার বাড়িতে। ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছি বন্ধুদের ছোট একটি ব্যবসায় কাজ দেবার আশায়। শর্ত ছিলো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে তাকে। সহযোগিতা করবো আমরা। কিন্তু কাজহীন এই পরিবারে অষ্টম শ্রনীতে পড়া সন্তানের টাকায় ৪মাসের ঘরভাড়া শোধ হবে কিভাবে.... দোকানের বকেয়া খাতা বন্ধ হবে কোন অদৃশ্য শক্তিতে জানা নেই...!
তবুও ভালো থাকুক সরকারি সহায়তার সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ক্ষমতাধররা....
---
সিনিয়র রিপোর্টার সময় টেলিভিশন
যে শহরের চার দেয়ালের ভেতর মৃত্যুর দু'ঘণ্টা আগে পানি ছাড়া কিছুই খাওয়ার সামর্থ রাখেন না বৃদ্ধ, ঠিক একই সময়ে তার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী রোজা ভাঙ্গছেন পান্তাভাত খেয়ে, সে শহরে এই অর্থ লোপাটের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। গরীবের অর্থ লুট হয় বলেই অনাহারে দুশ্চিন্তায় প্রান যায় ষাটোর্ধ বৃদ্ধের।
আজ যারা টাকা লোপাট করার মহোৎসব করছেন, তাদের জন্যেইতো রোজদার পরিবার পান্তাভাত খেয়ে ইফতার করে, অর্থ কষ্টে মৃত্যু বরণ করতে হয় বৃদ্ধকে। অর্থসঙ্কট, বাড়িভাড়া, নিত্যদিনের বাজার, সন্তান-পরিবারের ভরণ-পোষণের চিন্তায় বৃদ্ধের হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরন করতে হচ্ছে, ওইসব অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের জন্য৷
হ্যা কথাগুলো বলছিলাম কুষ্টিয়া থেকে বেশ কয়েকবছর আগে শূন্য হাতে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ মো. আজিজুর তাঁকে নিয়ে। সঙ্গে সহধর্মীনী ও দুই সন্তান। দিনমজুর বড় ছেলে, ছোটছেলে পড়তো অষ্টম শ্রেনীতে। সংসারের বোঝা টানতে হিমসিম খাওয়া বৃদ্ধ বাবা কাজ করতেন নূন্যতম বেতনে নৈশপ্রহরী হিসেবে। গৃহবধু স্ত্রী কাজ করতেন একটি পোষাক কারখানায়। ফেব্রুয়ারিতেই তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনিও নিরুপায়। বড়ছেলেও কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন। এমন এক দুঃসময়ে চারমাসের ঘরভাড়া বকেয়া, দোকান বাকি ছাড়িয়েছে ১০ হাজার টাকার উপরে, দিনের আহার জোগাড় যাদের জন্য অসাধ্য ছিলো। তাই ইফতারে পান্তাভাত খেতে হয়েছে পরিবারটিকে বিংশ শতাব্দিতে এসে, তাও খোদ এই রাজধানীতে। এর থেকে কষ্টের কি হতে পারে..!
রমজান সংযম শিখায়। কিন্তু তারা সংযমের বিনিময়ে জীবন দান করতে শিখিয়েছে। পথ হারিয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন দু'বেলা আহার জোগাড়ে।
বলবেন এর দায় কার..? আমি বলবো তার, সেই বৃদ্ধ আজিজুরের। কারণ তিনি সেই অসাধু ব্যক্তির ন্যায় ক্ষমতাধর হতে পারেনি। যারা সরকারের সহায়তার টাকার তালিকায় একজনের নামের বিকাশ নম্বর ২০০ বার তালিকাভুক্ত করতে পেরেছে..! তার মৃত্যু শুধু ব্যর্থ করেছে তাকেই, অন্যকে নয়।
সরকারের ত্রানের চাল-তেল-অর্থ চুরি নিত্যনৈমেত্তিক ঘটনা যেখানে, সেখানে একজনের নাম কয়েকশোবার নয় কয়েক হাজারবার তালিকায় থাকলেও আমি অবাক হইনা। কেননা তাদের কারণেই অসংখ্য আজিজুরকে আমরা প্রতিনিয়তই হারাতে দেখি অর্থকষ্টে, দুঃশ্চিন্তায়।
গত ৪/৫ দিন আগে আমার এলাকা মিরপুরের পূর্ব মনিপুরে নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বের সাথে কাজ করতেন ষাটোর্ধ আজিজুর চাচা। দীর্ঘদিন যাবদ নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন অতীতে ব্রেনস্ট্রোক করা এই মুরব্বি লোকটি। অতি ভালো লোক খুব কমই দেখা মেলে এই শহরে। চেষ্টা করতাম তার সুখ-দুঃখে পাশে থাকার। সাধারণ ছুটি আর লকডাউনের কারণে মানুষের বাসা থেকে তার বেতনের টাকা উঠছিলোনা কোনোভাবেই। কোনমতে পরপর দুমাসের টাকা নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়েছিলো নৈশ্যপ্রহরী পরিচালনা কমিটিকে। পরবর্তি মাসের টাকা দিতে না পারার আগাম কথা জানিয়ে সাময়িক ছুটি দেয়া হয়েছিলো আজিজুর চাচাকে। কিন্তু সেই ছুটিই অনন্ত ছুটি হবে কেউ ভাবেনি কখনও। খবর আসে তার মৃত্যুর, স্ত্রীর কান্নাজড়া কণ্ঠে শুনতে হলো মৃত্যুর কয়েকঘণ্টা আগে তার বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা। ঘরে ছিলোনা কোনো খাবার, আগের দিনের বাশি ভাত পান্তা করে ইফতার করেছেন ছোট ছেলেকে নিয়ে মা, বাবা খেয়েছেন শুধুই পানি। রাত ১০টার দিকে শুয়ে থেকেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন আজিজুর চাচা। সেই শেষবারের মত পানিই খেয়েছিলেন তিনি।
গ্রামের ভিটে বাড়িও খোয়া গেছে প্রভাবশালীদের জালিয়াতির কারণে। তারপরেই দেনাদার জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে যাওয়া আজিজুর একপ্রকার পালিয়ে এসেছিলেন রাজধানী ঢাকায়, নতুন করে শুরু করার প্রত্যাশায়। কিন্তু আশা পূরণের আগেই হারাতে হয়েছে নিজেকেই। বলছিলেন তার সহধর্মীনি।
আমরা বন্ধুরা মিলে কিছু টাকা ও দুই ব্যাগ খাবার পৌঁছে দিয়েছি তার বাড়িতে। ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছি বন্ধুদের ছোট একটি ব্যবসায় কাজ দেবার আশায়। শর্ত ছিলো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে তাকে। সহযোগিতা করবো আমরা। কিন্তু কাজহীন এই পরিবারে অষ্টম শ্রনীতে পড়া সন্তানের টাকায় ৪মাসের ঘরভাড়া শোধ হবে কিভাবে.... দোকানের বকেয়া খাতা বন্ধ হবে কোন অদৃশ্য শক্তিতে জানা নেই...!
তবুও ভালো থাকুক সরকারি সহায়তার সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ক্ষমতাধররা....
---
সিনিয়র রিপোর্টার সময় টেলিভিশন