মত-মতান্তর
সর্বনাশা উল্লাস
শামীমুল হক
২১ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
সর্বত্র আতঙ্ক। কি হচ্ছে দেশে? কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? মানুষ তার বিবেক বুদ্ধি কি গিলে খাচ্ছে? দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কিন্তু বাঙালির এখনো হুশ ফিরছেনা। বেশি দূর যেতে হবেনা। বাজারগুলোর দিকে তাকালেই এর প্রমাণ মেলে। মানুষ যেন উল্লাসে নেমেছে। শুধু বাজারেই নয়, উল্লাস হচ্ছে ত্রাণ বিতরনে। উল্লাস হচ্ছে ত্রাণের লিস্টে নাম উঠাতে। উল্লাস হচ্ছে জানাজার নামাজে। উল্লাস হচ্ছে খুন খারাবিতে। ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা করার উল্লাস সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এই করোনার মধ্যেও দেশের বিভিন্ন জেলায় হচ্ছে দাঙ্গা হাঙ্গামা। মানুষের পা কেটে নিয়ে উল্লাস হচ্ছে। এই উল্লাস দেশকে কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? আলামত কিন্তু ভাল নয়। এমনিতেই করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে সাত ঘাটের পানি খেতে হচ্ছে মানুষকে। কষ্ট আর দুর্ভোগের চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। করোনার লক্ষণ নিয়ে অনেকেই পরীক্ষার জন্য আকুল আবেদন করতে করতে ব্যাকুল হয়েছেন। সেই দুর্দশার কথা দেশবাসীকে জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। করুন কাহিনী। প্রতিদিন করোনার উপসর্গ নিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। তারা জেনে যেতে পারছেন না মৃত্যুর কারণ। এই ভয়ঙ্কর করোনাকালে মানুষ নানাভাবে ইতিহাস গড়ছেন। এ ইতিহাস সর্বনাশ ডেকে আনার ইতিহাস। করোনা ভয় যেন শুধু মুখে মুখে। এজন্যই যে যেভাবে পারে উল্লাসে মেতেছে। কিন্তু তাদের এই উল্লাস ভাবাচ্ছে সচেতন মহলকে। কেউ কেউ আল্লার দোহায় দিয়ে তাদের ঘরে থাকার অনুরোধ করছেন। পুলিশ, র্যাব, সেনা সদস্যরা বুঝাচ্ছেন ঘরে থাকতে। কোন ভাবেই তা কাজে আসছেনা। এ যেন এক অদ্ভূত জাতি। অন্যকে উপদেশ দেবো তবে নিজে মানবনা। মাওলানা জুবায়ের আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও চলছে বাহাস। এতো বাহাস কেন? যেখানে গোটা দেশে লকডাউন চলছে। ঘর থেকে বেরুলেই বিপদ। থাবা মেলতে পারে করোনা ভাইরাস। যেখানে সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই পালন করতে হবে। সেখানে এতো মানুষ কিভাবে জড়ো হলেন। যতটুকু জানা গেছে সরাইল থানা এ ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায়নি। সহযোগিতাও চায়নি। ফলে পথে কোন বাধা ছাড়াই মানুষজন সেখানে মিলিত হয়েছেন। বলতে গেলে পুলিশ তাদের পাহারা দিয়েছে সহিইভাবে যেন তারা জানাজা সম্পন্ন করতে পারেন। ঘটনা এমনটাই ঘটেছে। আল্লাহ না করুক এতো মানুষের ভিড়ে একজনও যদি করোনায় আক্রান্ত থেকে থাকে সেখানে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাড়াবে আল্লাহ মালুম। এখন ঘটনাস্থলের আশপাশের ৮/৯টি গ্রামে চলছে লকডাউন। প্রত্যেককে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টিনে। এখন এসব করে কতটুকু ফল পাওয়া যাবে কে জানে? যা হবার তাতো হয়েই গেছে। আগে থেকে সজাগ থাকলে এমনট হতোনা- এটা হলফ করে বলা যায়। হুজুগে বাঙালি যে সামনে না গিয়ে পেছনে চলে এটা এর প্রমান। আমরা কি সেই বুড়ির মতো সামনে গিয়েও পিছিয়ে পড়ব বারবার। যে বুড়ি রোগে আক্রান্ত। গ্রামের ছোটখাট ডাক্তার শেষ করে এখন এসেছেন ঢাকায় বড় ডাক্তার দেখাতে। লম্বা সিরিয়াল শেষে ডাক্তারের দেখা পেলেন। ডাক্তারও তাকে মনযোগ দিয়ে দেখলেন। জেনে নিলেন কোথা থেকে এসেছেন। আজই ফিরবেন কিনা? এরপর প্রেসক্রিপশন লিখে বিদায় দিলেন। এর আগে ডাক্তার বললেন এখন দুটি ট্যাবলেট খাবেন। এক ঘন্টা পর আর দুটি ট্যাবলেট খাবেন। বুড়ি ডাক্তারকে বললেন, বাবারে আমার কাছে তো ঘড়ি নেই। কিভাবে ঘন্টা হিসাব করবো? ডাক্তার বললেন, আপনিতো ময়মনসিংহ যাবেন। মহাখালী থেকে বাস ছাড়লে ময়মনসিংহ যেতে ঘন্টা তিনেক লাগবে। এরমধ্যে ভালুকা যেতে লাগবে ঘণ্টা দেড়েক। গাড়ি যখন ভালুকায় যাবে আপনি দুটি ট্যাবলেট খেয়ে নেবেন। বুড়ি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে সোজা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড। টিকিট কেটে ময়মনসিংহের বাসে চড়ে বসলেন। উঠেই কন্ডাক্টরকে বললেন, বাবা ভালুকা গেলে আমাকে বলবে। গাড়ি চলছে। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার কন্ডাক্টরকে বলেন, বাবা ভালুকা এসেছে? কন্ডাক্টর বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না। ভালুকা গেলে আমি অবশ্যই বলবো। গাড়ি চলছে তো চলছে। ভালুকা আর আসেনা। আসলে কন্ডাক্টর ভুলে গেছে। গাড়ি ভালুকা ছেড়ে চলে গেছে ত্রিশাল। এ সময় বুড়ি আবার জানতে চাইলেন, বাবা ভালুকা এসেছে? কন্ডাক্টর তো একেবারে থ। অন্য যাত্রীরাও কন্ডাক্টরকে চেপে ধরেছে। ভালুকা পার হয়ে এলে কেন বুড়িকে বললেনা? গাড়ি থামানো হলো। সিদ্ধান্ত হলো গাড়ি ফের ভালুকা যাবে। তা-ই করা হলো। গাড়ি দ্রুতবেগে ভালুকা গিয়ে থামল। বুড়িকে বলা হলো, মা ভালুকা এসেছে। বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে কাছে থাকা ওষুধ খুলে মুখে দিলেন। কিন্তু গাড়ি থেকে নামছেন না। অন্য যাত্রীরা তখন বলতে লাগলেন আপনি নামুন। ভালুকা এসেছে। বুড়ি বললেন, আমিতো ভালুকা নামবনা। আমি যাবো ময়মনসিংহ। ডাক্তার বলেছে ভালুকা গেলে যেন দুটি ট্যাবলেট খাই।