ভারত
ভারতে লকডাউন উঠবে কিনা তা নিয়েই যত আলোচনা
কলকাতা প্রতিনিধি
৮ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ২:০২ পূর্বাহ্ন
ভারতে লকডাউন জারির পর ১৬ দিন পেরোতে চলেছে। কিন্তু লকডাউন আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে নাকি তা ধাপে ধাপে তুলে নেয়া হবে তা নিয়েই এখন ভারতে যত আলোচনা। গত ২৪ মার্চ একুশ দিনের জন্য সারা দেশে লকডাউনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ১৪ এপ্রিল সেই লকডাউনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু ভারতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। নিয়ন্ত্রণে আসার কোনও ইঙ্গিত নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৭৩ জন। ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেয়া হিসেবে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ৫১৯৪। তবে তাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪০২ জন। অন্যদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা ১৪৯। শুধু মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। দ্বিতীয় স্থানে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট। দুই রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন করে। দিল্লিতে মারা গিয়েছেন ৯ জন। এর পর তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও পাঞ্জাব, প্রত্যেক রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ৫, অন্ধ্রপ্রদেশে ৪। ফলে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে সংক্রমণ পুরোপুরি কমে যাবে, তেমন নিশ্চয়তাও দিতে পারছেন না চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতি লকডাউন পুরোপুরি তুলে নিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক করে দিলে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলেই মত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের। আবার দীর্ঘ মেয়াদে লকডাউন চললে তা ভাঙ্গার প্রবণতাকে ঠেকানোও কঠিন হবে বলে অনেকের অভিমত। ফলে ১৪ এপ্রিলের পর লকডাউন উঠবে, নাকি সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে তা নিয়েই আপাতত দেশের সর্বত্র আলোচনা। অবশ্য ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানাসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রকে আর্জি জানিয়েছে। ভারত সরকার সেই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখার কথা জানালেও এখনও স্পষ্ট করে লকডাউনের বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে গত মঙ্গলবার বৈঠকে বসেছিলেন করোনা সংক্রান্ত বিশেষ মন্ত্রীগোষ্ঠী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনসহ হেভিওয়েট মন্ত্রীরা। ওই বৈঠকের সূত্রেই খবর, আরও এক মাস স্কুল-কলেজ সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, সিনেমা হল, ধর্মীয় জমায়েতের উপর নিয়ন্ত্রণ জারি রাখার প্রস্তাব করেছেন মন্ত্রীগোষ্ঠী। পাশাপাশি করোনার হটস্পটগুলিতেও কড়া নজরদারি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রস্তাব সরকার মেনে নিতে পারে বলেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর। আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সর্বত্র লকডাউন না-তুলে সংক্রমণ ও হটস্পটের নিরিখে গোটা দেশকে তিন বা তার বেশি জোনে ভাগ করা হোক। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিটি জোনের অবস্থা খতিয়ে দেখে লকডাউন তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হোক আলাদা আলাদা করে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কমিটির সাবেক সদস্য শমিকা রবিও মনে করেন, বিভিন্ন জোনে ঢালাও পরীক্ষা করে দেখে সংক্রমণ নেই নিশ্চিত হওয়ার পরেই এক-এক করে জোনগুলি খুলে দেয়া ভাল। তাতে ধীরে ধীরে জোনগুলিতে আর্থিক সচ্ছলতা তৈরি হবে। তবে আন্তঃরাজ্য যাতায়াত, ট্রেন চলাচলে বাড়তি সতর্কতা নেয়ার উপরেও জোর দেয়া হয়েছে।